Advertisement
E-Paper

নুরুলকে সরিয়ে ইদ্রিসকে এনেও বসিরহাটে জয়

২ লক্ষেরও বেশি ভোটে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্র বসিরহাটে জয় পেল তৃণমূল। সকাল থেকেই গণনাকেন্দ্রে বসেছিলেন প্রার্থী ইদ্রিস আলি। বেলা যত গড়িয়েছে, একের পর এক এলাকার ভোটমেশিনের ফলাফলে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত হয়েছে। আর চওড়া হয়েছে ইদ্রিসের মুখের হাসি।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০২:৩৫

২ লক্ষেরও বেশি ভোটে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্র বসিরহাটে জয় পেল তৃণমূল। সকাল থেকেই গণনাকেন্দ্রে বসেছিলেন প্রার্থী ইদ্রিস আলি। বেলা যত গড়িয়েছে, একের পর এক এলাকার ভোটমেশিনের ফলাফলে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত হয়েছে। আর চওড়া হয়েছে ইদ্রিসের মুখের হাসি।

রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের পক্ষে যে হাওয়া উঠেছিল ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সময়, সেই হাওয়া এখনও অটুট। যার পুরোপুরি সুবিধা পেয়েছেন ইদ্রিস। আরও কিছু বিষয় তাঁর পক্ষে গিয়েছে?

এর একটা বড় কারণ অবশ্যই মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক। পঞ্চম তথা শেষ দফা ভোটের আগে কয়েক বার এ রাজ্যে ঘুরে গিয়েছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। যাঁর প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়া আর শুধু সময়ের অপেক্ষা। মোদী অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে যে বক্তব্য রেখে গিয়েছিলেন, তাতে মুসলিমদের একাংশের মধ্যে আতঙ্ক দানা বেঁধেছিল। বিজেপি ক্ষমতায় এলে অনুপ্রবেশকারীদের এ দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তা ছাড়া, বিধানসভায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মুসলিমদের জন্য একাধিক প্রকল্প নিয়েছে। যার সুফল অবশ্যই ভোটমেশিনে মমতার পক্ষেই থেকেছে।

কিন্তু এ বাদে আরও একটি কারণের কথা উঠে আসছে রাজনৈতিক মহলের আলোচনায়।

প্রথম সারির বাম নেতারা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই এলাকায় প্রচারে এসে বার বারই বলেছেন, বিজেপিকে যেনতেন প্রকারে রুখতেই হবে। তাতে যদি ভোট তৃণমূলের ঘরে যায়, তা-ও ভাল। এই প্রচারের মাধ্যমে বাম নেতৃত্ব অনুমান করেছিলেন, সংখ্যালঘু ভোট আসবে সিপিআই প্রার্থী নুরুল হুদার পক্ষে। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছে। সংখ্যালঘু ভোটের বড় অংশ গুছিয়ে ঘরে তুলেছে তৃণমূলই। সিপিআই প্রার্থী নুরুলকে আবার এখানকার বাম নেতা-কর্মীদের অনেকে শুরু থেকেই পছন্দ করেননি। আগের বারের প্রার্থী সিপিআইয়ের অজয় চক্রবর্তী এখানে পরাজিত হলেও তাঁকেই চেয়েছিলেন বাম নেতৃত্বের বড় অংশ। সিপিআইয়েরই গুরুদাশ দাশগুপ্তও ছিলেন তাঁদের পছন্দের সারিতে। যদিও গুরুদাশবাবু এ বার ভোটের দিন ক্ষণ ঘোষণার আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি আর ভোটের লড়াইয়ে নেই। সব মিলিয়ে নুরুল হুদার হয়ে প্রচারে বামেদের পুরো অংশকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পাশে পাওয়া যায়নি।

গ্রামাঞ্চলের মুসলিম ভোটের বড় অংশ তৃণমূলের পক্ষে গেলেও শহরের হিন্দু ভোটে আবার ভাগ বসিয়েছে বিজেপি। এ বার প্রায় ২ লক্ষ ভোট পেয়ে তারা এই কেন্দ্রে তৃতীয় স্থানে আছে। তৃণমূলের উপরে নানা ক্ষোভ-বিক্ষোভ গত কয়েক বছরে দানা বেঁধেছে। বামেদের বদলে এই অংশটি ভরসা রেখেছেন এ রাজ্যে নতুন শক্তি বিজেপির উপরে। গত বার বিজেপি এই কেন্দ্রে পেয়েছিল প্রায় ৭৬ হাজার ভোট। এ বার বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য সেই সংখ্যাটা অনেকটাই বাড়িয়ে নিতে পেরেছেন।

কংগ্রেস একেবারে চতুর্থ সারিতে। যদিও দক্ষিণবঙ্গের যে ক’টি এলাকায় কংগ্রেসের প্রভাব আছে, তার মধ্যে ধরা হয় বসিরহাটকে। কিন্তু তৃণমূলের ঝোড়ো হাওয়ায় তারা এ বার একেবারেই কোণঠাসা এই এলাকায়। সকাল থেকে ঘরে থেকেছেন প্রার্থী কাজি আব্দুর রহিম দিলু। তাঁর বাবা আব্দুল গফ্ফর ছিলেন বাদুড়িয়ার বিধায়ক। সেই প্রভাবেও বড় ভোট আশা করেছিল কংগ্রেস।

গত বার এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম। তিনিই এ বার তৃণমূলের একমাত্র প্রার্থী, যাঁকে কেন্দ্র বদল করে অন্যত্র দাঁড় করিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু জঙ্গিপুর আসনে নুরুল ‘দিদি’র মুখ রক্ষা করতে পারেননি। নুরুলকে বসিরহাট কেন্দ্র থেকে সরানোটা ছিল তৃণমূল নেত্রীর ‘মাস্টারস্ট্রোক’। দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্বের একটা বড় অংশ নুরুলের উপরে নানা কারণে অসন্তুষ্ট ছিলেন। এলাকায় উন্নয়নের জন্য প্রচুর টাকা খরচ করলেও নুরুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নানা গণ্ডগোলে মদত দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সব মিলিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ নুরুলের পাশ থেকে ক্রমেই সরে আসছিলেন। হিন্দু ভোটারদের একটা অংশও নুরুলের উপরে সন্তুষ্ট ছিলেন না। এই কেন্দ্রে বাইরে থেকে প্রার্থী আনার পরিকল্পনা করেন মমতা। তাঁর সেই ভাবনা কাজে এসেছে। ইদ্রিস বলেন, “এ হল মা-মাটি-মানুষের জয়। মমতার জয়।”

deep green nirmal basu nurul idrish basirhat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy