উড়ান বাতিল হওয়ার পর বিমানবন্দরে অপেক্ষারত যাত্রীরা। ছবি পিটিআই।
বাংলাদেশের বেসরকারি উড়ান সংস্থা রিজেন্ট এয়ারের বিমান শুক্রবার বিকেল ৪টে ৪ মিনিটে কলকাতা থেকে ডানা মেলার পরে পরেই ঘোষণা করে বন্ধ করে দেওয়া হল কলকাতা বিমানবন্দর। অর্থাৎ স্তব্ধ হয়ে গেল যাবতীয় উড়ান। ঘূর্ণিঝড় ফণী তখনও কলকাতা থেকে অনেক দূরে। এ ভাবে আগেভাগে ঘোষণা করে কলকাতায় বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম।
কলকাতায় তখনও ঝোড়ো হাওয়ার অস্তিত্ব ছিল না। শুধু বিমানবন্দরের মাথার আকাশ মেঘলা হয়ে মুখভার করে ছিল। ইন্ডিগোর কাউন্টারের সামনে সর্পিল লাইনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে উঁকি মেরে ওড়িশার জে কে কর বিড়বিড় করে বললেন, ‘‘কোথায় ঝড়? বৃষ্টিও তো নেই! তা হলে উড়ান যাবে না কেন?’’ কেন সাততাড়াতাড়ি উড়ান বন্ধ করা হল, সেই প্রশ্ন তখন অনেকেরই মুখে।
মেয়েকে নিয়ে ট্রেনে বৃহস্পতিবার কলকাতায় এসেছিলেন জে কে কর। শুক্রবার সকালে আইন কলেজে ইন্টারভিউ ছিল মেয়ের। রবিবার আবার ইন্টারভিউ আছে বেঙ্গালুরুর আইন কলেজে। সেই জন্য বাবা আর মেয়ের টিকিট কেটেছিলেন সন্ধ্যার উড়ানে। কিন্তু তার আগেই তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিমানবন্দর। ওড়িশার ওই চিন্তিত পিতার মতো আরও কয়েক হাজার যাত্রীর উদ্বিগ্ন প্রশ্ন, উড়ান যাবে না কেন? মণীশ সিংহ দিল্লি থেকে জুতোর সুখতলা বিক্রি করতে কলকাতায় এসেছিলেন। সন্ধ্যার উড়ানেই তাঁর দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। তিনি বললেন, ‘‘আবহাওয়া তো এখনও চমৎকার। উড়ান তো ছাড়তেই পারত!’’
কখন গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন, সেই দুর্ভাবনা পেয়ে বসেছে যাত্রীদের। শনিবার সকালে কখন কোন উড়ান ছাড়বে, সেই বিষয়ে উড়ান সংস্থার কর্তারাও অন্ধকারে। তাঁদের বক্তব্য, সকাল ৮টার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তবেই তো উড়ান ছাড়ার প্রশ্ন। শনিবার সকালেই এয়ার এশিয়ার উড়ানে দিল্লি ফেরার কথা ঋতুপর্ণা চক্রবর্তীর। সকালে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানে গুয়াহাটি যাওয়ার কথা চিকিৎসক শতদল সাহার। কখন তাঁদের উড়ান ছাড়বে, সেই বিষয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে তাঁর মতো বহু যাত্রী। কেননা শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সব উড়ান বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই অনেকে শনিবার দুপুর-বিকেলের উড়ানের টিকিট বাতিল করেছেন। এই অবস্থায় শনিবার সকাল ৯টার পরে আবার উড়ান ছাড়তে শুরু করলে সেই সব যাত্রীর প্রতিও অবিচার হবে।
শুক্রবার বিমানবন্দর বন্ধ হওয়ার সময়ে ইন্ডিগোর ছ’টি, স্পাইসজেটের পাঁচটি, এয়ার ইন্ডিয়ার চারটি এবং এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়ার দু’টি বিমান থেকে যায় কলকাতায়। শনিবার আকাশ পরিষ্কার হলে সেগুলি প্রথমে ব্যবহার করতে পারবে সংশ্লিষ্ট উড়ান সংস্থা। বাকি গো এয়ার, ভিস্তারাকে অপেক্ষা করতে হবে অন্য শহর থেকে বিমান আসার জন্য।
এ দিন উড়ান বাতিলের খবর অনেক দেরিতে পৌঁছয় যাত্রীদের কাছে। বেশির ভাগই তত ক্ষণে পৌঁছে গিয়েছেন বিমানবন্দরে। ওড়িশার বাসিন্দা সত্যব্রত দাস বিকেল ৫টা নাগাদ হন্তদন্ত হয়ে বিমানবন্দরে ঢোকেন এমিরেটসের উড়ান ধরার জন্য। সকালে যখন গাড়িতে বালেশ্বর ছেড়েছেন, তখনও জানতেন, রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে বিমানবন্দর। কিন্তু কলকাতায় এসে জানতে পারেন, এমিরেটসের সন্ধ্যার উড়ানও বাতিল। চেন্নাই থেকে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে দুপুরের উড়ানে কলকাতায় আসেন বাংলাদেশের শ্রীহট্টের মহম্মদ ইকরাম খুরশেদ। বাবার বাঁ পায়ে গ্যাংগ্রিন হয়েছে। সন্ধ্যায় এয়ার ইন্ডিয়ার ঢাকার উড়ানে দেশে ফেরার কথা ছিল। শহরের কোনও নার্সিংহোমে বাবাকে ভর্তি করিয়ে দিতে চান খুরশেদ। কবে ফিরতে পারবেন, জানেন না!
বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ঠিক ছিল, ঘূর্ণিঝড় ফণী প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া বয়ে আনতে পারে বলে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শহরের উড়ান পরিষেবা। কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ দিল্লি থেকে ডিজিসিএ-র নতুন নির্দেশিকা আসে। বলা হয়, শুক্রবার বেলা ৩টে থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে উড়ান পরিষেবা।’’ সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, শুক্রবার কলকাতা বিমানবন্দরের আবহাওয়া দফতরের পরামর্শ মেনেই নাকি এই ব্যবস্থা!
এ দিন বিমানবন্দরের আবহাওয়া দফতরের প্রধান গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ের ঘণ্টা তিনেক আগে ফণী আসতে পারে জেনে আমরা মৌখিক ভাবে তা জানিয়ে দিয়েছিলাম।’’ সেই বার্তা কলকাতা থেকে দিল্লিতে পৌঁছয়। তাতেই নির্ধারিত সময়ের সাড়ে ছ’ঘণ্টা আগে বন্ধ করে দেওয়া হয় বিমানবন্দর।
প্রশ্ন উঠছে, বেশি তৎপর হয়ে এত আগে কেন বন্ধ করে দেওয়া হল বিমানবন্দর? যার জন্য কয়েক হাজার যাত্রী চরম দুর্দশায় পড়লেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy