Advertisement
০২ এপ্রিল ২০২৩
West Bengal News

‘কী রে, বাড়িতে বুড়া-বাচ্চা আছে?’ দুর্যোগ মাথায় নিয়ে দাওয়ায় কান্তি, প্রশংসার বন্যা সোশ্যাল মিডিয়ায়

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই গোটা পর্বের ভিডিয়ো ফেসবুকে পোস্ট করেছেন কান্তি গাঙ্গোপাধ্যায়। আর তার পর থেকেই কান্তির প্রশংসায় ভরে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া।

দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলছেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার, রায়দিঘিতে। —নিজস্ব চিত্র

দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলছেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার, রায়দিঘিতে। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৯ ১২:৩৬
Share: Save:

বাইরে দমকা হাওয়ার সাঁই সাঁই শব্দ। টিনের চালে নাগাড়ে বৃষ্টির আওয়াজ। বিদ্যুৎহীন গ্রামে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দুর্যোগের ঘনঘটায় সন্ধ্যাতেই গভীর রাতের ছবি। আসন্ন ‘বুলবুল’-এর তাণ্ডবলীলার আতঙ্কে গোটা গ্রাম যখন ঘরবন্দি, তখনই বাড়ির দাওয়ায় মানুষ শুনেছেন প্রবীণের কণ্ঠস্বর, ‘‘কি রে! বাড়িতে বুড়া-বাচ্চা আছে? চল, সবাই স্কুলে চল! আয়লার থেকেও বড় ঝড় আসছে।’’

Advertisement

এমন ‘ডাক’ শুনে যেন জেগে উঠল রায়দিঘির গ্রাম। কিছুটা হতচকিতও বটে। দুর্যোগ মাথায় করে এত রাতে কে আবার এল? এমন কথাই বা কেন?

এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যেই দরজা খুলে গ্রামবাসী যাঁকে দেখলেন, তিনি কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। সিপিএম নেতা, বাম জমানার মন্ত্রী। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আছড়ে পড়ার আগেই রায়দিঘির বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয় নিতে বলছেন গ্রামের স্কুলে। সঙ্গী দু’-তিন জন অনুগামী আর একটি টর্চ। বছর দশেক আগে আয়লার সাক্ষী থাকা গ্রাম আর ঝুঁকি নেয়নি। প্রাক্তন মন্ত্রীর কথামতো উঠেছেন গিয়ে গ্রামের সেই স্কুলে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই গোটা পর্বের ভিডিয়ো ফেসবুকে পোস্ট করেছেন কান্তি গাঙ্গোপাধ্যায়। আর তার পর থেকেই কান্তির প্রশংসায় ভরে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুকের ওয়ালে মন্তব্য করেছেন প্রচুর মানুষ। ওই পোস্ট শেয়ার হয়েছে সাড়ে চার শতাধিক। হোয়াটসঅ্যাপেও ঘুরছে তাঁর প্রশংসামূলক মিম, ছবি।

Advertisement

২০০৯ সালে আয়লার সময়েও গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে উদ্ধার, ত্রাণের কাজ করেছিলেন কান্তি। সেই কথা এখনও এলাকাবাসীর মুখে মুখে ঘোরে। অনেকেই আয়লার দুর্যোগের সময়কার সঙ্গে এখনকার কান্তিবাবুর তুলনা টেনেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নের কন্ট্রোল রুমে বসে শনিবার প্রায় গোটা রাত বুলবুল নিয়ে তদারকি করেছেন। অনেকের মন্তব্যে সেই তুলনাও টানা হয়েছে।

আরও পডু়ন: যতটা গর্জাল ততটা বর্ষাল না বুলবুল, দ্রুত শক্তি হারানোয় উন্নতি আবহাওয়ার, বিপর্যয় থেকেও রক্ষা

রায়দিঘির বর্তমান বিধায়ক দেবশ্রী রায়ের বিরুদ্ধে টোটো-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। টোটো দেওয়ার নাম করে ৮০ লক্ষ টাকা তুলেও সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি বলে অভিযোগ। এ নিয়ে তাঁর নামে এলাকায় পোস্টারও পড়েছিল। কয়েক জনের কমেন্টে উঠে এসেছে সেই প্রসঙ্গও।

যাঁকে নিয়ে এত উচ্ছ্বসিত নেটিজেনরা, স্কুলের ওই ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া মানুষজনের সঙ্গে বসে সেই কান্তিবাবু বলেন, ‘‘রায়দিঘিতে আছি। নদীর পাড়েই। এখানে অনেক গরিব মানুষ আছেন। এখানে আমার স্ত্রীর নামে একটি স্কুল চলে। ওদের সেখানে আশ্রয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। মানুষ খুব আতঙ্কিত। পরিস্থিতি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা হবে।’’

ত্রাণ শিবিরে খাবার বিলি করছেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার, রায়দিঘিতে। —নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: লাইভ: বুলবুলের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উপড়ে গেল প্রচুর গাছ, নামখানায় ভাঙল জেটি

শনিবার রাত আটটার পর থেকে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল স্থলভাগে আছড়ে পড়ে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এই সুন্দরবন এলাকাতেই। রবিবার এ নিয়ে প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তিবাবু বলেন, ‘‘মানুষের পাশে আছি। যতটা পারছি, করছি। আজ ভোর থেকেও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছি। রাস্তায় গাছপালা পড়ে রয়েছে। ল্যাম্প পোস্ট পড়ে আছে। প্রশাসন কোথায়? খালি মুখে বলছে, প্রশাসন কাজ করছে। আমি তো দেখছি, মানুষই বিপর্যয়ের মোকাবিলা করছেন।’’

খোঁচাটা যে রাজ্য সরকারের দিকেই, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.