Advertisement
E-Paper

ধুঁকছে প্রকল্প, গ্রীষ্মে হাওড়ায় জলসঙ্কটের আশঙ্কা

এ বার গ্রীষ্মে হাওড়ার পুর-এলাকায় জল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন হাওড়ার পুরকর্তারাই। বাম পুরবোর্ডের পানীয় জল সরবরাহের ব্যর্থতা নিয়ে পুরভোটে প্রচারে নেমেছিল তৃণমূল। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ক্ষমতায় এলে হাওড়ার বাসিন্দাদের পানীয় জলের সমস্যা মিটবে।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৪ ০১:৩৮
ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

এ বার গ্রীষ্মে হাওড়ার পুর-এলাকায় জল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন হাওড়ার পুরকর্তারাই।

বাম পুরবোর্ডের পানীয় জল সরবরাহের ব্যর্থতা নিয়ে পুরভোটে প্রচারে নেমেছিল তৃণমূল। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ক্ষমতায় এলে হাওড়ার বাসিন্দাদের পানীয় জলের সমস্যা মিটবে। তাই দায়িত্ব নেওয়ার পরে পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁদের রিপোর্ট দেখে মাথায় হাত পুরকর্তাদের।

পানীয় জলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ অরুণ রায়চৌধুরীর কথায়: “সামনের গ্রীষ্মে কী হবে বুঝতে পারছি না।”

হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া পুর এলাকার ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৩টি ওয়ার্ডে জল সরবরাহ করা হয় পদ্মপুকুর জলপ্রকল্প থেকে। বাকি সাতটি ওয়ার্ডে জল দেয় কেএমডব্লিউএসএ। পদ্মপুকুর জল প্রকল্পের মধ্যে পুরসভা এবং কেএমডিএ-র আলাদা দু’টি পাম্পিং স্টেশন রয়েছে। দু’টি স্টেশন থেকে দৈনিক গড়ে ৬৫ থেকে ৭০ মিলিয়ন গ্যালন জল উৎপাদন হওয়ার কথা। ২০০০ সালের পর থেকে জলের উৎপাদন কমতে কমতে বর্তমানে যথাক্রমে ৩২ থেকে ৩৫ গ্যালনে পৌঁছেছে। ফলে বিস্তৃত এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে জলসঙ্কট দেখা গিয়েছে। এ বার গ্রীষ্মে তা তীব্র আকার নিচ্ছে।

কিন্তু কেন?

পুরসভা সূত্রে খবর, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন প্রকল্পটির গোড়াতেই গলদ রয়েছে। গলদের মূল কারণ শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতরে থাকা গঙ্গা থেকে জল তোলার ‘র ওয়াটার পাম্পিং স্টেশন’। এই পাম্পগুলি গঙ্গা থেকে জল তুলে মূল শোধনাগারে পাঠায়। ওই স্টেশনে পুরসভার তিনটি ও কেএমডিএর-র চারটি পাম্প রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মূলত পাঁচটি সমস্যার কথা জানিয়েছেন। প্রথমত, পাম্পগুলি পর্যায়ক্রমে গঙ্গা থেকে একটি মাত্র সাকশন পাইপ দিয়ে জল তোলে। যা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক।

তা ছাড়া পুরসভা এবং কেএমডিএ-র পাম্পগুলির ঘূর্ণন বেগ আলাদা। দ্বিতীয়ত, পুরসভার তিনটি পাম্পের মধ্যে একটি দীর্ঘ দিন খারাপ। বাকি দু’টির মধ্যে একটি প্রায়ই খারাপ হয়ে যায়।

তৃতীয়ত, সাকশন পাইপ এমন ভাবে গঙ্গায় পাতা হয়েছে যে গঙ্গা থেকে জল তোলার জন্য জোয়ার-ভাঁটার উপরে নির্ভর করতে হয়। ফলে গ্রীষ্মে গঙ্গা থেকে জল তুলতে গেলে সমস্যা হয়। পাম্পে হাওয়া ঢুকে পাম্প বিগড়ে যায়। চতুর্থত, পাম্পের হাওয়া বের করার জন্য যে তিনটি ভ্যাকুয়ম পাম্প ছিল তাও দীর্ঘ দিন খারাপ। গ্রীষ্মে হাওয়া ঢুকে গেলে পাম্প খারাপ হয়ে যায়। ফলে জল সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়। শেষ সমস্যাটি হল, সর্বত্রই রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা প্রকল্পটির আমূল সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন।

পুরসভা সূত্রে খবর, বিশেষজ্ঞদের দেওয়া রিপোর্টে মূল জল শোধনাগারের সঙ্কটজনক অবস্থার কথাও জানানো হয়েছে।

ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ক্লোরিন প্ল্যান্টের গ্যাস প্যানেল বোর্ড খারাপ হয়ে পড়ে আছে। শহরে জল সরবরাহের ন’টি পাম্পই পুরনো হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে চারটি খারাপ হয়ে গিয়েছে। এগুলি অবিলম্বে পাল্টানোর প্রয়োজন।

নতুন পুরবোর্ডের অভিযোগ, গোটা প্রকল্পটির মাটির নীচে পাইপলাইনের নকশা থাকার কথা। কিন্তু তা পাওয়া যাচ্ছে না।

পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাটির উপরে থাকা ১৫৭৫ মিলিমিটারের প্রধান পাইপ লাইন অনেক জায়গায় ক্ষয়ে গিয়েছে।

ফলে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের আশঙ্কা উচ্চচাপে জল ছাড়লে পাইপ ফেটে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই এখন প্রধান পাইপের পাশে আর একটি পাইপ বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। যদিও পূর্বতন বামবোর্ড এই অভিযোগ মানতে নারাজ।

water crisis howrah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy