Advertisement
E-Paper

দলে দ্বন্দ্ব মেটাতে ‘উদাসীনতা’ কাঁটা হতে পারে তৃণমূল প্রার্থীর

তাঁর এলাকায় রয়েছে সাত-সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র। ভোটারের সংখ্যা প্রায় সতেরো লক্ষ। আগের লোকসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন ১ লক্ষ ৩০ হাজার ভোটে। তবে তখন তাঁর দল রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল না। এখন রাজ্যে তাঁর দল সরকার চালাচ্ছে। বাম জমানায় যা থমকে ছিল, সেই উন্নয়ন যজ্ঞ তাঁদের আমলে শুরু হয়েছে বলে দাবি করছেন তাঁর নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী। এ জন্য কি এ বার কিছু বাড়তি সুবিধা পাবেন?

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৪ ০০:২৬
প্রচারের ফাঁকে একটু বসে তেষ্টা মিটিয়ে নেওয়া।—নিজস্ব চিত্র।

প্রচারের ফাঁকে একটু বসে তেষ্টা মিটিয়ে নেওয়া।—নিজস্ব চিত্র।

তাঁর এলাকায় রয়েছে সাত-সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র। ভোটারের সংখ্যা প্রায় সতেরো লক্ষ। আগের লোকসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন ১ লক্ষ ৩০ হাজার ভোটে। তবে তখন তাঁর দল রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল না। এখন রাজ্যে তাঁর দল সরকার চালাচ্ছে। বাম জমানায় যা থমকে ছিল, সেই উন্নয়ন যজ্ঞ তাঁদের আমলে শুরু হয়েছে বলে দাবি করছেন তাঁর নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী। এ জন্য কি এ বার কিছু বাড়তি সুবিধা পাবেন?

প্রশ্ন শুনে গলায় উঠে এল প্রত্যয়, “অবশ্যই। এই আড়াই বছরে মানুষ দেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে কি উন্নয়ন করেছেন। তাঁরা আমাদের ফেরাবেন না।” কথা শেষ করে দলীয় কর্মীদের নিয়ে হাঁটা শুরু করলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী চৌধুরী মোহন জাটুয়া। বয়স আশি ছুঁয়েছে। ঋজু দেহে মেদ থাবা বসাতে পারেনি। প্রার্থী হিসাবে দল নাম ঘোষণার পরেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। ইতিমধ্যেই একাধিক কর্মিসভা সেরে এখন মন দিয়েছেন এলাকা ভিত্তিক প্রচারে। বেলায় প্রচণ্ড গরম শরীরকে কাবু করে ফেলতে পারে তাই সকাল আটটার মধ্যেই চিড়ে-দই গলাধকরণ করে দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নেমে পড়ছেন প্রচারে। মাঝে দুপুরে খাওয়ার জন্য একটু বিশ্রাম। তার পরে রোদ নামলেই ফের প্রচারের ময়দানে।

তবে এ বারের ভোট একটু আলাদা। প্রধানত চতুর্মুখী লড়াই। তাই প্রচারেও বাড়তি নজর। একেক দিন একাধিক এলাকা ঘুরছেন। কুলপি ও জেলার প্রত্যন্ত পাথরপ্রতিমায় প্রচারে নেমে ভোটারদের কাছে তাঁর আবেদন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কাজে আরও গতি আনতে আমাকে আর একবার দিল্লি যাওয়ার সুযোগ দিন।” তুলে আনলেন এলাকার মানুষের স্বার্থে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়নগর থেকে রায়দিঘি এবং নামখানা থেকে বকখালি পর্যন্ত রেল প্রকল্পের অনুমোদনের প্রসঙ্গ। তার পরেই কংগ্রেসকে আক্রমণ করে প্রার্থী বলেন, “এখন এ রাজ্যের কংগ্রেসের একজন কেন্দ্রীয় রেলপ্রতিমন্ত্রী। অথচ তিনি বাধা দেওয়াতেই ওই সব প্রকল্প রূপায়ণ করা যায়নি।’’ তবে প্রচারে গিয়ে নামখানায় হাতানিয়া-দোহানিয়া নদীর উপরে কেন সেতু হল না, এলাকার মানুষের সেই ক্ষোভেরও আঁচ পেয়েছেন জাটুয়া। গত নির্বাচনে সেতু নিয়ে তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁর সামনেই তা তুলে ধরে জনতা। জনতার ক্ষোভকে প্রশমিত করে প্রার্থীর আশ্বাস, “সেতু হবেই। সেতু তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই ২৬০ কোটি টাকা অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। এমনকী কাকদ্বীপ থেকে বকখালি পর্যন্ত ১১৭ নম্বর জাকীয় সড়ক চওড়া ও সংস্কারের জন্য ৫২ কোটি টাকা কেন্দ্র থেকে আমরা আদায় করেছি।”

বিরোধীরা অবশ্য আগের নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে ওই পাঁচ বছরে তৃণমূল প্রার্থী কি করেছেন সেটাই তুলে ধরছেন। তাঁদের আরও বক্তব্য, এখানকার প্রার্থী হলেও পুলিশের এই প্রাক্তন কর্তা এলাকার নন। তিনি কলকাতার সল্টলেকের বাসিন্দা। বহিরাগত হয়ে তিনি কতটা উন্নয়ন করবেন এখানে? বিরোধীদের এই আক্রমণের জবাবে প্রার্থীর দাবি, “আমি সুন্দরবন এলাকার মানুষ। ছোট থেকে রায়দিঘির স্কুলে এবং ডায়মন্ড হারবার কলেজে পড়াশোনা করেছি। এখানকার মানুষের সমস্যা জানি। তা ছাড়া শহরের প্রতি আমার কোনও আকর্ষণ নেই। আমার কাছে এখানকার গরিব মানুষের উন্নয়নই প্রধান বিষয়।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের দাবিকে অস্ত্র করে ভোটের ময়দানে নামলেও খোদ দলের মধ্যেই একাংশের বিরোধিতা প্রার্থীর জেতার পথে কাঁটা হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন এখানকার মানুষ। দলের মধ্যে আদি ও নব্য তৃণমূলের দ্বন্দ্ব মেটাতে জেলা তৃণমূল সভাপতির ‘উদাসীনতা’ নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে দলের একাংশ নেতা-কর্মীর মধ্যে। দলের জন্মলগ্ন থেকেই অনুগত সৈনিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানান, দলে অনেকেই অবহেলিত। কিন্তু উনি তাঁদের বিষয়ে উদাসীন।

দলের মধ্যে এ হেন ক্ষোভ, চতুমুর্খী লড়াইয়ে তাঁর ভোটব্যাঙ্কে যে প্রভাব ফেলবে না তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

dilip naskar mathurapur loksabha election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy