Advertisement
E-Paper

বেআইনি অস্ত্র কারখানার সন্ধান মিলল হাওড়ায়

পাড়ার আর পাঁচটা লেদ মেশিন কারখানার মতো দেখতে ছিল কারখানাটি। রাত জেগে কাজও করতেন কর্মীরা। অন্য পাঁচটা কারখানার মতোই দিনভর নানা ধরনের লোকদের আনাগোনা চলত। ঘুণাক্ষরেও কেউ কিছু সন্দেহ করেননি। শেষ পর্যন্ত ওই কারখানা থেকেই উদ্ধার হল অস্ত্র তৈরির কয়েক হাজার যন্ত্রাংশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৭:১১
উদ্ধার হওয়া যন্ত্রাংশের ভাণ্ডার। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

উদ্ধার হওয়া যন্ত্রাংশের ভাণ্ডার। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

পাড়ার আর পাঁচটা লেদ মেশিন কারখানার মতো দেখতে ছিল কারখানাটি। রাত জেগে কাজও করতেন কর্মীরা। অন্য পাঁচটা কারখানার মতোই দিনভর নানা ধরনের লোকদের আনাগোনা চলত। ঘুণাক্ষরেও কেউ কিছু সন্দেহ করেননি। শেষ পর্যন্ত ওই কারখানা থেকেই উদ্ধার হল অস্ত্র তৈরির কয়েক হাজার যন্ত্রাংশ।

বিহারের মুঙ্গের থেকে পাচার হওয়া অস্ত্র এর আগে উদ্ধার হয়েছে হাওড়া স্টেশন থেকে। এ বার খোদ হাওড়া শহরেই খোঁজ মিলল আস্ত এক অস্ত্র তৈরির কারখানার। সেই কারখানার হদিস অবশ্য প্রথম পেল পটনা থেকে আসা স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। তারাই খবর দেয় হাওড়া সিটি পুলিশকে। রবিবার দুপুরে হাওড়া সিটি পুলিশ ও স্পেশাল টাস্ক ফোর্স যৌথভাবে হানা দিয়ে হাওড়ার শানপুরের রেড রোডে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গলির মধ্যে ওই অস্ত্র কারখানার খোঁজ পায়। ওই গলিতে একটি লম্বা জমিতে পরপর ১০-১২টি লেদ মেশিনের কারখানা রয়েছে। তার মধ্যেই ছিল এই অস্ত্র কারখানাটি। ঘটনাচক্রে, যিনি ওই কারখানা-ঘরটি ভাড়া দিয়েছিলেন, তিনি সিপিএমের স্থানীয় নেতা। তাঁর অবশ্য দাবি, তিনি বা তাঁর স্ত্রী— কেউই কারখানাটির ব্যাপারে কিছু জানতেন না। যাঁকে কারখানাটি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল, তাঁর খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার মুঙ্গের থেকে পটনা এসটিএফ শেখ সরফরাজ নামে এক অস্ত্র পাচারকারীকে গ্রেফতার করে। তার থেকে ৫০০টি পিস্তল উদ্ধার হয়। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, অধিকাংশ অস্ত্রের যন্ত্রাংশ হাওড়ার শানপুর থেকে তৈরি হয়ে আসত মুঙ্গেরে। ওই শানপুরেই তৈরি হত নাইন এম এম এবং ওয়ান শটার। হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বিহার পুলিশের পাঁচ সদস্যের একটি দল হাওড়া পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দুপুর ১টা নাগাদ শানপুরে ওই কারখানায় যৌথ অভিযান চালানো হয়। উৎপল চৌধুরী নামে এক ব্যক্তিকে কারখানাটি ভাড়া দিয়েছিলেন স্বপন পাখিরা নামে এক ব্যক্তি। পুলিশ স্বপনবাবুর কাছ থেকে চাবি নিয়ে কারখানা খুলে উদ্ধার করে অস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশ।

স্বপনবাবু সিপিএম দাশনগর জোনাল কমিটির নেতা। তাঁর স্ত্রী প্রণতিদেবী হাওড়া পুরসভার দু’বারের প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর। তাঁদের অবশ্য দাবি, অস্ত্র কারখানার ব্যাপারে তাঁরা কিছুই জানতেন না। পুলিশকে স্বপনবাবু জানিয়েছেন, আমতার বাসিন্দা উৎপলবাবু মাসিক ১০০০ টাকায় ঘরটি ভাড়া নিয়েছিলেন লেদ মেশিন কারখানা খোলার জন্য। স্বপনবাবু বলেন, “ছেলেটিকে দেখে ভাল বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু ওই কারখানায় যে অস্ত্র তৈরি হবে, তা জানতাম না। তবে, এটা আমাদের ব্যর্থতা।” এলাকার এক বাসিন্দা শীতল হাজরা বলেন, “উৎপলবাবু মাঝরাত পর্যন্ত কারখানা চালাতেন। নিত্যদিন বিভিন্ন লোকের আনাগোনা লেগে থাকত। তবে ওখানে যে অস্ত্র তৈরি হত, তা টের পাওয়া তো দূর অস্ৎ, সন্দেহও করিনি।” উল্লেখ্য, গত বছরের ২৭ মে বাঁকড়ার খানপাড়ায় পাঁচটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স উদ্ধার করেছিল এমনই অস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশ।

এ ব্যাপারে হাওড়া পুলিশের এডিসি (সাউথ) জয়িতা বসু বলেন, “হাওড়া সিটি পুলিশ ও বিহার পুলিশের যৌথ অভিযানে এই অস্ত্র কারখানার হদিস মিলেছে। এই খবর আমাদের কাছে আগে ছিল না। বিহার পুলিশের কাছ থেকেই প্রথম পাই। এখন থেকে মাঝেমধ্যেই লেদ মেশিনের কারখানাগুলিতে তল্লাশি চালানো হবে।”

arm factory howrah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy