Advertisement
০৭ মে ২০২৪

চুক্তিভঙ্গ, ব্যাঙ্ককে জরিমানা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের

চুক্তিভঙ্গ করে এক ঋণগ্রহীতার দেয় কিস্তির টাকার পরিমাণ মাঝপথে বাড়িয়ে দেওয়ার দায়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে জরিমানা করল হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। শ্রীরামপুরের চাতরার বাসিন্দা, ওই ঋণগ্রহীতার নাম সমর দে। ২০০৫ সালের এপ্রিলে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চাতরা শাখা থেকে ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা ঋণ নেন ছেলে মৈনাকের উচ্চশিক্ষার জন্য।

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০১:১০
Share: Save:

চুক্তিভঙ্গ করে এক ঋণগ্রহীতার দেয় কিস্তির টাকার পরিমাণ মাঝপথে বাড়িয়ে দেওয়ার দায়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে জরিমানা করল হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।

শ্রীরামপুরের চাতরার বাসিন্দা, ওই ঋণগ্রহীতার নাম সমর দে। ২০০৫ সালের এপ্রিলে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চাতরা শাখা থেকে ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা ঋণ নেন ছেলে মৈনাকের উচ্চশিক্ষার জন্য। ব্যাঙ্কের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ঋণ মেটানোর জন্য প্রতিটি কিস্তির নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নিয়মিত জমা দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মাঝপথে কিছু না জানিয়েই ব্যাঙ্ক তাঁর সুদের পরিমাণ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ সমরবাবুর। ২০০৯ সালের এপ্রিলে সমরবাবু বিষয়টি জানিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখেন। ব্যাঙ্কের তরফে সেই চিঠির জবাব দেওয়া হয় প্রায় দু’বছর পরে। চিঠিতে তাঁরা জানান, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হঠাৎ নির্দেশিকার কারণেই ঋণের উপর অতিরিক্ত সুদ চাপাতে হয়েছে।

সম্প্রতি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে দায়ের করা অভিযোগে সমরবাবু জানান, ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্ত না মেনে কিস্তির টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন তিনি। সমরবাবুকে ডেকে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন পরে ধার্য করা অঙ্কই তাঁকে শোধ করতে হবে। ওই ব্যাঙ্কে তাঁর ২৬ হাজার টাকার একটি মেয়াদি আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) ছিল। ২০১১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তিনি ওই টাকা তুলতে গেলে তাঁকে না জানিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ওই টাকা ঋণের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে দেন। এমনকী, ঋণের মোট কত টাকা বাকি তা-ও একাধিকবার অনুরোধ সত্ত্বেও তাঁকে জানানো হয়নি।

দিন কয়েক আগে আদালতের প্রধান বিচারক নারায়ণ চক্রবর্তীর এজলাসে মামলাটির শুনানি হয়। যাবতীয় নথিপত্র খতিয়ে দেখার পরে আদালতের মনে হয়, গ্রাহককে না জানিয়েই তাঁর সুদের অঙ্ক পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। যা তাঁরা পারেন না। আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক এবং সংশ্লিষ্ট শাখার ম্যানেজারকে নির্দেশ দেয়, ওই গ্রাহকের ঋণের জন দেয় ঠিক কত টাকা বাকি আছে তা তাঁকে জানিয়ে দিতে হবে। ফিক্সড ডিপোজিটের ২৬ হাজার টাকা বাৎসরিক ৯ শতাংশ সুদ সমেত (যে দিন ওই টাকা ঋণের অ্যাকাউন্টে ঢোকানো হয়েছে, সে দিন থেকে হিসেব করে) অভিযোগকারীকে দিতে হবে। তাঁর মানসিক যন্ত্রণা, উদ্বেগ এবং হয়রানির জন্য ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। এক মাসের মধ্যে টাকা না দিলে ওই টাকার সঙ্গে ৯ শতাংশ হারে সুদও দিতে হবে।

আদালতের এই রায়ে খুশি সমরবাবু বলেন, “আমাকে অন্ধকারে রেখেই ওঁরা (ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ) সবটা করেছিলেন।” তাঁর আইনজীবী শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ব্যাঙ্ক আমার মক্কেলের সঙ্গে যা খুশি তাই করছিল। বহু মানুষ ব্যাঙ্কের এমন আচরণ মেনে নেন। আদালতের রায়কে সাধুবাদ জানাচ্ছি। ঠকে যাওয়া অনেক মানুষ এই রায়ের কথা জেনে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারবেন।’’ শুনানির সময়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সমরবাবুর অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করেননি বা অস্বীকারও করেননি বলে দাবি শিবাশিসবাবুর।

সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের চাতরা শাখার ম্যানেজার এ ব্যাপারে কোনও কথা বলতে চাননি। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। শ্রীরামপুরে ওই ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক (রিজিওনাল) দফতরে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে জানানো হয়, এ ব্যাপারে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের কোনও নির্দেশ তাঁদের কাছে আসেনি। তাই তাঁরা এ নিয়ে কোনও কথা বলবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

prakash pal serampore college
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE