Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

গুজরাত পারলে বাংলা নয় কেন, চিঠি মমতাকে

স্কুলগুলির নিজেদের ইচ্ছেমতো ফি বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতায় লাগাম টানতে গত বছরের মে মাসে টাউন হলে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল ও কলেজের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৩
Share: Save:

বেসরকারি স্কুলগুলির ফি বৃদ্ধিতে লাগাম টানতে উদ্যোগী হয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর জন্য গত বছরের মে মাসে তিনি তৈরি করেছিলেন ‘সেল্‌ফ রেগুলেটরি কমিশন’। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি বলে অভিযোগ তুলে এ বার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন এক আইনজীবী। বিজেপি-শাসিত গুজরাত যে আগেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ করেছে, সে কথাও ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মামলাকারী আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী।

স্কুলগুলির নিজেদের ইচ্ছেমতো ফি বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতায় লাগাম টানতে গত বছরের মে মাসে টাউন হলে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল ও কলেজের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটি স্কুলের নাম করে করে অতিরিক্ত ফি এবং ডোনেশন কেন নেওয়া হচ্ছে, তার জবাব চান তিনি। তাঁর কড়া প্রশ্নের মুখে পড়ে অনেক স্কুলই সদুত্তর দিতে পারেনি। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী গড়ে দিয়েছিলেন ফি নিয়ন্ত্রণের কমিশন। সেই কমিশনে স্কুলশিক্ষা সচিব, রাজ্য পুলিশের
ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারের এক জন করে প্রতিনিধির পাশাপাশি সেন্ট জেভিয়ার্স, মডার্ন হাই, লা মার্টিনিয়ার, ডিপিএস (রুবি পার্ক), সেন্ট লরেন্স, লোরেটো, হেরিটেজ, শ্রীশিক্ষায়তন, সাউথ পয়েন্ট, ইয়ং হরাইজনের মতো স্কুলের প্রতিনিধিকেও রাখার কথা বলেছিলেন মমতা। কলকাতার বিশপ অশোক বিশ্বাস এবং আর্চবিশপ টমাস ডি’সুজাকেও কমিশনে থাকতে অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু পরবর্তী কালে দু’জনেই ওই কমিশনে না থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

সূত্রের খবর, সেন্ট জেভিয়ার্স, লা মার্টিনিয়ার, সেন্ট লরেন্স, লোরেটো ডে-র মতো স্কুলগুলিও এর পরে ওই কমিশনে না থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের অ্যাসোসিয়েশন অব খ্রিস্টান স্কুলস-এর জেনারেল সেক্রেটারি মলয় ডি’কোস্টা বলেন, ‘‘সমস্ত মিশনারি স্কুলের হয়ে ওই কমিশনে দু’জন প্রতিনিধি রাখতে চাই আমরা। শিক্ষা দফতরকে সেই প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’’ বর্তমানে কমিশনে থাকা এক সদস্য জানান, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বৈঠক হয়েছে। কী ভাবে বর্ধিত এই ফি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে এখনও পৌঁছনো যায়নি।

শুধু তা-ই নয়, কোনও স্কুলের নির্দিষ্ট সমস্যা নিয়ে পড়ুয়া, শিক্ষক, অভিভাবক যাতে অভিযোগ জানাতে পারেন, সে জন্যও আলাদা ওয়েবসাইট করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে রকম কোনও ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে কি না, সেটাই বলতে পারছেন না ওই কমিশনে থাকা বিভিন্ন স্কুলের সদস্যেরা।

অর্থাৎ, কমিশন তৈরির প্রায় সাত মাস পরেও কাজ বিশেষ না এগোনোয় প্রশ্ন তুলেছেন ওই আইনজীবী। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘গুজরাত সরকার আইন করে বর্ধিত ফি-তে লাগাম টেনেছে। বেসরকারি কোন স্কুল কত টাকা নিতে পারবে, তার একটি নির্দিষ্ট তালিকা তৈরি করেছে সে রাজ্যের সরকার। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা হলেও সরকারের জয় হয়েছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এ রকম কোনও আইন তৈরি করছে না কেন?’’

শনিবার এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি না জেনে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’

কমিশন ঠিক ভাবে কাজ করছে না, এমন অভিযোগ সামনে আসতেই কয়েক জন অভিভাবকের বক্তব্য, রাজ্য সরকার যে বেসরকারি স্কুলের ফি-তে লাগাম টানতে উদ্যোগী হয়েছে, তা ভাল। কিন্তু কমিশনের কার্যকারিতা নিয়েই যদি প্রশ্ন ওঠে, তা হলে বর্ধিত ফি-তে লাগাম পরাতে সব পক্ষ কতটা আগ্রহী, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। কমিশনের সদস্যেরা অনেকেই জানেন না আদৌ কোনও ওয়েবসাইট হয়েছে কি না। কমিশন তৈরির পরে অনেক অভিভাবক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও ফের তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE