Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ঝড়ে ধান ঝরেছে, চিন্তায় বোরো চাষি

কোথাও খেতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কোথাও ঝরে গিয়েছে ধানের শিস। তীব্র দহনের পরে কালবৈশাখী সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিলেও, চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে হাওড়া এবং হুগলি জেলার বেশ কয়েকটি এলাকার বোরো চাষিদের কপালে। তাঁদের অনেকেই এই ঝড়বৃষ্টিতে বোরো চাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। অবশ্য দুই জেলার কৃষি দফতরই মনে করছে, এই ঝড়বৃষ্টিতে ধানের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০১:৪০
Share: Save:

কোথাও খেতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কোথাও ঝরে গিয়েছে ধানের শিস।

তীব্র দহনের পরে কালবৈশাখী সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিলেও, চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে হাওড়া এবং হুগলি জেলার বেশ কয়েকটি এলাকার বোরো চাষিদের কপালে। তাঁদের অনেকেই এই ঝড়বৃষ্টিতে বোরো চাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। অবশ্য দুই জেলার কৃষি দফতরই মনে করছে, এই ঝড়বৃষ্টিতে ধানের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

রাজ্যের কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না জানিয়েছেন, কোনও চাষির ফলন প্রাকৃতিক কারণে নষ্ট হলে তাঁরা যেন স্থানীয় কৃষি আধিকারিক বা ব্লক অফিসে যোগাযোগ করেন। দফতরে রিপোর্ট পাঠানো হলে সেই অনুযায়ী বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট চাষিদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

কয়েক দিন ধরেই বোরো ধান তোলা চলছে হুগলিতে। কিন্তু তারকেশ্বর, ধনেখালি, বলাগড়-সহ কয়েকটি ব্লকের অনেক জায়গাতেই ঝড়বৃষ্টিতে পাকা ধান গাছ মরে পড়ে গিয়েছে। কোথাও আবার গাছ নুয়ে পড়েছে। যে সব জমিতে অপেক্ষাকৃত পরে ধান রোপণ করা হয়েছে সেখানেও ফলনে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

তারকেশ্বরের বালিগোড়ি-২ পঞ্চায়েতের মাদপুর গ্রামের রফিক হালদার দেড় বিঘে জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ধান পেকে গিয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই কাটার কথা ছিল। কিন্তু রবিবারের ঝড়বৃষ্টিতে সব ধান শিস থেকে ঝড়ে গেল।” ধনেখালির শ্যাওড়া গ্রামের গোপাল মান্নারও একই অভিজ্ঞতা। তিনি বিঘে তিনেক জমিতে বোরো চাষ করেছেন। তাঁর কথায়, “তিন দিনে পরিস্থিতি বদলে গেল। অধিকাংশ ধানই শিস থেকে ঝরে গিয়েছে। ধান তুলে ফেলতে হবে।” গুপ্তিপাড়ার সাধন মণ্ডল বলেন, ‘‘যে দিন ধান কাটা শুরু করলাম সে দিনই ঝড়-জল হল। খুব ক্ষতি হল। ভেজা ধানে দাম পাব না।”

কৃষি অধিকারিকরা অবশ্য এখনই এই ক্ষতিকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। তাঁরা মনে করছেন, বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু জায়গায় সমস্যা হতে পারে। জেলার কৃষি অধিকর্তা সতীনাথ পালিত বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যা রিপোর্ট তাতে বোরোর কোনও ক্ষতি হয়নি। জেলার কোনও জায়গাতেই এমন ঝড়বৃষ্টি হয়নি যে তাতে ক্ষতি হবে।’’ তাঁর সংযোজন, “যদি কোনও জমির ধান ঝড়ে গিয়ে থাকে, তা হলে বুঝতে হবে ফলন অতি পরিপক্ক হয়ে গিয়েছিল।”

কালবৈশাখীর জন্য হাওড়ার আমতা, বাগনান, শ্যামপুর প্রভৃতি এলাকার চাষিরাও বোরো চাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। উলুবেড়িয়ার বড়গ্রামের চাষি স্বপন দলুই জানান, তিনি প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করে দু’বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। কাটা ধান মাঠেই রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু ঝড়বৃষ্টিতে অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সোমবার বালতি করে জমি থেকে জল বাইরে বের করে কিছু ধান বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা করছিলেন স্বপনবাবু। তিনি বলেন, “কতটা ধান বাঁচাতে পারব জানি না। তবু চেষ্টা তো করতে হবে।” উলুবেড়িয়ার জোয়াড়গড়ি পঞ্চায়েতের বাঁশবেড়িয়া গ্রামের প্রশান্ত মণ্ডল ধান কেটে মাঠেই তা গাদা করে রাখেন। ঠিক করেছিলেন, সোমবার সেই ধান বাড়ি নিয়ে যাবেন। কিন্তু সকালে মাঠে এসে প্রশান্তবাবুর মাথায় হাত। বাজ পড়ে গাছ-সহ সব ধান পুড়ে ছাই। প্রশান্তবাবু হতাশ, “২৫ কাঠা জমিতে প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ করে বোরো চাষ করেছিলাম। ভেবেছিলাম সারা বছর ভাতের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। সব শেষ হয়ে গেল।”

মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে এই বৃষ্টিতে ধানের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। উলুবেড়িয়া মহকুমা কৃষি আধিকারিক তীর্থঙ্কর মণ্ডল জানান, বিভিন্ন ব্লক থেকে কৃষি আধিকারিকেরা ধান চাষে এখনও কোনও ক্ষতির কথা জানাননি। তা সত্ত্বেও কোনও চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে লিখিত ভাবে সে কথা জানালে আইনানুযায়ী তাঁকে সহায়তা দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

paddy boro norwester
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE