—ফাইল চিত্র।
‘প্লাস্টিক মানি’র ভরসায় যে মধ্যবিত্ত ভেবেছিল, শপিংমলে ঢুকে ইচ্ছে মতো কাঁচা বাজার সেরে গাড়িতে তুলে বাড়ি ফিরবে, তা নিয়েও আপাতত সংশয় দেখা দিচ্ছে। কারণ, রফিক-আজানদের পকেটে নগদের টান পড়েছে।
কারা রফিক-আজান? তাঁদের হাতে টাকা থাকা না থাকা কী ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে ডেবিট কার্ড-ক্রেডিট কার্ড-শোভিত মধ্যবিত্তের সংসারে? রফিক মণ্ডল, আজান মণ্ডলরা থাকেন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের জয়পুর, আমডাঙার আটঘরা গ্রামে। সব্জি চাষ করেন। ‘মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’ বা ‘স্পেনসার্স’কে বিক্রি করেন ফসল। গত কয়েক বছর ধরেই বারাসত, আমডাঙার এই সব গ্রামের চাষিরাই আধুনিক বাজারে লেনদেনের শরিক হয়ে দু’পয়সার মুখ দেখছেন। মাঝে কোনও ফড়ে-দালালের চক্কর নেই। মাল হাট-বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রির ঝক্কিও পোহাতে হয় না। গ্রামে এসে নিজেরাই ফসল কিনে নিয়ে যায় সংস্থাগুলি। টাকা আসে অ্যাকাউন্টে, বা বকেয়া মেটানো হয় চেকে।
এ রকম আধুনিক বিক্রি ব্যবস্থারই তো স্বপ্ন দেখে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’।
তবে কেন মাথায় হাত? সংস্থাগুলি কি টাকা আটকে রেখেছে? ‘‘একেবারেই না’’, বললেন রফিক। সমস্যাটা অন্য। চেকেই টাকা মিলুক বা সরাসরি অ্যাকাউন্টে, ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে হিমসিম খেতে হচ্ছে চাষিদের। আখেরে মার খাচ্ছে চাষ।
জানা গেল, আটঘরা গ্রামের শ’খানেক চাষি এখন স্পেনসার্সের কাছে সব্জি বেচছেন। কিন্তু দিন কয়েক আগেও চাষিদের সংখ্যাটা ছিল প্রায় দ্বিগুণ। কেন আসছেন না চাষিরা? বকেয়া চেক ব্যাঙ্কে ভাঙাতে গিয়ে জেরবার হচ্ছেন তাঁরা। গ্রামীণ এলাকার ব্যাঙ্কে টাকার জোগান পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ। তা ছাড়া, সর্বত্র ব্যাঙ্কের শাখাও নেই।
নগদের জোগান কমে আসায় জেরবার চাষিরা। ফসল কাটতে শ্রমিকের মজুরি, নতুন চাষের জন্য সার, বীজ— খরচ মেটাতে যে নগদ দরকার, সেটা কমে আসছে হাতে। তাই চেক পেয়েও বেকুব চাষি।
আটঘরা-সংলগ্ন মাধবপুরে একটি মাত্র ইলাহাবাদ ব্যাঙ্কের শাখা। সেখানে ভোর থেকে লম্বা লাইন। শ’দুয়েক মানুষের পিছনে দাঁড়িয়ে শনিবার ঘণ্টা তিনেক লাইন দিয়ে মাত্র ২ হাজার টাকা পেয়েছেন মহম্মদ ইসলামউদ্দিন। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যাঙ্কে টাকা পড়ে আছে, অথচ তুলতে পারছি না। এখন ফসল বোনার সময়। কখন ব্যাঙ্কে লাইন দেব, কখন চাষ করব— দিশেহারা অবস্থা।’’ জয়পুর গ্রামেও কোনও ব্যাঙ্ক নেই। ৪ কিলোমিটার দূরে ময়না হাটে ইউবিআই-এর শাখা রয়েছে। কিন্তু সেখানে অ্যাকাউন্ট নেই মহিউদ্দিন মণ্ডলের। বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে দত্তপুকুরে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে তাঁর অ্যাকাউন্ট। সেখানে দু’দুবার ঘুরে লম্বা লাইন দেখে ফিরে এসেছেন। বললেন, ‘‘ব্যাঙ্কে টাকা আছে। ঘরে ৫০০-১০০০ টাকার নোট। কেউ নিচ্ছে না। ছোট চাষিদের অবস্থা আরও খারাপ।’’
মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারিতে সব্জি বিক্রি করেন জয়পুরের মহিউদ্দিন মণ্ডল, মইনুর আলি, মোস্তিকিন আলিরা। দু’সপ্তাহ আগেও এক লপ্তে প্রায় ২৫ হাজার টাকার সব্জি বিক্রি করেছেন। কিন্তু এখন হাজার দ’শেক টাকার বেশি সব্জি বিক্রি করতে হিমসিম অবস্থা। নগদের অভাবে ফসল তুলতেই বিপাকে পড়েছেন সকলে। অথচ, বকেয়া টাকা নিয়মিতই ঢুকছে অ্যাকাউন্টে। কিন্তু হাত খালি।
মেট্রো ক্যাশ এন্ড ক্যারির এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সব্জির জোগান এ ভাবে কমতে থাকলে আমরাই বা কী করে ক্রেতার চাহিদা মেটাতে পারব, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy