Advertisement
E-Paper

পতাকা খোলায় আক্রান্ত নির্বাচন দফতরের কর্মচারী

এ বার হাওড়া। নির্বাচন দফতরের নির্দেশে সরকারি সম্পত্তি ও বিদ্যুতের খুঁটিতে লাগানো দলীয় পতাকা ও ফেস্টুন খুলতে গিয়ে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হলেন হাওড়া জেলা নির্বাচন দফতরের এক কর্মী। তাঁর নাম সৌমেন আচার্য। ভূমি ও রাজস্ব দফতরের আপার ডিভিশন ক্লার্ক পদে চাকরি করলেও বর্তমানে তিনি জেলা নির্বাচন দফতরের ‘মডেল কোড অব কন্ডাক্ট সেল’-এ কাজ করছেন। ওই ঘটনাটির পরে সৌমেনবাবু গোটা বিষয়টি লিখিত ভাবে হাওড়ার জেলাশাসক ও পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছেন। তবে রাত পর্যন্ত এ ব্যাপারে কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২৮

এ বার হাওড়া।

নির্বাচন দফতরের নির্দেশে সরকারি সম্পত্তি ও বিদ্যুতের খুঁটিতে লাগানো দলীয় পতাকা ও ফেস্টুন খুলতে গিয়ে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হলেন হাওড়া জেলা নির্বাচন দফতরের এক কর্মী। তাঁর নাম সৌমেন আচার্য। ভূমি ও রাজস্ব দফতরের আপার ডিভিশন ক্লার্ক পদে চাকরি করলেও বর্তমানে তিনি জেলা নির্বাচন দফতরের ‘মডেল কোড অব কন্ডাক্ট সেল’-এ কাজ করছেন। ওই ঘটনাটির পরে সৌমেনবাবু গোটা বিষয়টি লিখিত ভাবে হাওড়ার জেলাশাসক ও পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছেন। তবে রাত পর্যন্ত এ ব্যাপারে কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস বলেছেন, “অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে পুলিশকে।” আর পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডের বক্তব্য, “এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। কারা কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” প্রশাসন এ কথা বললেও হাওড়ার ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কার্যত নির্বাচন কমিশনের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। পার্থবাবু বলেছেন, “একটা প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। নির্বাচনী বিধি মানানোর নাম করে কমিশনের কর্মীরা সহজ কাজ কঠিন ভাবে করছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা দলীয় প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারছেন না। সে কারণেই এ ধরনের বিবাদ হচ্ছে।’’ পার্থবাবুর চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে রাজ্যের আর এক মন্ত্রী তথা হাওড়া জেলার তৃণমূলের সভাপতি অরূপ রায়ের বক্তব্য, “কমিশন সিপিএমের হয়ে কাজ করছে।” রাজ্যের মন্ত্রীরা এ রকম মন্তব্য করার ফলে তদন্ত কতটা গুরুত্ব পাবে, সে নিয়ে সংশয়ে রাজ্য প্রশাসনেরই একাংশ।

দিন কয়েক আগেই উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় সরকারি সম্পত্তিতে লাগানো পোস্টার ও ব্যানার খুলতে যাওয়ায় এক দল তৃণমূল সমর্থকের হাতে হেনস্থা হতে হয়েছে স্থানীয় বিডিও দীনবন্ধু গায়েনকে। ওই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১৫ জন অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীকে।

মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে মধ্য হাওড়ার কাসুন্দিয়া শিবতলা এলাকার স্বামী বিবেকানন্দ রোডে। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন বেলা ১টা নাগাদ জেলা নির্বাচন দফতরের ‘মডেল কোড অব কন্ডাক্ট’ (এমসিসি) সেলের ১১জন কর্মী দু’টি গাড়ি করে কাসুন্দিয়ায় যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, গাড়ি থেকে নেমে ওই সরকারি কর্মী তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজনকে একটি বাতিস্তম্ভ থেকে তৃণমূলের পতাকা খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। সেখানে সরকারি সম্পত্তিতে সিপিএমের পতাকাও লাগানো ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বলেন, তৃণমূলের পতাকা খোলার খবর পেয়ে আশপাশের এলাকা থেকে দলের কর্মী-সমর্থকেরা সেখানে জড়ো হন। কেন বাতিস্তম্ভ থেকে পতাকা খোলা হচ্ছে, সে ব্যাপারে তাঁরা কৈফিয়ত চান সৌমেনবাবুর কাছে। কিন্তু ওই সরকারি কর্মীর ব্যাখ্যা তাঁদের পছন্দ হয়নি। আর এতেই উত্তেজনার পারদ বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে।

স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন, তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের দলের পতাকা খোলার আগে সিপিএমের পতাকা খুলতে চাপাচাপি করতে থাকেন সৌমেনবাবুর উপরে। ইতিমধ্যে এক দল যুবক তৃণমূলের পতাকা খোলায় বাধা দেয়। তাই দেখে বাকিরাও এগিয়ে আসে। তা নিয়েই ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে। পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সৌমেনবাবুর সঙ্গের লোকজন পালিয়ে যান। একা পড়ে যান ওই সরকারি কর্মী। সৌমেনবাবু বলেন, “আমাকে চরম হেনস্থা করা হয়েছে। আমার ভিডিওগ্রাফারের ক্যামেরার ক্যাসেট কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ধাক্কা মারতে মারতে আমাকে রাস্তায় ঘোরানো হয়েছে।” এই ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের এক কর্মীও। তাঁকে মারধর করে ক্যামেরা ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

এর মধ্যেই সেখানে হাজির হন হাওড়ার পুরসভার মেয়র পারিষদ বিনোদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বনাথ দাস ও হাওড়ার তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপ্তসহায়ক ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়। কাছাকাছি একটি দলীয় কর্মিসভায় হাজির ছিলেন তাঁরা। বিনোদানন্দবাবু বলেন, “ওই কর্মীকে হেনস্থা করা হয়নি। উল্টে আমার সামনেই তৃণমূলের পতাকা রাস্তায় ফেলে অবমাননা করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে সিপিএমের পতাকা না খুলে আমাদের পতাকা খোলা হয়েছে। এতেই এলাকার কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।”

পুলিশ তখনকার মতো পরিস্থিতি সামাল দিলেও রাত ৮টা নাগাদ ফের নির্বাচন দফতরের কর্মীরা লোকজন নিয়ে শিবতলায় রাস্তার পাশের বোর্ড থেকে তৃণমূলের দলীয় মুখপত্র ছিঁড়ে দেন। ছিঁড়ে ফেলা হয় সিপিএমেরও দলীয় মুখপত্র। এ নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল এবং সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আর এক প্রস্ত কথা কাটাকাটি হয় নির্বাচন দফতরের কর্মীদের। কিন্তু নির্বাচন দফতরের কর্মীদের সঙ্গে প্রচুর পুলিশ থাকায় উত্তেজনা বেশি দূর গড়ায়নি। তবুও এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করেছে জেলা প্রশাসন।

election commission tmc howrah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy