Advertisement
E-Paper

লালগড়ে শিক্ষা নিয়ে এ বার গেরিলা লড়াই

লালগড়ের ভুল আর নয়। সাড়া জাগিয়ে হইহই করে প্রকাশ্যে আসার পথ ছেড়ে এ বার আড়ালে থেকে গেরিলা-কায়দায় শত্রু নিধন ও সংগঠন রক্ষার কৌশল নেবে মাওবাদীরা। সিপিআই (মাওবাদী)-এর একাদশতম প্রতিষ্ঠা দিবসের ‘বার্তা’ হিসেবে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র অভয়ের নামে প্রকাশিত প্রায় ছ’পাতার ছাপানো বিবৃতিতে ঠারেঠোরে এটাই বলতে চাওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩২

লালগড়ের ভুল আর নয়।

সাড়া জাগিয়ে হইহই করে প্রকাশ্যে আসার পথ ছেড়ে এ বার আড়ালে থেকে গেরিলা-কায়দায় শত্রু নিধন ও সংগঠন রক্ষার কৌশল নেবে মাওবাদীরা। সিপিআই (মাওবাদী)-এর একাদশতম প্রতিষ্ঠা দিবসের ‘বার্তা’ হিসেবে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র অভয়ের নামে প্রকাশিত প্রায় ছ’পাতার ছাপানো বিবৃতিতে ঠারেঠোরে এটাই বলতে চাওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

আজ, ২১ সেপ্টেম্বর সিপিআই (মাওবাদী)-এর প্রতিষ্ঠা দিবস। সে উপলক্ষ্যে কোথাও কোথাও লিফলেট, পোস্টার ইত্যাদি ছড়ানো হয়েছে। রবিবার সকালে পুরুলিয়া বলরামপুরের গেঁড়ুয়ার কানহা গ্রামে এমন কিছু পোস্টার পুলিশ উদ্ধার করেছে। অযোধ্যা পাহাড়ের কোলঘেঁষা, ঝাড়খণ্ড লাগোয়া গ্রামটিতে একদা মাওবাদীদের নিয়মিত আনাগোনা ছিল। ‘প্রতিষ্ঠা দিবস’কে মাথায় রেখে পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে নিরাপত্তা ও তল্লাশি অভিযানও কয়েক গুণ বেড়েছে। রাজ্য পুলিশের কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্স (সিআইএফ)-এর এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের অ্যাসল্ট গ্রুপগুলো এখন জঙ্গলমহলে। ঝাড়খণ্ড সীমানা ঘেঁষা তল্লাটে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।’’

কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে অভয়ের নামে প্রকাশিত বিবৃতির ঘোষণা, আজ, সোমবার পার্টির সাত দিনের বার্ষিক সম্মেলনের সূচনা হবে। চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সম্মেলন কোথায় হবে, সে সম্পর্কে বিবৃতিতে স্বাভাবিক ভাবেই কিছু বলা নেই। যদিও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, সম্মেলন হচ্ছে ঝাড়খণ্ডের কোনও জঙ্গলে। বিবৃতি মোতাবেক, ঝাড়খণ্ডের বহু জায়গায় মাওবাদীরা ইতিমধ্যে ‘গেরিলা অঞ্চল’ বানিয়ে ফেলেছে।

তবে প্রতিষ্ঠা দিবসের মুখে মাওবাদীরা বড় ধাক্কা খেয়েছে ওড়িশায়। শনিবার মালকানগিরিতে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে মারা গিয়েছে তাদের অন্যতম শীর্ষ নেতা সোনাধর, যে কিনা ২০১৩-র মে-মাসে ছত্তীসগঢ়ের সুকমা-হামলায় প্রধান অভিযুক্ত ছিল। বস্তুত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মাওবাদী কার্যকলাপ সংক্রান্ত ষাণ্মাষিক রিপোর্ট বলছে, ২০১৫-র ১ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৪০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুরলী কন্নমপল্লি ওরফে অজিত-সহ ৯০৬ জন পার্টি ক্যাডারকে হয় গ্রেফতার করা হয়েছে কিংবা আত্মসমর্পণে রাজি করানো গিয়েছে।

এক দিকে পুলিশ-সিআরপি’র জোরদার অভিযান, অন্য দিকে মাওবাদী প্রভাবিত কিছু এলাকায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচি ও ‘আকর্ষক’ আত্মসমর্পণ নীতির সাঁড়াশি চাপে তারা যে কিছুটা কোণঠাসা, সেটা মাওবাদীরাও সম্প্রতি একাধিক বার পরোক্ষে স্বীকার করে নিয়েছে। এ হেন ‘প্রতিকূল’ পরিস্থিতিতে সিপিআই (মাওবাদী) চাইছে, ‘প্রকৃত বিপ্লবী’ ধ্যানধারণায় উদ্বুদ্ধ সমস্ত দল ও সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হোক। কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতিতে সেই মর্মে আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মাও জে দংয়ের আদর্শ অনুসরণকারী বহু দল কিন্তু সিপিআই (মাওবাদী)-র সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখে। কারণ, সিপিআই (মাওবাদী)-র রাজনৈতিক পন্থা ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ তারা অনুমোদন করে না। যেমন, মেদিনীপুরের সন্তোষ রানার সংগঠন। মাওবাদী নেতৃত্ব এখন ওই সব ‘জ্ঞাতি’কে পাশে চাওয়ায় সংগঠনেরই একাংশ বিস্মিত। লালগড় আন্দোলন পর্বে পশ্চিমবঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এক যুবকের মন্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে ২০১১-র পরে পার্টি ও আন্দোলন বড় বড় ধাক্কা খেয়েছে। এমনটা কিন্তু হয়নি।’’

কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতিতে অবশ্য সরাসরি লালগড়ের উল্লেখ নেই। তবে যে ভাবে ‘গেরিলা যুদ্ধে’ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, তাতে অতি-বাম রাজনীতিতে যুক্ত অনেকে অন্য ইঙ্গিত পাচ্ছেন। ওঁদের পর্যবেক্ষণ: লালগড়ের ভুলের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, ঘুরিয়ে সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন মাওবাদী শীর্ষ নেতৃত্ব। সিপিআই (মাওবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক গণপতি গত বছর ‘মাওইস্ট ইনফর্মেশন বুলেটিন’-কে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, লালগড়ের গণ অভ্যুত্থান থেকে পার্টিকে শিক্ষা নিতে হবে। মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্বাঞ্চলীয় ব্যুরোও ক’দিন আগে লালগড়ের ‘ভুল’ স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে।

এবং এ সবের জেরে সংগঠনের একাংশে বিভ্রান্তিও দেখা দিয়েছে। ‘‘ভুল কেন হয়েছিল, তা-ও খোলাখুলি বলা জরুরি। নচেৎ আমাদের সম্পর্কে জঙ্গলমহলবাসীর ক্ষোভমিশ্রিত অভিমান মোছা অসম্ভব।’’— মন্তব্য এক যুবনেতার।

উল্লেখ্য, লালগড়ে গেরিলা লড়াইয়ের পথ বর্জন করে অন্য রকম পদক্ষেপ ঘিরে সংগঠনে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে যাঁকে পড়তে হয়েছিল, তিনি মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও। মানে, কিষেণজি। মাওবাদী ওই শীর্ষ নেতা নিহত হওয়ার চার বছর বাদেও সমালোচনা থামেনি। আর প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র হিসেবে গেরিলা লড়াইয়ে জোর দিয়ে যিনি বিবৃতি দিলেন, সেই অভয় আসলে মাল্লোজুলা বেনুগোপাল রাও।

যিনি কিনা কিষেণজিরই ছোট ভাই!

cpi maoist guerilla war maoist guerilla war lalgarh lalgarh path non stop guerilla war
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy