Advertisement
০৫ মে ২০২৪

নিম্নচাপে মুখ থুবড়ে ঝাঁপ ফেলল অন্ডাল

টাকার টানাটানিতে এমনিতেই উড়ান বন্ধ। এ বার পাঁচিল ভেঙে, বিদ্যুতের সাব স্টেশনে জল ঢুকিয়ে ভিলেন হয়ে উঠল সদ্য হানাদার নিম্নচাপ। ঝড়-বৃষ্টির জেরে আপাতত একেবারে কাজের বার হয়ে গেল অন্ডাল বিমানবন্দর।

ঝড়-জলে ভেঙে পড়েছে বিমানবন্দরের পাঁচিল। মঙ্গলবারের নিজস্ব চিত্র।

ঝড়-জলে ভেঙে পড়েছে বিমানবন্দরের পাঁচিল। মঙ্গলবারের নিজস্ব চিত্র।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৩
Share: Save:

টাকার টানাটানিতে এমনিতেই উড়ান বন্ধ। এ বার পাঁচিল ভেঙে, বিদ্যুতের সাব স্টেশনে জল ঢুকিয়ে ভিলেন হয়ে উঠল সদ্য হানাদার নিম্নচাপ। ঝড়-বৃষ্টির জেরে আপাতত একেবারে কাজের বার হয়ে গেল অন্ডাল বিমানবন্দর।

মাঝ-জুনে শেষ এসে নেমেছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। তার পরে দু’মাস হয়ে গিয়েছে, অর্থসঙ্কটে নুইয়ে পড়া অন্ডাল বিমানবন্দরে কোনও উড়ানের দেখা নেই। অন্ডাল থেকে আবার করে যাত্রিবাহী বিমান পরিষেবা চালু হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

এমতাবস্থায় বেসরকারি বিমানবন্দরটি কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। তবে লাইসেন্স টিকিয়ে রাখার তাগিদে রোজ সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটে পর্যন্ত এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) খোলা রাখা হচ্ছিল। কারণ, এটিসি বন্ধ করে দিলে লাইসেন্সও ফিরিয়ে দিতে হয়। ঠিক যে কারণে বিমান ওঠা-নামার বালাই না-থাকা সত্ত্বেও কোচবিহার বিমানবন্দরের এটিসি প্রতি দিন দু’ঘণ্টা খোলা থাকে।

কিন্তু অন্ডালে শিবরাত্রির সলতের মতো টিকিয়ে রাখা সেই এটিসি-ও পড়ে গিয়েছে নিম্নচাপের কোপে। পরিস্থিতি এমনই যে, ‘নোটাম’ (নোটিস টু এয়ারমেন) জারি করে বিমানবন্দর ও এটিসি আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তাঁদের তরফে জিএম (এয়ার ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট) বরুণ সরকার মঙ্গলবার বলেন, ‘‘প্রথমে সোমবার সকাল থেকে চব্বিশ ঘণ্টার জন্য নোটাম জারি হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে তার মেয়াদ আরও চব্বিশ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে।’’ রাতের খবর, অন্ডালে নোটামের মেয়াদ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

সাময়িক এই নির্দেশের কারণে লাইসেন্স ফেরানোর প্রশ্ন অবশ্য উঠছে না। তা হলেও এমন বেহাল অবস্থার কারণ কী?

কর্তৃপক্ষ আঙুল তুলছেন প্রকৃতির দিকে। আধিকারিক-সূত্রের খবর: গত শনি-রবিবার দুর্গাপুর ও আশপাশে লাগামছাড়া বৃষ্টি হয়েছে। রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে (যে পথে বিমান রানওয়েতে যাতায়াত করে) ও টারম্যাকে (যেখানে বিমান দাঁড়ায়) বেশ জল জমে যায়। বিমান ওঠা-নামার পক্ষে যা যথেষ্ট অসুবিধাজনক। এর চেয়েও বড় সমস্যা— বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিগড়ে গিয়েছে। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ও ডিপিএলের দু’টি লাইন গিয়েছে অন্ডাল বিমানবন্দরে। আলাদা সাব-স্টেশন তৈরি হয়েছে। রবিবার রাতে সেখানেই জল ঢুকে বিপত্তি ঘটে। টার্মিনাল বিল্ডিং ও এটিসি তো বটেই, বিমান ওঠা-নামায় প্রয়োজনীয় যাবতীয় যন্ত্রপাতিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। তামাম বিমানবন্দর ডুবে যায় অন্ধকারে।

এ হেন পরিস্থিতিতে আইনত বিমানবন্দর খোলা রাখা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ‘নোটাম’ জারি করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্ডাল-কর্তৃপক্ষ। উপরন্তু প্রবল বৃষ্টির তোড়ে রবিবার রাতে বিমানবন্দরের পশ্চিম দিকে প্রায় কুড়ি ফুট লম্বা পাঁচিল ধসে পড়েছে। টিনের অস্থায়ী পাঁচিল তোলা হলেও বিমানবন্দরের নিরাপত্তার নিরিখে তা আদৌ যথেষ্ট নয়।

সব মিলিয়ে চরম বেহাল দশা। এ বিষয়ে অন্ডাল বিমানবন্দরের মালিক সংস্থা বিএপিএলের বক্তব্য জানার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সংস্থার কর্তা পার্থ ঘোষ ফোন ধরেননি। এসএমএসের জবাবও দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Andal airport
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE