নতুন শিক্ষাবর্ষের পঠনপাঠন শুরু হয়েছে দু’মাস আগে। দোরগোড়ায় পরীক্ষা। অথচ, এখনও হরিপালের বিভিন্ন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের হাতে পৌঁছল না মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অঙ্ক বই। ফলে, বেকায়দায় পড়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে কী করে অঙ্কের পরীক্ষা নেওয়া হবে, বুঝে পাচ্ছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। কবে বই মিলবে, বলতে পারছেন না কেউই।
পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির যাবতীয় বই পর্ষদের বিনামূল্যে সরবরাহ করার কথা। গত শিক্ষাবর্ষে পর্ষদের তরফে পড়ুয়াদের হাতে বই কেনার টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেই টাকায় পড়ুয়ারা বাজার থেকে বই কিনেছিল। এ বার অবশ্য পর্ষদ ঠিক করে, বাজারে বই ছাড়া হবে না। তারাই স্কুলে-স্কুলে বই পৌঁছে দেবে। গত ২ জানুয়ারির মধ্যে সব স্কুলে বই পৌঁছনোর কথা ছিল। এমনিতেই হুগলির বহু স্কুলে বই পৌঁছতে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত অন্য বই পৌঁছলেও অঙ্ক বই (গণিতপ্রভা) এখনও হাতে পায়নি হরিপাল পূর্ব চক্রের বিভিন্ন স্কুল।
হরিপালের যে সব স্কুলে অঙ্ক বই নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে গজা উচ্চ বিদ্যালয়, নালিকুল দেশবন্ধু বাণীমন্দির, নালিকুল বালিকা বিদ্যালয়, জামাইবাটি উচ্চ বিদ্যালয়, বন্দিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বন্দিপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, কিঙ্করবাটি উচ্চ বিদ্যালয়-সহ বেশ কিছু স্কুল। সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরাও।
জেলা স্কুল পরিদর্শক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হরিপালের ওই স্কুলগুলিতে অবিলম্বে যাতে অঙ্ক বই পাঠানো হয় সে ব্যাপারে গত মঙ্গলবারেই স্কুল শিক্ষা দফতরে জানিয়েছি।” দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “হরিপালে হাজার দেড়েক অঙ্ক বই লাগবে। জেলায় অন্যান্য এলাকার কয়েকটি স্কুলেও কিছু বই কম পড়েছে। তবে, হরিপালের মতো সমস্যা কোথাও হয়নি।”
জামাইবাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ১৭০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী পড়ে। ওই স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মাসের শেষ দিকে মাত্র ১৫টি অঙ্ক বই পাওয়া গিয়েছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষ রোল নম্বর অনুযায়ী প্রথম ১৫ জনের হাতে ওই বই তুলে দেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খোলা বাজারে কিছু বই ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যদিও বাইরে বই বিকোনোর কথাই নয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সিংহ বলেন, “সকলের হাতে বই না থাকায় কোনও রকমে ক্লাস করাতে হচ্ছে। হোমওয়ার্ক দেওয়া যাচ্ছে না। অঙ্কে এমনিতেই অনেকের ভয় থাকে। তার উপরে দু’টি মাস পেরিয়ে গেলেও এতগুলো ছেলেমেয়ে বই চোখেই দেখতে পেল না।”
গজা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া প্রায় ৮০ জন। ওই স্কুলেও দিন পনেরো আগে মাত্র ১৫টি বই এসেছে। প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণচন্দ্র সিংহ বলেন, “খুবই সমস্যায় পড়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও সুরাহা কিছু হল না।” প্রধান শিক্ষকদের অনুযোগ, বই এখনও না মেলায় প্রতিদিন অভিভাবকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।
প্রধান শিক্ষকদের চিন্তা আরও বাড়িয়েছে পরীক্ষার নির্ঘন্ট। পর্ষদ যে নির্ঘণ্ট এ বার তৈরি করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ১৫ নম্বরের প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন হওয়ার কথা এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে। ২৫ নম্বরের দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন অগস্টে এবং ৭০ নম্বরের বাৎসরিক মূল্যায়ন নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হওয়ার কথা। তিনটি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে শতকরা হিসেবে পড়ুয়ার নম্বর ঠিক করা হবে। আর এটাই এখন শিক্ষকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের ভাবনা, প্রথম পরীক্ষার আগে হাতে অল্প ক’টা দিন পড়ে। এখন যদি বই আসেও, সিলেবাস শেষ করা যাবে কি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy