Advertisement
E-Paper

ফের বন্ধ কারখানা খোলার প্রতিশ্রুতি শিল্পাঞ্চলে

আবার ভোট, আবারও আশ্বাস! বন্ধ কারখানা খোলার কথাই বলছেন সবাই। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশটি কারখানা বন্ধ। ধুঁকছে অন্তত শতাধিক। ভোট এলেই সেই সব কারখানা খোলার প্রতিশ্রুতি শোনা যায় রাজনৈতিক দলের মুখে।

বিতান ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৪ ০০:৪১
বন্ধ টিটাগড়ের লুমটেক্স জুটমিল। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

বন্ধ টিটাগড়ের লুমটেক্স জুটমিল। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

আবার ভোট, আবারও আশ্বাস!

বন্ধ কারখানা খোলার কথাই বলছেন সবাই।

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশটি কারখানা বন্ধ। ধুঁকছে অন্তত শতাধিক। ভোট এলেই সেই সব কারখানা খোলার প্রতিশ্রুতি শোনা যায় রাজনৈতিক দলের মুখে। এ বারও সেই প্রতিশ্রুতি অকাতরে বিলোচ্ছে লাল, সবুজ, গেরুয়া সব দলই। জিতলেই নাকি বনবন করে ঘুরবে নামী-অনামী, মুখ থুবড়ে পড়া সব কারখানার চাকা!

রঙিন বসন্তে শিল্পাঞ্চলে শুরু হয়েছে ভোটের প্রচার। তাই সর্বত্র আবিরের ছড়াছড়ি। জনসংযোগের এমন মাধ্যম কে-ই বা ছাড়ে! দাদা-বৌদি, মাসিমা-মেসোমশাই বলে ডেকে তাঁদের গালে, কপালে বা পায়ে নিজের দলের রঙের আবিরটা ছুঁইয়ে ‘কাছের লোক’ করে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন কর্মী-সমর্থকেরা।

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এক কথায় মিনি ভারত। সব প্রদেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষের ঘন বসতি এখানে। পাশাপাশি এলাকায় থাকলেও বাসিন্দাদের ভাবনা থেকে চাহিদার ফারাক বিস্তর। কিন্তু মিল একটাই। সকলেই চান বন্ধ কারখানাগুলি খুলুক। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলায় এমনিতেই বিধিনিষেধের কারণে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করতে পারছে না রাজনৈতিক দলগুলি। তাই আপাতত শুধু হাসি মুখে হাত নেড়ে ভোট চাওয়া আর কর্মিসভার মধ্যেই নিজেদের ধরে রেখেছেন প্রার্থীরা। কর্মী-সমর্থকেরা জোর দিয়েছেন দেওয়াল লিখন আর প্রার্থীদের সমর্থনে ফ্লেক্স-পোস্টার লাগানোয়। আর এ ভাবে প্রচারের ফাঁকেই প্রার্থীরা বন্ধ কারখানা খোলার প্রতিশ্রুতি বিলোচ্ছেন। সবার কাছেই নাকি বন্ধ কারখানা খোলার চাবিকাঠি আছে।

ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদী নিজের জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী। তবে বুধবার প্রচারের শুরুতে বন্ধ কারখানার প্রতিশ্রুতিই তাঁকে কার্যত নির্বাক করেছে। এ দিন নৈহাটির গৌরীপুরে প্রচার চলাকালীন স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “গতবার তো পাঞ্জাবীর পকেটে কারখানা খোলার চাবি আছে বলেছিলেন। আমাদের দুর্দশা মিটবে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কোথায় গেল সেই চাবি?” দীনেশবাবু বলে চলেন, “কথা রেখেছি, অনেক কাজ করেছি। মানুষতো দুহাত তুলে আশীর্বাদ করেছেন। আরও কাজ করব। শিল্পের জমিতে শিল্প হবে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘সিপিএম কুত্‌সা করছে কিন্তু ব্যারাকপুর আমাদের জেতা আসন। হাওয়াও আমাদের অনুকূলে। তাই আর ভাবনা কী?”

তবে, নিজেদের খোওয়া যাওয়া আসন ফেরাতে মরিয়া সিপিএম। সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ বাহিনীর মহিলা কমান্ডার ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সায়গলের মেয়ে সুভাষিণী আলি এখানে সিপিএম প্রার্থী। দোলের আগে দিন তিনেক ছুটি নিয়েছিলেন। কিন্তু দোলের দিন রীতিমতো রং খেলেছেন আর তাঁর হয়ে প্যাকেট প্যাকেট লাল আবির বাতাসে উড়িয়ে সিপিএম কর্মীরা গেয়েছেন ‘উই শ্যাল ওভারকাম’। শ্যামনগরের কাউগাছি এলাকার যেখানে বাড়ি ভাড়া করে থাকছেন সেটি গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর কার্যত সিপিএম শূণ্য এলাকা। শূণ্য থেকেই শুরু করার ইচ্ছে তাঁর। কুলি লাইন, বস্তি, শিল্পাঞ্চলের ঘিঞ্জি অলি-গলিতে দিনভর ঘুরছেন। বন্ধ কারখানার চাবি যে তাঁর কাছেও আছে। লাল আবিরে হোলি খেলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলছেন, “কানপুরে পেরেছি, এখানেও পারব। সব থেকে বড় কথা উদ্যোগটাতো নেওয়া যায়। আপ্রাণ চেষ্টা করা যায়। দেখা যাক বন্ধ কারখানার চাকা ঘোরাতে পারি কি না।” কানপুরে কল-কারখানা নেহাত কম নয়। সুভাষিণী সেখানকার সাংসদও হয়েছিলেন। কিন্তু কানপুরে কারখানা কি খুলেছিল? জানা নেই কাঁকিনাড়ার রামা রাও, মইনুল ইসলাম, সদাশিব ঝা বা টিটাগড়ের নির্মলা রায়, রুকসানা বেগমদের। তাই যে আশ্বাস পনেরো বছর আগে স্বপ্ন দেখাতো দু’মুঠো ভাতের, যে আশ্বাস ঠা-ঠা রোদে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার শক্তি যোগাতো সেই আশ্বাসটাই এখন বড় দুর্বল।

অন্য দিকে, বিজেপি প্রার্থী রুমেশকুমার হান্ডা সল্টলেকের বাড়ি থেকেই ব্যারাকপুর নিত্য যাতায়াত করছেন। তাঁর ভাষণেও বন্ধ কারখানা খোলা আর উন্নয়নের বহু পরিকল্পনা। তবে যদি কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসে তবেই। কারণ তাঁর সাফ কথা, “সরকারি সহায়তা ছাড়া কারখানা খোলা, শ্রমিকদের স্বার্থ দেখা সম্ভব নয়।” গেরুয়া আবির রেখে দিয়েছেন। বলছেন, ‘‘জিতলে কথা রাখব। বসন্ত উত্‌সবও করব। তখন তা সে কাঠফাটা গরমই হোক বা ভরা বর্ষা!’’

জিতলে পরে কাঠফটা গরমেও বসন্ত যে ফিরবে তা রঙের কারবারিদের আবির মজুত করার উদ্যোগ দেখেই বোঝা যায়। টিটাগড়ের পাইকারি আবির বিক্রেতা সামশের আলি বলেন, “সব রাজনৈতিক দল থেকেই আবিরের বরাত দেওয়া আছে। অনেক নেতা তো আবার ভেষজ আবিরও চেয়েছেন।”

চাহিদা থাকায় আবিরের দাম যদি বেড়ে যায়?

কুছ পরোয়া নেই। বলছে সব রাজনৈতিক দলই।

workshop barrackpur bitan bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy