Advertisement
E-Paper

খুনে অভিযুক্ত লগ্নি-এজেন্টের বাড়িতে জনরোষের আগুন

বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থায় রাখা টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে এজেন্টের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে প্রাণ হারিয়েছেন দেগঙ্গার হতদরিদ্র আমানতকারী কার্তিক কর্মকার (১৮)। তার জেরে জনতার ক্ষোভ আছড়ে পড়ল অভিযুক্ত এজেন্টের বাড়িতে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল তাঁর বাড়ির ছাদে রাখা খড়ের গাদায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৪ ০২:৩১
খড়ের গাদায় আগুন নেভাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।

খড়ের গাদায় আগুন নেভাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।

বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থায় রাখা টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে এজেন্টের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে প্রাণ হারিয়েছেন দেগঙ্গার হতদরিদ্র আমানতকারী কার্তিক কর্মকার (১৮)। তার জেরে জনতার ক্ষোভ আছড়ে পড়ল অভিযুক্ত এজেন্টের বাড়িতে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল তাঁর বাড়ির ছাদে রাখা খড়ের গাদায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় নামাতে হল র্যাফ।

কার্তিক বুধবার মার খাওয়ার পরে উত্তেজিত জনতা বৃহস্পতিবারেই ওই এজেন্টের বাড়িতে এক দফা ভাঙচুর চালায়। পুলিশ তখনকার মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শনিবার কার্তিকের মৃতদেহ এলাকায় আসার পরে ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা ফের নেমে পড়েন রাস্তায়। বিকেল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বেড়চাঁপা-টাকি রোড অবরোধ করে রাখা হয়। রাত ১১টা নাগাদ হামলা হয় এজেন্টের বাড়িতে। অভিযোগ, কিছু বিক্ষোভকারীই ওই বাড়ির ছাদে রাখা খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়।

অভিযুক্ত এজেন্টের নাম তারক বিশ্বাস। তিনি ‘সানমার্গ’ নামের একটি বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, ওই এজেন্টের কাছে ১০ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বেড়াচাঁপার আলনি ঘোষপাড়ার বাসিন্দা কার্তিক। গরিব পরিবারের ছেলে কার্তিক গ্যারাজে কাজ করে কোনও মতে টাকাটা জমিয়েছিলেন। তাঁর পরিবার জানায়, বোনের বিয়ের জন্য ওই টাকা জমিয়েছিলেন কার্তিক। তাঁদের অভিযোগ, সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরে অন্য অনেক সংস্থার মতো ঝাঁপ গুটিয়ে ফেলে সানমার্গও। টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বারবার তারকের কাছে গিয়ে কাকুতিমিনতি করছিলেন কার্তিক। গত বুধবারেও বাবা হেমন্তকে সঙ্গে নিয়ে তারকের বাড়িতে গিয়েছিলেন কার্তিক। অভিযোগ, টাকা ফেরত দেওয়া তো দূরের কথা, তারক, তাঁর বাবা অজিত ও ভাই গোপাল চেলাকাঠ দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন কার্তিক এবং তাঁর বাবাকে। রাতেই রক্তবমি শুরু হয় কার্তিকের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় বারাসত হাসপাতালে। পরে পাঠানো হয় আর জি করে। সেখান থেকে নীলরতন সরকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে শুক্রবার রাতে সেখানে মারা যান ওই যুবক। পুলিশ জানায়, ঘটনার পরেই তারককে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বাবা ও ভাই পালিয়ে যান।

শনিবার বিকেলে ময়না-তদন্তের পরে কার্তিকের দেহ আসে গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দারা দেহ নিয়ে জড়ো হন তারকের বাড়ির সামনে। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ বেড়াচাঁপা মোড়ে টাকি রোডে দেহ নিয়ে শুরু হয় অবরোধ। ব্যস্ত রাস্তায় অবরোধের জেরে যানজট হয়। এলাকার লোকজন জানান, ঘটনার কথা শুনে পথচারীদের অনেকেও অবরোধে সামিল হন। পুলিশকর্তারা দফায় দফায় কথা বলেও অবরোধ তুলতে পারেননি। গ্রামবাসীরা দাবি জানান, কার্তিকের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ বাবদ তারকদের দু’টি বাড়ির একটি কার্তিকের পরিবারের নামে লিখে দিতে হবে। রাত সাড়ে ৯টার পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। গ্রামবাসীরা লিখিত অভিযোগ জমা দেন পুলিশের কাছে। রাত ১০টার পরে কার্তিকের দেহ সৎকারের জন্য গ্রামবাসীদের একাংশ রওনা হন বসিরহাটে।

রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তারকের বাড়ির ছাদে রাখা খড়ের গাদা থেকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখেন গ্রামের মানুষ। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন আসে। নামানো হয় র্যাফ। স্থানীয় বেড়াচাঁপা-২ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান, তৃণমূলের সন্দীপ ভট্টাচার্য বলেন, “দরিদ্র পরিবারের ছেলেটির এ ভাবে মৃত্যু খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু গ্রামের লোক যদি অভিযুক্তের বাড়িতে বারবার হামলা চালায়, সেটাও কাঙ্ক্ষিত নয়।”

kartik karmakar sunmarg deganga
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy