Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Didir Suraksha Kavach Programme

মহার্ঘ ভাতা কবে দেবে সরকার? প্রধান শিক্ষকের প্রশ্নে দিদির দূতের ‘হুঁশিয়ারি’-র মালা

বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির জেনাডিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন মালা। সরকার কবে তাঁদের মহার্ঘ ভাতা দেবে, তা সাংসদের কাছে জানতে চান প্রধান শিক্ষক সাক্ষীগোপাল মণ্ডল।

তৃণমূল সাংসদ মালা রায়।

তৃণমূল সাংসদ মালা রায়। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪১
Share: Save:

এ বারে রাজ্য ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে পড়ল সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা ‘বিতর্কের’ আঁচও।

গত ১৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মামলার চূড়ান্ত শুনানি হবে মার্চে। এই অবস্থায় ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে গিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে মহার্ঘ ভাতার আর্জি শুনলেন তৃণমূল সাংসদ মালা রায়। জবাবে সাংসদ উল্টে প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করে দেন এই মর্মে যে, মিড ডে মিল ঠিক মতো দেওয়া হচ্ছে না, এই নিয়ে তাঁরা রিপোর্ট দেবেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে স্কুলের উপরে ‘নজর’ রাখতে বলবেন বলেও জানিয়েছেন মালা।

বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির জেনাডিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন মালা। সরকার কবে তাঁদের মহার্ঘ ভাতা দেবে, তা সাংসদের কাছে জানতে চান প্রধান শিক্ষক সাক্ষীগোপাল মণ্ডল। তাঁকে মালা পাল্টা বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে ডিএ-র কথা ভাবছেন? আর সরকার বাচ্চাগুলোর কথা ভাবছে। কোনটা বড়, আপনিই তুলনা করুন।’’ এখানেই শেষ নয়। স্কুল ঘুরে দেখেন মালা। দেখা যায়, একটি জল পরিশোধনের ফিল্টার অব্যবহৃত হয়ে পড়ে রয়েছে। তা নিয়ে পড়ুয়াদের সামনেই তৃণমূলের গঙ্গাজলঘাটি ২ সাংগঠনিক ব্লকের সভাপতি নিমাই মাজি প্রধান শিক্ষকের উপরে সুর চড়ান বলে দাবি। তখন নিমাইকে পড়ুয়াদের সামনে চিৎকার করতে নিষেধ করেন মালা। পরে সংশ্লিষ্ট অবর স্কুল অফিসে ফোন করে ফিল্টার ফেলে রাখার জন্য প্রধান শিক্ষককে শো-কজ় করার দাবি তোলেন নিমাই।

এর পরে, মিড-ডে মিলের রান্নাঘর ও খাবার পরিদর্শন করেন মালা। তাঁর অভিযোগ, “প্রধান শিক্ষক ডিএ নিয়ে যতটা চিন্তিত, স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে ততটা নন। পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার মিড-ডে মিলে বাচ্চাদের দেওয়া হচ্ছে না। আমরা এ নিয়ে রিপোর্ট দেব। স্থানীয় নেতৃত্বকেও বলব নজর রাখতে।” জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) জগবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই স্কুল নিয়ে কোনও অভিযোগ এখনও আসেনি। অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ হবে।” প্রধান শিক্ষকের পাল্টা দাবি, “ডিএ-র কথা জানতে চাওয়াতেই স্কুল পরিচালনা নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। মিড-ডে মিলের খাবার পর্যাপ্তই ছিল। তার পরেও এমন অভিযোগ করা হচ্ছে।”

বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার বলেন, “এক জন তাঁর প্রাপ্য ডিএ নিয়ে জানতে চাইতেই পারেন। এ রাজ্যের সরকারি কর্মীরা নিজের অধিকারের কথা বলতে গেলেই কেউ বলছেন ঘেউ ঘেউ করছে, কেউ হুমকি দিচ্ছে, কখনও কেউ মারব ধরব বলছেন!’’

মালা যখন ডিএ নিয়ে প্রশ্নের মুখে, তখন উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় দলীয় বিধায়কের বিরুদ্ধেই গুচ্ছ নালিশ শুনতে হল দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুকে। ‘দিদির দূত’ হয়ে এ দিন দেগঙ্গার চাকলা পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়েছিলেন সুজিত। দলীয় কার্যালয়ে সুজিতের পা জড়িয়ে ধরে এক কর্মী অভিযোগ করেন, ‘‘বিধায়ক রহিমা মণ্ডল এলাকায় কোনও কাজ করেননি। উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে গেলে শোনেনই না। সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে স্বজনপোষণ করছেন। দলের ক্ষতি করছেন বিধায়ক।’’ মন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষী, পুলিশ সরিয়ে দেন ওই কর্মীকে। পরে সুজিত তাঁকে ডেকে অভিযোগ শোনেন। মন্ত্রী এ দিন দুপুরে খাওয়া-দাওয়া কোথায় সারবেন, তা নিয়েও দলের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি-গোলমাল বাধে।

তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘অনেক কাজ হয়েছে। তবু মানুষের কিছু অপ্রাপ্তি থাকতেই পারে। তাঁদের সেই কথা শুনতেই তো দল এই কর্মসূচি নিয়েছে। এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই।’’ পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপির ক্ষমতা হলে মন্ত্রীরা একবার যান না, মানুষের অভাব-অভিযোগ জানতে। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা দলের সেই সাহসই হবে না।’’

রহিমা পরে বলেন, ‘‘কারা, কী জন্য বিক্ষোভ দেখিয়েছে জানি না। আমার সঙ্গে কারও বিরোধ নেই।’’ বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে সুজিতের বক্তব্য, ‘‘কাজ হচ্ছে না বলে নয়, অন্য কারণে এক কর্মী পা জড়িয়ে ধরেছিলেন। ওঁদের কারও সম্পর্কে অভিযোগ ছিল, তিনি এলাকায় আসেন না। আমি পরে জানলাম, যে রাস্তা নিয়ে ক্ষোভ আছে, সেটির টেন্ডার হয়েছে। কাজও হবে শীঘ্রই।’’

দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট লাগোয়া ভাটপাড়া অঞ্চলে গ্রামের বেহাল মাটির রাস্তা এবং আবাস যোজনা নিয়ে বাসিন্দারা অভিযোগ জানান জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান নিখিল সিংহরায়ের কাছে। মালদহের কালিয়াচকে দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে গিয়ে পানীয় জলের সমস্যা থেকে শুরু করে নিকাশি নালা, কবরস্থান, আবাস যোজনায় বাড়ি না পাওয়া-সহ একাধিক অভাব অভিযোগ শুনেছেন সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী গোলাম রব্বানি।

তৃণমূলের কর্মসূচি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। রানিগঞ্জের বল্লভপুরে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “দিদির দূতেরা যে-ভাবে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন, তাতে আতঙ্কে ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চায়েত ভোট করতে তৃণমূল ভয় পাচ্ছে। এপ্রিলেও ভোট হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Didir Suraksha Kavach Programme Mala Roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE