টানা বিক্ষোভের মুখেও অপরিবর্তিত রইল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসূচি। সোমবার রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগত সেন। স্নাতক তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হবে ১ এপ্রিল থেকেই।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়মে রয়েছে জুন মাসের মধ্যে স্নাতকস্তর তৃতীয় বর্ষের ফলপ্রকাশ করতে হবে। এই অবস্থায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা পিছিয়ে দিলে ফলপ্রকাশের জন্য খুবই কম সময় পাওয়া যাবে। সেই কারণেই পরীক্ষাসূচিতে কোনও রকম অদল বদলের পথে যাবে না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
স্বাগতবাবু এ দিন জানান, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতা দেখতে এবং রেজাল্ট তৈরি করতে বেশ সময় লাগে। পরীক্ষা পিছোলে একেবারেই সময় পাওয়া যাবে না। তাড়াহুড়োতে পরীক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ণও হবে না। ‘‘এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিই আমাদের বাধ্য করছে পরীক্ষাসূচি অপরিবর্তিত রাখতে’’— বলেন স্বাগতবাবু। তিনি আরও জানান, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তার আওতাধীন কলেজগুলির অধ্যক্ষদের কাছে পরীক্ষাসূচি বদল নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মতামত জানতে চেয়েছিল। দেখা গিয়েছে বড় সংখ্যক পড়ুয়াই চাইছেন না যে পরীক্ষা পিছিয়ে যাক। সুতরাং গুটিকয়েক পরীক্ষার্থীদের দাবির থেকে বড় সংখ্যক সাধারণ পড়ুয়াদের মতামতেই প্রাধান্য দিতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ভোট এবং পরীক্ষা— দুটিকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলেই ৪ এবং ১১ এপ্রিল ভোটের দিনে এবং তার আগের ও পরের দিনও কোনও পরীক্ষা রাখা হয়নি বলেই জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে, সূচি অপরিবর্তিত থাকলেও যদি কোনওভাবে ভোটের সময় কোনও অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়—সেক্ষেত্রে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মুখোমুখি বসার যে কোনও প্রশ্নই নেই তা স্পষ্ট করে দিয়ে স্বাগতবাবু আরও জানান, মে মাসে চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্সির পরীক্ষা থাকছে। ফলে পরীক্ষা পিছোলে বাণিজ্য বিভাগের পড়ুয়ারাও সমস্যায় পড়বেন। তাই বড় অংশের পড়ুয়াদের কথা ভেবেই পরীক্ষাসূচি বদলের পথে যাচ্ছে না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
সোমবার দুপুর থেকেই কলেজ স্কোয়ারে জমায়েত হতে থাকেন পড়ুয়ারা। বেলা ২ টো নাগাদ নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠক শেষ করে ফের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে অবস্থানে বসে পড়েন তাঁরা। এর জেরেই কলেজ স্ট্রিট জুড়ে শুরু হয় যানজট। বন্ধ হয়ে পড়ে ট্রাম চলাচল। যানজটে আটকে পড়ে অ্যাম্বুলেন্সও। ঘটনাস্থলে এ দিন ছিল ব্যাপক পুলিশ বাহিনী। উপস্থিত ছিলেন ডিসি সেন্ট্রাল এবং জোড়াসাঁকো ও বৌবাজার থানার ওসি।
পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মধ্যেই দেখা যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৌরভ অধিকারি এবং তাঁর দলবলকে নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল দরজা আটকে দাঁড়িয়ে থাকতে। অবস্থানকারী পড়ুয়ারা এ দিন জানান যে ইউজিসি নিয়মের কথা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। সেই নিয়ম ২০০৬ সাল থেকেই লাগু রয়েছে। তা সত্ত্বেও ২০১১ এবং ২০১৪ সালে ভোটের কারণেই পরীক্ষা পিছনোর নজির রয়েছে। তবে এ বছরই কেন নয়?
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত উপাচার্য স্বয়ং এসে পড়ুয়াদের জানালে এই দাবিও উঠতে থাকে আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে। স্বাগতবাবু জানিয়েছেন, আগে হয়েছে বলেই এ বছরও তার পুনরাবৃত্তি হবেই তেমন নিয়ম নেই। পরিস্থিতি যেমন থাকবে তেমনভাবেই পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হবে। পরীক্ষা পিছনোর দাবিতে অনড় পড়ুয়ারা এ দিন জানিয়েছেন তাঁরা উচ্চ আদালতের পথে যাওয়ার কথা চিন্তা করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy