Advertisement
E-Paper

কুণালের মমতায় কয়েদি-ক্রিকেটের জার্সিও নীল-সাদা

দলনেত্রী তাঁর সংস্রব ত্যাগ করেছেন ঠিকই। কিন্তু তিনি যে নেত্রীর ছায়া থেকে বেরিয়ে আসেননি, তার প্রমাণ মিলছে জেলের ভিতরে তাঁর কাজকর্মে। নেত্রীর পছন্দের রঙে রং মিলিয়ে নীল-সাদাকে বেছে নিয়েছেন তিনি। নিজের পোশাকের জন্য নয়। জেলের বাসিন্দাদের নিয়ে গড়া একটি ক্রিকেট দলের জার্সির জন্য।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:০২
জেলে কুণাল ঘোষের ক্রিকেট দল ‘গ্যালাক্সি’র খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রাক্তন ক্রিকেটার রাজু মুখোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র

জেলে কুণাল ঘোষের ক্রিকেট দল ‘গ্যালাক্সি’র খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রাক্তন ক্রিকেটার রাজু মুখোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র

দলনেত্রী তাঁর সংস্রব ত্যাগ করেছেন ঠিকই। কিন্তু তিনি যে নেত্রীর ছায়া থেকে বেরিয়ে আসেননি, তার প্রমাণ মিলছে জেলের ভিতরে তাঁর কাজকর্মে। নেত্রীর পছন্দের রঙে রং মিলিয়ে নীল-সাদাকে বেছে নিয়েছেন তিনি। নিজের পোশাকের জন্য নয়। জেলের বাসিন্দাদের নিয়ে গড়া একটি ক্রিকেট দলের জার্সির জন্য।

বন্দিদের নিয়ে প্রেসিডেন্সি জেলে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছে। সেই টুর্নামেন্টেরই একটি দলের অধিনায়ক তিনি। মাঠে নামেন না। অর্থাৎ ‘নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন’! কিন্তু দলের নাম কী হবে, কে কে ঠাঁই পাবে প্রথম একাদশে, টসে জিতলে ব্যাটিং না ফিল্ডিং কী নেওয়া হবে— সবই ঠিক করছেন তিনি। দলের জার্সির রং কী হবে, তা-ও বেছে নিয়েছেন সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ। কয়েদি ক্রিকেটে তাঁর দলের নাম ‘গ্যালাক্সি’। আর নীল-সাদা জার্সি সেই দলেরই।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় এই নীল-সাদা রঙের পোঁচ পড়েছে রাস্তার ডিভাইডার, ফুটপাথ, সরকারি দফতর, এমনকী আলোকস্তম্ভেও। এ বার তার ছোঁয়া জেলের ভিতরে নিয়ে এলেন কুণাল।

অথচ গ্রেফতারের পর থেকে জেল বা জেল-চত্বর, আদালতে কিংবা আদালত-চত্বর— যখন যেখানে সংবাদমাধ্যমকে সামনে পেয়েছেন, রাজ্যের শাসক দলের সর্বময়ী নেত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ আর শ্লেষ উগরে দিয়েছেন কুণাল। কখনও ইঙ্গিতে, কখনও বা প্রায় সরাসরি। গলা উঁচিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁকে এবং
তাঁর মতো অনেককে জেলে পোরা হয়েছে। অথচ সারদা থেকে যিনি সব থেকে বেশি সুযোগ-সুবিধে নিয়েছেন, তাঁকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না? যিনি সব চেয়ে প্রভাবশালী, সেই নেত্রীকে জেলে পোরা হচ্ছে না কেন? কুণালের সেই সব উক্তির লক্ষ্য কে, সেটা এত স্পষ্ট যে, তাঁর গলা চাপা দেওয়ার জন্য কখনও তড়িঘড়ি তাঁকে ভ্যানে তুলে সেই গাড়ির গায়ে সমানে ধাঁই-ধপাধপ আওয়াজ করেছে পুলিশ। তিনি যাতে সংবাদমাধ্যমে সরব হতে না-পারেন, সেই জন্য কখনও বা তাঁকে জোরজবরদস্তি ঠেলেঠুলে লিফটে তুলে দিয়ে পরে আদালতের পিছনের দরজা দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জেলে। যারা তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিল, সারদা-কালি গায়ে লাগায় সেই দল ইতিমধ্যে সাসপেন্ডও করেছে কুণালকে।

এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, যাঁর বিরুদ্ধে তিনি বারবার গর্জে উঠেছেন, সেই নেত্রীর পছন্দের রং এখন কী ভাবে নিজের ক্রিকেট দলের জার্সিতে লাগাচ্ছেন কুণাল? প্রশ্নটা জেলের কর্মী-অফিসারদের তো বটেই, কুণালের ক্রিকেট দলের সদস্যদেরও।

উত্তরে থাকো মৌনীর রাস্তাই নিয়েছেন কুণাল। তিনি হেসে সব প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন বলেই জেল সূত্রের খবর। এই নীরব হাসি ঠিক কীসের ইঙ্গিত, তার জবাবের জন্য বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি কুণালের সঙ্গে। কিন্তু দল বর্জন করলেও দলনেত্রীর পছন্দের রংকে কুণাল যে-ভাবে নিজের ক্রিকেট দলের গায়ে তুলেছেন, সেটা চমকপ্রদ বলে কারা শিবিরেরই একাংশের অভিমত।

কম চমকপ্রদ নয় লৌহকপাটের অন্তরালের এই আস্ত ক্রিকেট-উৎসবও। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএলের ধাঁচে এর নামকরণ হয়েছে পিপিএল (প্রেসিডেন্সি প্রাইমারি লিগ)। গত বৃহস্পতিবার বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার রাজু মুখোপাধ্যায়কে দিয়ে উদ্বোধন করানো হয়েছে সেই টুর্নামেন্টের। উদ্যোগটা মূলত এই প্রাক্তন ক্রিকেটারের। তাঁর সঙ্গে আছেন আর এক প্রাক্তন ক্রিকেটার, এখন প্রশিক্ষক সুপ্রতীপ চট্টোপাধ্যায়। রাজু বলেন, ‘‘বন্দিদের মধ্যে উৎসাহ দেখে আমি হতবাক। আমাদের ইচ্ছে ছিল ২০ ওভারের অর্থাৎ টি-টোয়েন্টি করার। কিন্তু জেলে সময় একটা বাধা। তাই ১২ ওভারের ম্যাচ হচ্ছে। আম্পায়ারিংয়ে আছেন প্রশিক্ষিত আম্পায়ারেরাই।’’ প্রতিটি দলেরই নিজস্ব জার্সি। এক-একটি দলের জার্সির রং এক-এক রকম। ঠিক যেমনটি হয় আইপিএলে। দেশের আসামি ছাড়াও কয়েকটি দলে ঠাঁই হয়েছে বিদেশি বন্দিদেরও।

এর আগে প্রেসিডেন্সি জেলে ফুটবলের টুর্নামেন্ট হয়েছে। তার ফাইনাল খেলা হয়েছে ইস্টবেঙ্গল মাঠে। তার পর থেকে প্রেসিডেন্সির নিজস্ব ফুটবল দল তৈরির কথাও চলছে। কারা দফতর সূত্রের খবর, ফুটবলের পরে প্রেসিডেন্সিতে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের জন্য উঠেপড়ে লাগেন এডিজি (কারা) অরুণ গুপ্ত এবং ডিআইজি (কারা) বিপ্লব দাশগুপ্ত। উদ্দেশ্য, লৌহকপাটের ভিতরে একটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্রিকেট দল তৈরি করা। ক্রিকেটে উৎসাহ দেখিয়েছেন পীষূষ সেনের মতো বন্দি। তিনি পুলিশ সার্জেন্ট বাপি সেন হত্যা মামলায় মূল অভিযুক্ত। তাঁর দলের নাম ‘অ্যাভেঞ্চার্স’। মগরাহাটের বিষমদ কাণ্ডে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত খোঁড়া বাদশা ‘ও মিতুয়া’ দলের প্রধান। কুণালের মতো তিনিও নিজে খেলছেন না। দল নামিয়েছেন বিহারের মাফিয়া খুনের আসামি আক্রম খানও। জেল সুপারের নিজস্ব একটি দলও রয়েছে। আর সেই দলে খেলছেন জেলের অফিসার-কর্মীরা।

সব মিলিয়ে ১০টি দল তৈরি হয়েছে। রোজ দু’টি করে খেলা হচ্ছে। ‘‘এই টুর্নামেন্টে খেলা দেখে বাছাই করা ২০ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে প্রেসিডেন্সির নিজস্ব ক্রিকেট দল গড়া হবে। বাইরের প্রতিযোগিতায় খেলতে যাবে তারা,’’ বললেন প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী।

state news kunal mamata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy