এই মৃতদেহ ঘিরে চাঞ্চল্য । নিজস্ব চিত্র।
শ্মশানের লাইনে পড়ে রয়েছে দেহ। কাগজপত্রে সই সাবুদ মিটে গিয়েছে। খানিক পরেই দেহ চুল্লিতে ঢোকানো হবে। সেই সময়েই হঠাৎ দেহ ঘিরে চেঁচামেচি। ছুটে এলেন রামকৃষ্ণ মহাশ্মশানের কর্মীরা। উত্তর কলকাতার এই শ্মশান রতনবাবুর ঘাট নামে বেশি পরিচিত।
দেহটি বছর ৫৫-র শিবানী বিশ্বাসের। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামে। সোমবার ডায়াবিটিস-সহ তাঁকে একাধিক উপসর্গ নিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে। সেখানেই শুক্রবার সকাল সওয়া সাতটা নাগাদ তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। নিয়ম অনুযায়ী চার ঘন্টা পরে, সওয়া ১১টা নাগাদ দেহ হাতে পান তাঁর পরিবারের লোকজন। তার পর নিয়ে যাওয়া হয় রামকৃষ্ণ মহাশ্মশানে।
সেখানেই দেহ ছুঁয়ে বসেছিলেন শিবানী দেবীর আত্মীয় তপন বিশ্বাস। তাঁর হঠাৎ মনে হয় দেহটা নড়ে উঠল। চমকে ওঠেন তিনি। নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তাই প্রথমে কাউকে কিছু বলেননি। তাঁর দাবি কিছু ক্ষণ পর তাঁর আবার মনে হল শিবানীর নাড়িতে ক্ষীণ স্পন্দন পাওয়া যাচ্ছে। তখনই ভয় পেয়ে চিৎকার করে ওঠেন তিনি। পরিবারের বাকি লোকজনও ছুটে আসেন। তাঁদেরকে তপন গোটা ঘটনার কথাটা বলেন। তার পর বাকিরাও বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করে বোঝার চেষ্টা করেন। তাঁদের অনেকেরই মনে হয় তাঁরাও নাড়ির স্পন্দন শুনতে পাচ্ছেন। মুখে মুখে মুহূর্তের মধ্যে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে। দেহ ঘিরে ভিড় বাড়তে থাকে।
আরও খবর: ‘কত লোকই তো রোজ আসেন’, রাহুল বেরোতেই বিরক্তি সৌমিত্রের গলায়
বেঁচে থাকার ‘চ্যালেঞ্জ’ হেরে গেলেন বুখারি
তত ক্ষণে অবশ্য শিবানী দেবীর বাড়ির লোকজন দেহ শ্মশানের লাইন থেকে সরিয়ে এনে নীচে রেখেছেন। বাইরে অসহ্য গরম। অন্য দিকে, আত্মীয়দের দৃঢ় ধারণা শিবানী দেবী বেঁচে আছেন। তাই তাঁকে সবাই মিলে পাখার হাওয়া করছেন। সুকমল বিশ্বাস নামে শিবানীর এক আত্মীয়ের দাবি, “সকাল সাতটায় চিকিৎসক মৃত বলেছেন। তার পর বেলা চারটের সময়েও দেহ শক্ত হয়নি। তার মানে চিকিৎসকরা কিছু একটা ভুল করেছেন।”
দেখুন ভিডিয়ো
খবর ততক্ষণে পৌঁছেছে কাশীপুর থানার পুলিশের কাছেও। তাঁরা ওই পরিবারকে প্রস্তাব দেন শিবানী দেবীকে নিয়ে ফের আরজি কর হাসপাতালে যেতে। কারণ শ্মশানে সেই সময় কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। কলকাতা পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্স আসে। শিবানী দেবীকে তোলা হয় তাতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আরজি করে নিয়ে যেতে বেঁকে বসেন তাঁর পরিবার। নিয়ে যাওয়া হয় মধ্যমগ্রামের মাতৃসদনে। এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানেই শিবানী দেবীর দেহ রাখা ছিল।
চিকিৎসকরা যদিও গোটা বিষয়টিকে মনের ভুল বলে মনে করছেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “সাময়িক হৃদযন্ত্র বন্ধ হয় বলে সাধারণ ভাবে চার ঘণ্টার আগে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না। আর দেহ শক্ত হওয়ার বিষয়টি সব সময়েই আপেক্ষিক। এক জন চিকিৎসক ছাড়া সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা বলা সম্ভব নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy