বন্ধ পড়ে রয়েছে পাঠাগার। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রন্থাগারিক নেই। তাই তালা খুলছে না সরকারি পাঠাগারের। সমস্যায় পড়েছেন স্কুল-কলেজের পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ। ন’মাস ধরে এমনই অবস্থা হাওড়ার পাঁচলা সামন্তী ক্ষেত্রমোহন সৎসঙ্ঘ পাঠাগারের। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বইপত্রে ধুলো জমছে। বাড়ছে ইঁদুর-উইপোকার দাপট।
সামন্তী ছাড়াও আশপাশের কমপক্ষে ছ’সাতটি গ্রামের স্কুল-কলেজের পড়ুয়া এবং অন্যেরা ওই পাঠাগারের উপর নির্ভরশীল। কবে সেখানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগ করা হবে, উত্তর জানা নেই কারও। হাওড়া জেলা গ্রন্থাগারের আধিকারিক তুষার চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “নতুন করে কর্মী নিয়োগ না হওয়ার ফলেই এই সমস্যা। তবে, সবে তো নির্বাচন গেল। চেষ্টা চলছে শীঘ্রই পাঠাগারটি যাতে খোলা যায়।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচলার বন-হরিশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সামন্তী গ্রামের বাসিন্দা তথা গঙ্গারামপুর স্কুল-কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন বিধায়ক সন্তোষ দাসের জ্যাঠামশাই যুগলকিশোর দাস পাঁচের দশকে ওই এলাকায় ১ বিঘা ১৮ কাঠা জমি দান করেছিলেন। তার মধ্যে ৮ কাঠা জমিতে গড়ে ওঠে সামন্তী ক্ষেত্রমোহন সৎসঙ্ঘ ক্লাব। এখানে নানা রকম সমাজ কল্যাণমূলক কাজকর্ম হত। কিন্তু কোনও পাঠাগার ছিল না। সন্তোষবাবুর উদ্যোগে সরকারি গ্রামীণ গ্রন্থাগারটি চালু হয় ১৯৮০ সালে। সেই থেকেই গ্রন্থাগারটি রমরম করে চলছিল। শুরু থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা গ্রন্থাগারটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তক বা বিভিন্ন বিষয়ের সহায়িকা যেমন এখানে মেলে, তেমনই চাকরিপ্রার্থীদের জন্য গাইডবুক থেকে শুরু করে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, রবীন্দ্র, বঙ্কিম, শরৎ রচনাবলি, ম্যাগাজিন কোনও কিছুরই অভাব নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা নিয়মিত খবরের কাগজও পড়তেন এখানে এসে। পাঠাগারের প্রাক্তন কর্মীরা জানান, এখানে বইপত্রের সংখ্যা ছ’হাজারেরও বেশি। সদস্য-সংখ্যা চারশোরও বেশি।
সামন্তী গ্রামের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী হরিশচন্দ্রপুর, জলাবিশ্বনাথপুর, নয়াচক, শ্যামচক, কলাগাছিয়া, ধুনকি, তেঁতুলবেড়িয়া, রাজখোলা প্রভৃতি গ্রামের স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং সাধারণ মানুষ নিয়মিত এই পাঠাগারে আসতেন। কিন্তু ন’মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকায় তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন।
সামন্তী গ্রামের বাসিন্দা তথা পাঠাগারের প্রাক্তন কর্মী জহর কোলে জানান, ২০১৩ সালের অগস্ট মাসে গ্রন্থাগারিক মুরারীমোহন পোল্লে অবসর নেন। তাঁর জায়গায় নতুন কেউ এখনও আসেননি। ফলে, পাঠাগারটি কর্মীহীন হয়ে পড়ে। সেই থেকেই পাঠাগারটি তালাবন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, বন্ধ পাঠাগারের মধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকার বইপত্র এবং আসবাবপত্র পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জহরবাবু বলেন, “পাঠাগারটি বন্ধ থাকায় এলাকার পড়ুয়ারা ছাড়াও বিশেষ করে চাকরিপ্রার্থীরা গাইড বুক না পেয়ে বঞ্চিত হচ্ছেন।” মুরারীমোহনবাবুও জানান, গ্রামের মানুষের কাছে পাঠাগারটির গুরুত্ব অপরিসীম। সন্তোষবাবুর আক্ষেপ, “এই প্রথম পাঠাগারটি বন্ধ হল।”
বন্ধ পাঠাগারে নতুন গ্রন্থাগারিক কবে নিয়োগ করা হয়, এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy