Advertisement
১৮ মে ২০২৪

তালপাতা কই, বিপদে পাখা শিল্প

বৈদ্যুতিক পাখা বা এসি, অথবা প্লাস্টিকের হাত পাখার দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে তাল পাতার পাখা। তাল গাছ নেই। দূরদূরান্ত থেকে তালপাতা সংগ্রহ করা হলেও পাখা তৈরি করার কারিগর মেলা ভার। এক সময়ে গরম পড়লে যেখানে তালপাতার পাখার চাহিদা তুঙ্গে উঠত, সেই চাহিদা কমছে দিন দিন। তবে তা সত্ত্বেও কোনও রকমে তাল পাতার পাখা তৈরি করে জীবিকা চালাচ্ছেন বসিরহাটের চাঁদপুর গ্রামের কয়েক জন।

গরমে তবু বেড়েছে কিছুটা ব্যস্ততা।—নিজস্ব চিত্র।

গরমে তবু বেড়েছে কিছুটা ব্যস্ততা।—নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৪ ০২:০৮
Share: Save:

বৈদ্যুতিক পাখা বা এসি, অথবা প্লাস্টিকের হাত পাখার দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে তাল পাতার পাখা। তাল গাছ নেই। দূরদূরান্ত থেকে তালপাতা সংগ্রহ করা হলেও পাখা তৈরি করার কারিগর মেলা ভার। এক সময়ে গরম পড়লে যেখানে তালপাতার পাখার চাহিদা তুঙ্গে উঠত, সেই চাহিদা কমছে দিন দিন। তবে তা সত্ত্বেও কোনও রকমে তাল পাতার পাখা তৈরি করে জীবিকা চালাচ্ছেন বসিরহাটের চাঁদপুর গ্রামের কয়েক জন।

বসিরহাট-২ ব্লকের কচুয়া পঞ্চায়েতের গোলাবাড়ি চাঁদপুর গ্রামে বাড়ি রাধারমণ দাসের। তাঁর দুই ভাই হরিপদ ও গৌর, তাঁদের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা তালপাতার পাখা তৈরি করেন। যেটুকু যা চাহিদা রয়েছে পাখার, তা মাথায় রেখেই মুখ বুজে পাখা তৈরি করছিলেন ওঁরা। রাধারমণবাবু জানান, এক সময়ে তালপাতার পাখার চাহিদা ছিল বেশি। অনেক পরিবারই তালপাতার পাখা তৈরি করে সংসার চালাতেন। কিন্তু এখন চাহিদা কমায় এই শিল্প বন্ধের মুখে।” কারিগররা জানান, আগে আশপাশের গ্রাম ঘুরলেই তালপাতা পাওয়া যেত। কিন্তু এখন ক্যানিং, মালঞ্চ, সন্দেশখালির মতো বহু দূরের গ্রামগুলি থেকে তালপাতা জোগাড় করে আনতে হয়। আর দূরের গ্রাম থেকে পাতা আনতে খরচও পড়ে যায় অনেক।

পাশেই স্ত্রী অনিমাদেবীর সঙ্গে বসে পাখা তৈরি করছিলেন হরিপদবাবু। বললেন, “শুধু কি পাতা আনলেই হবে? কাজ জানা চাই। পাতা কাটার কাজ শিখতে হয়। কী ভাবে কাটলে একটা পাতা থেকে অনেক পাখা তৈরি করা যায়, তা জানতে হবে। গোল করে কাটতে হবে প্রথমে পাতা। পাখা যাতে দেখতে ভাল হয়, টেঁকসই হয় সে জন্য পাতার মাঝখানে বাঁশের তৈরি কাঠি, লাল সবুজ রং করে সুচ-সুতো দিয়ে লাগাতে হবে। তবেই তো এর দাম মিলবে।”

সারা বছর অন্যের জমিতে চাষ করে সংসার চলে দাস পরিবারের। গরমের তিন চার মাস পাখা তৈরির কাজ করে কিছু টাকা আয় হয়। তার পর আবার অন্যের জমিতে লাঙল দেওয়া। অনিমাদেবী জানান, একজন মানুষ দিনভর কাজ করে ৫০টা পাখা বানাতে পারে। দোকানে তা বিক্রি হয় ৮ থেকে ৯ টাকায়। যেখানে পাখা তৈরির মজুরিই লেগে যায় ৪-৫ টাকা। ফলে লাভ তেমন হয় না। উদয়াস্ত পরিশ্রম করে দিনে বড় জোর দেড়শো টাকা আয় হয়। অনিমাদেবীর ক্ষোভ, “আমাদের কাছ থেকে দোকানগুলো যে দামে কেনে, তার প্রায় দ্বিগুণ দামে তা বাজারে বিক্রি করে। অথচ ওদের মজুরি বা পাতা আনার খরচ কোনওটাই দিতে হয় না।”

তবে এসি বা বৈদ্যুতিক পাখা নয়, তালপাতার পাখা শিল্পীদের মতে তালপাতার পাখার বাজার নিয়েছে প্লাস্টিক বা সান প্যাকের তৈরি পাখা। সানপ্যাকের পাখায় ছবি আঁকা বা লেখা, দু’টোই করা যায়। তাই রাজনৈতিক দলের কাছে তার কদর বেশি। দামও তুলনায় কম। অনুষ্ঠান বাড়িতেও ওই পাখা ব্যবহার করা হয়।

পরিবারের ছোট ছেলে গৌরবাবুর তাই ক্ষোভ, “এই শিল্প নষ্ট হতে বসেছে। অথচ সরকারের তরফ থেকে এই পাখা শিল্পীদের সাহায্যের কোনও রকম আশ্বাস পাই না। সরকারি তরফ থেকে এই শিল্পকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করা হলে সকলেরই সুবিধা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nirmal basu basirhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE