Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বিপদের আশঙ্কা মাথায় নিয়েই পারাপার যাত্রীদের

ভাঙা নৌকায় ছাউনি ফুটো। ভরা বর্ষায় মাঝনদীতে টালমাটাল অবস্থায় না চাইলেও বৃষ্টিতে ভেজা কেউ ঠেকাতে পারবে না। ঘাটের অবস্থা আরও খারাপ। অফিস টাইমে ট্রেন ধরার তাড়া। ঘাটে নৌকো ভিড়তে না ভিড়তেই দে ছুট। আর তাতেই বিপত্তি। সরু নড়বড়ে তক্তা পাতা পিচ্ছিল জেটি।

জলে ডুবু ডুবু অবস্থা জেটির। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

জলে ডুবু ডুবু অবস্থা জেটির। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

বিতান ভট্টাচার্য
শ্যামনগর শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৫
Share: Save:

ভাঙা নৌকায় ছাউনি ফুটো। ভরা বর্ষায় মাঝনদীতে টালমাটাল অবস্থায় না চাইলেও বৃষ্টিতে ভেজা কেউ ঠেকাতে পারবে না। ঘাটের অবস্থা আরও খারাপ। অফিস টাইমে ট্রেন ধরার তাড়া। ঘাটে নৌকো ভিড়তে না ভিড়তেই দে ছুট। আর তাতেই বিপত্তি। সরু নড়বড়ে তক্তা পাতা পিচ্ছিল জেটি। তার মধ্যে জোয়ারের পরে কাদামাটি ভর্তি হয়ে থাকে। পা পিছলে গঙ্গায় পড়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। আর জলে কেউ পড়লেই ঝাঁপিয়ে গিয়ে ডাঙায় টেনে তোলার জন্য ইজারাদারের লোক নিয়ম করে খাড়া করে রাখা হয়েছে। গত বছর ঠিক এই সময়েই নৌকো থেকে পড়ে তলিয়ে গিয়েছিলেন চার জন। এর মধ্যে দু’জন ছাত্রের মৃত্যু হয়েছিল।

ব্যারাকপুর ও হুগলি শিল্পাঞ্চলের মধ্যে শ্যামনগর-তেলেনিপাড়া ফেরিঘাট অন্যতম ব্যস্ত ঘাট। আশেপাশের অন্য ফেরিঘাটের থেকে এই ঘাটে যাত্রীর ভিড় সব সময়েই বেশি। কারণ, শ্যামনগর কালীবাড়ির কাছে এই ঘাট থেকে নামলেই শ্যামনগর স্টেশন। আর অন্য পাড়ে ভদ্রেশ্বর। ফলে এই ফেরিঘাটটির চাহিদা যাত্রীদের কাছে যথেষ্ট বেশি। কিন্তু তেলেনিপাড়ার জেটির যেমন নড়বড়ে অবস্থা, তেমনি শ্যামনগরের দিকেও। একটা পুরনো ভাঙা নৌকোয় তক্তা দিয়ে পাদানি বানিয়ে জেটি করা হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের বালাই নেই। ভারি বৃষ্টিতে নৌকো চালানোরও উপায় নেই। কারণ, জেটিতে কোনও ছাউনি নেই। ঘাট থেকে টিকিট কাউন্টার পেরিয়ে উপরে ওঠার সিঁড়িতে কয়েক পরত শ্যাওলা জমে আছে। সম্প্রতি শ্যামনগরের দিকে টিকিট ঘরের কাছে যা-ও বা টিনের একটা মাথা গোঁজার মতো ছাউনি হয়েছে, তেলেনিপাড়ার দিকে সেটিও নেই। অথচ এই বছরই হুগলি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এই ঘাটের নতুন করে ইজারার জন্য ডাক হয়েছে ১ কোটি ৭৫লক্ষ ৫০ হাজার টাকায়। যাঁরা ইজারা নেওয়ার জন্য টাকা জমা দিয়েছেন, তাঁরা এখন পরিকাঠামোর জন্য ফেরি চালাতেই চাইছেন না ।

অন্য দিকে, বর্তমান ইজারাদার মিহির বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শাঁখের করাতের দশা আমার। তিন বছর আগে ১ কোটি ৬০ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় ঘাটটা নিয়েছিলাম। লাভের গুড় পিঁপড়েতেই খেল। রোজই কেউ পড়ে পা ভাঙছে, নয় তো নৌকো ফুটো হচ্ছে, জেটির পাটাতন ভেঙে যাচ্ছে। ঘাটের সব কিছুই বেহাল। অথচ প্রচুর লোক পারাপার করেন। ঘাটও বন্ধ রাখা যায় না। এই ঘাটের পিছনে ধার করে টাকা দিচ্ছি। তা-ও কূল পাচ্ছি না।’’

প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার যাত্রী পারাপার করেন এই ঘাট দিয়ে। দু’টি ঘাটে ২৪ জন কর্মী কাজ করেন। কিন্তু নৌকো চলে সাকুল্যে দু’টি। নৌকোগুলিও ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় মাঝে মধ্যে বিগড়ে যায়। তখন ফেরি বন্ধ থাকে। বেশি বৃষ্টি বা ঝোড়ো হাওয়া দিলেও ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হয় পরিকাঠামোগত ত্রুটির জন্যই। শ্যামনগরের দিকে এই ফেরিঘাটটির অবস্থা যতটা খারাপ, তার থেকে বেশিও খারাপ দশা হুগলির দিকে। আগে গোটাটাই বাঁশের সাঁকো ছিল। এখন সেটি কাঠের হয়েছে। কিন্তু জল লেগে কাঠ পচতে শুরু করেছে। প্রায় চারশো ফুট লম্বা আর নিতান্তই সরু (কাগজে কলমে ছ’ফুট চওড়া) এই জেটির অনেকটাই গত কয়েক বছরে বান আর রোজকার জোয়ার ভাটায় ভেঙে গিয়েছে। যেটুকু অবশিষ্ট আছে, সেটি দৈর্ঘ্যে এখনও অনেকটা। কিন্তু জলের ধাক্কায় প্রস্থে খাটো হয়েছে। তার থেকেও বড় কথা, গঙ্গায় শাল কাঠের খুঁটি পুঁতে তার উপরে তক্তা বসানো এই জেটি যে কোনও সময়ে ভেঙে তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা।

হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেহেবুব রহমান বলেন, ‘‘ঠিক এই সময়ে গত বছর এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটল। তারপরে আমরা জেটি পরিদর্শন করে ওই ফেরিঘাটে ভাসমান জেটির পরিকল্পনা করেছি। দু’টি ঘাটের দৈন্য দশা নিয়ে আমরাই খুব অস্বস্তি বোধ করি। আপাতত যে জেটি আছে, সেটি মেরামত করে চালানোর জন্য কিছু টাকা অনুমোদন হয়েছে। ভাসমান জেটির জন্য আমি নিজে তদ্বির করছি। আশা করি খুব শীঘ্রই দু’টি ঘাটে জেটি ও অন্য পরিষেবা সুষ্ঠ ভাবে করতে পারব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE