Advertisement
E-Paper

ধানের খেতে রজনীগন্ধা

ধানচাষে তেমন লাভ নেই, তাই ফুলের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। কোথাও রজনীগন্ধা কোথাও গাঁদা। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা, বালিচক এলাকায় বদলে যাচ্ছে চাষের চেহারাটা। বদলাচ্ছে চাষির নসিবও। ধান চাষ করে আগে যাঁর দিন চলত কোনও রকমে, ফুল চাষ করে এখন তিনি সম্পন্ন চাষি। টালির চালের বদলে এখন পাকা ছাদ। উঠোনে ট্রাক্টর, টুলু পাম্প।

ছবি রামপ্রসাদ সাউ।

ছবি রামপ্রসাদ সাউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০১:৩৩
Share
Save

ধানচাষে তেমন লাভ নেই, তাই ফুলের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। কোথাও রজনীগন্ধা কোথাও গাঁদা। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা, বালিচক এলাকায় বদলে যাচ্ছে চাষের চেহারাটা। বদলাচ্ছে চাষির নসিবও। ধান চাষ করে আগে যাঁর দিন চলত কোনও রকমে, ফুল চাষ করে এখন তিনি সম্পন্ন চাষি। টালির চালের বদলে এখন পাকা ছাদ। উঠোনে ট্রাক্টর, টুলু পাম্প।

ডেবরার বাড়াগড় গ্রামের চাষি কৃষ্ণপ্রসাদ মণ্ডল বলছিলেন, ‘‘প্রথমে পাঁচ কাঠা জমি দিয়ে ফুল চাষ শুরু করেছিলাম। এখন বাড়তে বাড়তে দু’বিঘা জমিতে রজনীগন্ধার চাষ করছি। ধান চাষটা একেবারে ছাড়িনি। খেতে হবে তো। বছরে এক বার আমন চাষ করি। বাকি সময়টা পুরো ফুল চাষেই দিই।’’

দেবেন না-ই বা কেন? এক মরসুমে ধান চাষ করে যেখানে বিঘা প্রতি বড় জোর হাজার পাঁচেক টাকা লাভ, সেখানে রজনীগন্ধা চাষে এক বারের মেয়াদে (মোটামুটি ১৮ মাস) ৭৫ হাজার থেকে লাখ খানেক টাকা লাভ। গাঁদা চাষে লাভ থাকে হাজার পঞ্চাশেক টাকা। তবে গাঁদা চাষে খরচও কম। বিঘা প্রতি রজনীগন্ধা চাষে খরচ প্রায় লাখখানেক টাকা, গাঁদা চাষে বড় জোর ৩০ হাজার টাকা।

বাড়াগড় গ্রামের চাষি সুকুমার দিন্দা দু’বিঘা জমিতে গাঁদা চাষ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘গাঁদা বা রজনীগন্ধা, ধানের চেয়ে লাভ দুটোতেই অনেক বেশি। ফুল ফোটা শুরু হয়ে গেলে রোজ বাজারে যেতে পারি। আর গেলেই হাতে কাঁচা টাকা আসে। পুজোয় লাগে বলে সারা বছর গাঁদার চাহিদা থাকে।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে গাঁদা ফুলের চারা এনে তা থেকে শ’য়ে-শ’য়ে চারা তৈরি করে বেচেন এই গ্রামেরই সম্পন্ন ফুল চাষি চিত্তরঞ্জন জানা। ধানের জমির কিছুফুল চাষের শলা দিলেন তিনিও।

ধানের বদলে ফুল চাষ করতে গেলে নিকাশিটা মাথায় রাখতে হবে সবার আগে। জমি যদি নিচু নয়, মাটি ফেলে উঁচু করে ফেলতে হবে। জৈব সার অর্থাৎ হাড় গুঁড়ো, শিং গুঁড়ো দিয়ে জমির উর্বরতা বাড়াতে হবে। রজনীগন্ধার কন্দ ৮-১০ দিন জলে ভিজিয়ে রাখলেই শিকড় গজায়। দড়ি দিয়ে লাইন টেনে সেই চারা লাগানোর পর দেড়-দু’মাসে কুঁড়ি চলে আসে।

রজনীগন্ধা চাষে মজুর একটু বেশি লাগে। জমি তৈরি করা থেকে চারা লাগানোর কাজে বিঘা প্রতি ৩৫-৪০ জন, ঘাস বাছাই ও দেখভালের জন্য আরও কিছু—সব মিলিয়ে ১০০-১২০ জন লেগেই যায়। ফুল তোলাটা মূলত চুক্তি করে হয়। গাঁদা চাষে তুলনায় কম মজুর লাগে।

চুন দিয়ে মাটি শোধনের পর জৈব সার দিয়ে জমি তৈরি করতে হয় রজনীগন্ধার মতো। গাঁদার ডাল কেটে হাপর দিয়ে শিকড় বার করিয়ে তা চারা হিসাবে লাগালে একই মানের ফুল পাওয়া যায়। আবার শীতকালে ফুলের পাপড়ি (বীজ) ছড়িয়ে সরাসরি চারা গজানো যায়। সেক্ষেত্রে অবশ্য গুণমান এক থাকে না অনেক সময়।

ফুল চাষে ঝুঁকি যে নেই এমনটা নয়। রজনীগন্ধার অবস্থাও খারাপ। বাড়াগড় কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির সেক্রেটারি পৃথ্বীশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ফুল চাষে বাজার ওঠানামা করে। তাতে চিন্তার কিছু নেই। আমাদের সমবায় থেকে ফুলচাষিদের যত ঋণ দেওয়া হয়েছে তার ১০০ শতাংশ শোধ হয়েছে। তাই বিকল্প চাষ হিসাবে তিল, বাদামের পাশাপাশি ফুল চাষ করার কথা বারেবারে বলছি আমরা।’’

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি আধিকারিক নিমাইচন্দ্র রায় জানান, জেলায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে তিন হাজার হেক্টরই ডেবরায়। এ ছাড়া খড়্গপুর ২, পিংলা ও সবং ব্লকেও ফুল চাষ হচ্ছে। চাষিরা বিক্রি করছেন কোলাঘাট, হাওড়ার আড়তে। সেখান থেকে যাচ্ছে ওড়িশা, অন্ধপ্রদেশ, দিল্লি, বেঙ্গালুরু। পাঁশকুড়ার যুবক গোবিন্দ মাইতি আড়ত থেকে ফুল কিনে পাঠান ওড়িশার সোরোতে। বছর তিনেকে হল ফুলের চাহিদা আচমকাই অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। চাহিদা যে ভাবে বাড়ছে তাতে আগামী দিনে ফুল চাষে আরও লাভের সম্ভাবনা দেখছেন গোবিন্দবাবু।

debra balichak medinipur farmers horticulture paddy farming flower farming debra farmers

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}