Advertisement
E-Paper

আবেগ-অভিযোগ সঙ্গী করেই প্রচার নুরুলের

কোথাও তাঁকে ঘিরে জনতার আবেগ, কোথাও তাঁকে দেখে জনতার একাধিক অভিযোগ। তবে যে ভাবে হাসিমুখে জনতার আবেগ সামলালেন, ঠিক তেমনই হাসিমুখে ধৈর্য্য নিয়ে শুনলেন অভিযোগের ফিরিস্তি। ভোটের প্রচারে বেরিয়ে বসিরহাটের নানা জায়গায় এমনই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী নুরুল হুদা। ছুটির দিন। সকলকে বাড়িতেই পাওয়া যাবে।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০৫
সংগ্রামপুরে জনতার প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যস্ত প্রার্থী।—নিজস্ব চিত্র।

সংগ্রামপুরে জনতার প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যস্ত প্রার্থী।—নিজস্ব চিত্র।

কোথাও তাঁকে ঘিরে জনতার আবেগ, কোথাও তাঁকে দেখে জনতার একাধিক অভিযোগ। তবে যে ভাবে হাসিমুখে জনতার আবেগ সামলালেন, ঠিক তেমনই হাসিমুখে ধৈর্য্য নিয়ে শুনলেন অভিযোগের ফিরিস্তি। ভোটের প্রচারে বেরিয়ে বসিরহাটের নানা জায়গায় এমনই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী নুরুল হুদা।

ছুটির দিন। সকলকে বাড়িতেই পাওয়া যাবে। দেখাও হবে সকলের সঙ্গে। তাই রবিবার সকাল থেকে প্রচারে বেরিয়ে পড়েছিলেন প্রার্থী। সংগ্রামপুরের পশ্চিমপাড়ায় স্থানীয় সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য নিজাম হোসেন সর্দারকে নিয়ে পৌঁছতেই তাঁকে ঘিরে ধরলেন বাসিন্দারা। উড়ে এল একের পর এক অভিযোগের বাণ। অনেক দিন ধরে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত তাঁরা। দীর্ঘ তিরিশ বছর লড়াইয়ের পরে বিধবা ভাতা আদায় করতে পেরেছেন ওই গ্রামের আছিরা বিবি। বললেন, “তিরিশ বছর আগে বিধবা হয়েছি। কিন্তু বিধবা ভাতা পাচ্ছি মাত্র দু’বছর হল। তাও অনেক লড়াইয়ের পরে। একবার জেতার পরে আমাদের আর খোঁজ নেন না কেউ। আপনি জিতলে অন্তত দয়া করে এই গ্রামের বিধবাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করবেন।”

শিবহাটিতে প্রার্থীকে ফুলের উপহার জনতার।—নিজস্ব চিত্র।

দরমার বেড়া দেওয়া মাটির ঘর। টালিও ফেটে গিয়েছে। রোদ, জল আটকাতে পলিথিন দিয়ে ঢাকা। সেখানে মেয়েকে নিয়ে একা থাকেন আনোয়ারা বেওয়া। স্বামী গত হয়েছেন বেশ কিছু দিন। ছেলেরা স্ত্রী-পুত্র নিয়ে সংসার পেতেছে। বিধবা মাকে আর দেখে কে? অগত্যা মেয়েকে নিয়ে নিজের জোরেই বেঁচে থাকার লড়াই করছেন। সরকার থেকে প্রাপ্য ভাতাটুকু না পেয়ে প্রার্থীকে তাই আনোয়ারার প্রশ্ন, “পঞ্চায়েতে তো ২৫ বছর ক্ষমতায় আছে বামেরা। কী পেয়েছি আমরা? বার্ধক্য ভাতাই পাইনি তো অন্য সরকারি সাহায্য! সারা দিন ভাটায় ইট কেটে মেয়ে হাতে পায় সাকুল্যে ৬০ টাকা। সেই টাকায় খাব না চিকিৎসে করাব?” বছর আঠারোর মুসলেমা খাতুন বলে, “স্কুলে পড়তাম। কিন্তু পরে সংসার চালাতে পড়াশোনা ছেড়ে ইটভাটায় কাজ নিই। ডান-বাম সকলেই এসে ভোট চায়। কিন্তু কেউই কিছু করে না।” বছর তিরিশের শেখ জিয়ারুল বলেন, “এক বার জিতে যাওয়ার পরে চিনতে পারে না কেউ। মুখে সকলেই দাবি করে গরিবদের পার্টি। আসলে সবই ভোট নেওয়ার ফিকির।”

কেন এই অবস্থা?

পঞ্চায়েত সদস্য নিজাম হোসেন সর্দারের গলায় সাফাইয়ের সুর, “পঁচিশ বছর এখানে আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই যাঁরা আবেদন করেছেন তাঁদের সকলকে ইন্দিরা আবাস যোজনায় ঘর ও বার্ধক্য ভাতা দেওয়া হয়েছে। রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্নপূর্ণা কার্ডও দেওয়া হয়েছে। যদি ওঁরা না পেয়ে থাকেন অবশ্যই তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।” প্রার্থীরও প্রতিশ্রুতি, “অভিযোগ জানিয়ে ভাল করেছেন। নিশ্চিন্ত থাকুন, কেন এমন হল তা খোঁজ নিয়ে দেখব।”

সংগ্রামপুরের একেবারেই বিপরীত ছবি দেখা গেল শিবহাটি কাহারপাড়ায়। প্রার্থীর জন্য এখানে অভ্যর্থনায় কোনও খামতি ছিল না। জবা ফুল দিয়ে তাঁকে বরণ করে নেন গ্রামের মহিলারা। রোদ এড়াতে বটগাছের তলায় দাঁড়িয়ে নুরুল বলেন, “জিতলে এখানকার মানুষের অভাব-অভিযোগ মিটিয়ে দেব। রাস্তা হবে। পড়ুয়াদের জন্য বি এড কলেজ তৈরির পাশাপাশি বেকার ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।” হঠাৎই জনতার মধ্যে থেকে ভেসে এল মহিলা কণ্ঠ, “মেয়েদের উপরে যে ভাবে অত্যাচার বেড়ে চলেছে, তাতে একটা কড়া আইন করুন না। আমরা একা বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছি।” এ ব্যাপারে যথাযোগ্য চেষ্টার আশ্বাস দিয়ে এগিয়ে যান নুরুল।

শুধু বাড়ি বাড়ি নয়, রাস্তা ঘাটে, হাটে বাজারেও চষে বেড়ান নুরুল। নতুন বাজারে ঢুকতেই এগিয়ে এসে করমর্দন করলেন কয়েকজন দোকানদার। একজন বলেই ফেললেন, “লোকসভা ভোটের সময় বাজারে এসে ব্যবসায়ীদের কাছে তো ভোট বড় একটা কেউ চান না।” যা শুনে এক জনের মন্তব্য, “ভোট বড় বালাই। তার উপর এ বার ময়দানে চার দলের লড়াই। না এলে হবে!”

lok sabha election nirmal basu nurul huda basirhat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy