Advertisement
E-Paper

ভোটের ঢাকেও নোটের কাঠি কোচবিহারে

ভোটের বাজারে শুধুই নোটের গল্প। কেউ বলছেন, নোট নেই। হয়রানি তো আপনাদের হচ্ছে। ভোট-বাক্সে তার জবাবটা দিন। কেউ বলছেন, মোদী হাওয়ায় চেপেই আমরা এখানে শিকড় গেড়েছি। এ বারও নোট-বাতিলের ফলে সেই হাওয়া ফের জোরদার।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৭

ভোটের বাজারে শুধুই নোটের গল্প।

কেউ বলছেন, নোট নেই। হয়রানি তো আপনাদের হচ্ছে। ভোট-বাক্সে তার জবাবটা দিন।

কেউ বলছেন, মোদী হাওয়ায় চেপেই আমরা এখানে শিকড় গেড়েছি। এ বারও নোট-বাতিলের ফলে সেই হাওয়া ফের জোরদার।

তোর্সা পাড়ের কোচবিহারে উপনির্বাচনের মুখে এ ভাবেই ছেয়ে রয়েছে নোট-কথা। উন্নয়ন, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িক উস্কানির অভিযোগ— সব পাশে ঠেলে মানুষ একটাই কথা শুনছেন নেতাদের মুখ থেকে। সেটা নোট-বৃত্তান্ত। আর শুধু এই কথাটুকু শুনবেন বলেই এসে হাজির হচ্ছেন মিটিং-মিছিলে। না হলে এটিএমে লাইন দেওয়া তাঁদের কাছে অনেক বেশি জরুরি, বলেই দিচ্ছেন স্পষ্ট করে!

মওকা ছাড়তে চাইছেন না তৃণমূলের বড়-মেজো-সেজো নেতারা। তাঁরা কেউ ফলাও করে নিন্দে করছেন কেন্দ্রীয় সরকারের, কারও আবার ভোটারের কষ্ট নিয়ে বলতে গিয়ে চোখে জল এসে পড়ার উপক্রম। কেউ ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের টাকাপয়সা নিয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন। এই প্রচারে সাড়া মিলছে বলেই দাবি তাঁদের। আর তাতেই ভাল ফলের আশায় বুক বাঁধছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। একের পর এক বৈঠকে তিনি বলছেন, ‘‘হয়রানির জবাব দেওয়ার সুযোগ ছাড়বেন না, কত্তা!’’

‘কত্তা’রা এ সব শুনে হাত চেপে ধরছেন রবিবাবুর। কখনও কুর্শামারির নগেন রায়, কখনও চকচকার সবিতা বর্মন। এঁদের কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই নেই আজ পর্যন্ত। অথচ কেউ হয়তো মেয়ের বিয়ের জন্য তিল তিল করে জমিয়েছেন লাখ চারেক টাকা। কেউ মুড়ি বেচে গত পাঁচ-ছ’বছরে জমিয়েছেন লক্ষাধিক। সবই বলতে গেলে পাঁচশো বা হাজারের নোটে। এই নোটের এখন কী হবে! উপায় না দেখে নেতাদের হাতই চেপে ধরছেন ওঁরা।

দিনহাটার তামাক মহল্লায় প্রচারে গিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ। তাঁর কাছে কেঁদে পড়লেন তামাক চাষিরা। বললেন, বছরের পর বছর তামাক চাষ করে ঘরে যে পাঁচশো, হাজারের নোট জমিয়েছেন, সেগুলো দিয়ে এখন কী করবেন? উদয়ন পরে বলেন, ‘‘বহু দিন ধরে দেখছি ওঁদের। ওঁরা নগদে কাজ করেন। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ধার ধারেন না। বড় সমস্যায় পড়েছেন এখন। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।’’

নোটের চাপ শুধু যে ভোটারদের ঘাড় নুইয়ে দিয়েছে, তা-ই নয়। প্রার্থীদের অবস্থাও তথৈবচ। যেমন ফরওয়ার্ড ব্লক। দু’বছর আগে তৃণমূলের রেণুকা সিংহ ফব-র দীপক রায়কে হারিয়েছিলেন ৮৭ হাজার ১০৬ ভোটে। তৃতীয় স্থানে ছিলেন বিজেপির হেমচন্দ্র বর্মন। দলীয় সূত্র বলছে, এ বার দীপকবাবু দাঁড়াতে রাজি হননি। শারীরিক কারণ দেখিয়ে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব এড়িয়ে গিয়েছেন পরেশ অধিকারীও। ফলে বাধ্য হয়েই গত বারে বাদ পড়া নৃপেন রায়কে প্রার্থী করেছে ফব। তাঁকে সামনে রেখে প্রচারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রাক্তন মন্ত্রী হাফিজ আলি সইরানি।

এ বারে কিন্তু ফব-র পতাকা চোখেই পড়ে না। আফসোস করছিলেন সইরানি, ‘‘অনেকেই খোলামকুচির মতো টাকা ওড়ায়। সারদা থেকে টেট, সব নিয়ে অভিযোগের বহর তো কম নয়। কিন্তু আমরা এত টাকা কোথায় পাব!’’ তাঁর কথায়, নোট নেই বলে পোস্টার, ফেস্টুন কম। দেওয়াল লেখার টাকাই বা দেওয়া হবে কোথা থেকে? এবং তাঁর আশা, ‘‘ঠিকঠাক ভোট হলে উন্নয়নের নামে টাকা নয়ছয় ও কালো টাকা উদ্ধারের নামে এমন দুর্ভোগের জবাব মানুষ দেবেন!’’

শুনে রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘‘আমাদেরই বা নোট কোথায়! ধারদেনা করে আমাদেরও চলতে হচ্ছে।’’ বিজেপি-র প্রচারে আবার উল্টো সুর। বিজেপির জাতীয় পরিষদের সদস্য নিত্যানন্দ মুন্সি বলছেন, ‘‘নোট বাতিলের জেরে মানুষের মধ্যে মোদী-হাওয়া ফিরে এসেছে। সেটাই কাজে লাগাচ্ছি। ভোট ঠিকঠাক হলে জবরদস্ত ফল হবে।’’ বিজেপি নেতৃত্ব নিজেদের ভোটের সঙ্গে যোগ করছেন অনন্ত মহারাজদের ভোটব্যাঙ্কও। ফলে লড়াইয়ের আশা তাঁরাও ছাড়ছেন না। তৃণমূল প্রার্থী করেছে ৩৪ বছরের পার্থপ্রতিম রায়কে। ইংরেজির শিক্ষক পার্থকে অনেকেই বলছেন, বাচ্চা ছেলে। সত্যি বলতে কী, কোচবিহারে এত কমবয়সী কেউ কখনও লোকসভা ভোটে টিকিট পেয়েছে কি না, সন্দেহ। পার্থ এখন ছুটছেন। আর রবিবাবুরা আশায় বুক বেঁধেছেন, এর সঙ্গে নোট-কাহিনির প্রচার জুড়লে সাতটি বিধানসভা ক্ষেত্রেই এ বার জয় পাবেন তাঁরা।

তাঁদের এই যুক্তি খাটবে কি?

সেটা ১৯ তারিখে ইভিএম-ই বলতে পারবে।

Cooch Behar Demonetization TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy