প্রীতম। —নিজস্ব চিত্র।
দিনরাত পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরে জামাকাপড় ফেরি করেন বাবা। ছেলের স্বপ্ন, বড় হয়ে গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে গরিবগুরবো মানুষের রোগের চিকিৎসা করা। ছেলের এই স্বপ্ন নিয়ে বাবা যখন ভাবেন, কপালের ভাঁজ বেড়ে যায়। কেননা, হুগলির জাঙ্গিপাড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত খাঁড়া বিলক্ষণ জানেন, ছেলে প্রীতমের ওই স্বপ্নপূরণের পথে প্রধান কাঁটা সংসারের অভাব।
ছোটবেলা থেকেই প্রীতম অত্যন্ত মেধাবী। তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বার মাধ্যমিক দিয়ে সে ৬৬১ নম্বর পেয়েছে। ওই স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রীতমের নম্বরটাই সর্বোচ্চ। ভৌতবিজ্ঞানে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ১০০। অঙ্ক আর জীবনবিজ্ঞানে সে পেয়েছে ৯৮। তার সাফল্যে খুশি পাড়া-পড়শিরাও।
প্রীতমের বাড়ি জাঙ্গিপাড়ার রাজবলহাট-১ পঞ্চায়েতের শিবচক গ্রামে। লক্ষ্মীকান্তবাবু নিজে বিকম পাশ। যদিও, চাকরি জোটেনি। তাঁর স্ত্রী চিত্রাবতীদেবী বিএ পাশ। প্রীতমের ভাই রোহন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। সাইকেল বা মোটরবাইক ছাড়া গ্রামে পরিবহণ ব্যবস্থা কার্যত কিছু নেই। নেই চিকিৎসকও। রাতবিরেতে কারও কিছু হলে মহা মুশকিলে পড়েন গ্রামবাসীরা। তাই লক্ষ্মীকান্তবাবুও স্বপ্ন দেখেন, ছেলে গ্রামবাসীদের সেই অভাব একদিন মেটাবে। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে চোয়াল শক্ত করে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন তিনি।
কিন্তু এখনও ছেলের জন্য সব বই কিনে দিতে পারেননি লক্ষ্মীকান্তবাবু। সাইকেলে চড়ে ৬ কিলোমিটার দূরে স্কুলে যায় প্রীতম। গৃহশিক্ষকদের পাশাপাশি মা-বাবার কাছেও মাধ্যমিকের পাঠ নিয়েছে সে। কিন্তু এ বার যে পড়ার খরচ বেশি তা নিয়ে লক্ষ্মীকান্তবাবুর দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তাঁর কথায়, “ছেলে একই স্কুলে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়েছে। এখনও সব বই কিনে দিতে পারিনি। অত খরচ কী ভাবে সামলাব, জানি না।”
তাঁর আক্ষেপ, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় জাতীয় স্তরে বৃত্তি পায় প্রীতম। কিন্তু তার অর্থ এখনও পায়নি। সেই টাকা পেলেও ছেলের পড়ার খরচ কিছুটা সামলাতে পারতেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy