এ বার নতুন আতঙ্কের নাম ‘ফণী’। সন্দেশখালি থেকে ঝড়খালি— সর্বত্র এখন একই আলোচনা। আয়লা আর ফণী। ঝড়ের গতিবেগ, শক্তি, তাণ্ডবের ক্ষমতা নিয়ে দুই ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’-এর তুল্যমূল্য আলোচনা। যেন আতঙ্কের প্রহর গুণতে শুরু করেছে সুন্দরবন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম উপকূলীয় পর্যটন কেন্দ্র বকখালি। দিঘা বা পুরীর থেকে তুলনায় সমুদ্র এখানে অনেকটাই শান্ত। তবু প্রায় সারা বছরই পর্যটকদের ভিড়ে গমগম করে সমুদ্র সৈকত থেকে রাস্তাঘাট। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেই বকখালিই কার্যত সুনসান। সমুদ্রতটে লোকজন নেই। হেনরি আইল্যান্ড পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। মাইকে চলছে ফণীর সতর্কবার্তার ঘোষণা। সমুদ্রের জলে নামা নিষেধ। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, অধিকাংশ মৎস্যজীবী ফিরে এসেছেন। তবে এখনও কেউ থাকলে তাঁদের ফিরে আসার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: দিঘা থেকে ৬১৫ কিমি দূরে ফণী, শুক্রবার গভীর রাতে ১১৫ কিমি বেগে আছড়ে পড়বে এ রাজ্যে
বকখালির সব হোটেল-রিসর্ট-লজগুলিও খালি করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। বকখালির একটি রিসর্টের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার প্রদীপ দে বললেন, ‘‘ইতিমধ্যেই বকখালির আকাশ মেঘলা। বেশির ভাগ পর্যটকই ফিরে যাচ্ছেন। নতুন বুকিং নেই। এমনকি যাঁরা বুকিং করেছিলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্তও তাঁরা আসেননি। আমরা ধরেই নিচ্ছি, তাঁরাও আর আসবেন না।’’
সুন্দরবনে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম লঞ্চ এবং নৌকা। আবার ছোট নৌকা নিয়ে প্রতি দিন বহু মানুষ সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে মধু সংগ্রহ, কাঠ-পাতা কুড়ানো বা কাঁকড়া ধরতে যান। তাঁদের যাতায়াতে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ফেরি, লঞ্চও চলাচল বন্ধ করতেও নির্দেশিকা জারি করেছে প্রশাসন। এ ছাড়া খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। তবে সুন্দরবনে এখন পর্যটনের মরশুম নয়। তবু হাতে গোনা কিছু পর্যটক যাঁরা রয়েছেন, তাঁদেরও সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
আরও পডু়ন: ‘প্রবল আতঙ্কে আছি, জানি না কী হবে, জগন্নাথই ভরসা’
তবে মোকাবিলার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে জোর কদমে। ক্যানিং মহকুমা অফিসে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকেই গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে প্রশাসন। তৈরি থাকতে বলা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মীদের। আয়লার পর যে সাইক্লোন শেল্টার সেন্টারগুলি তৈরি হয়েছিল, সেগুলিও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কিন্তু তবু যেন আতঙ্ক কাটছে না সুন্দরবনের। আয়লার তাণ্ডবের সাক্ষী সুবিশাল এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যের শ্বাসমূলে এখন শুধুই ফণীর আতঙ্ক। জলে কুমীর, ডাঙায় বাঘের সঙ্গে এখন নতুন আতঙ্ক, উপকূলে ফণী।