আমদানি ১৫ হাজার, খরচা ৫০ হাজার!
এক মাস ধরে সেই আমদানিও বন্ধ। তাই ‘সাদা হাতি’ আর পুষবে না বলে ভাবছে তার মালিক। এ ক্ষেত্রে সাদা হাতি অবশ্য পুরসভা পরিচালিত একটি বাজার। মালিক বালি পুরসভা।
বালির এই পুর-বাজারটি নিয়ে এখন টানাপড়েন শুরু হয়েছে ব্যবসায়ী ও পুর-কর্তৃপক্ষের মধ্যে। রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার অভিযোগ তুলে এক মাস ধরে দৈনিক কর দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত ১১ মার্চ থেকেই তা বন্ধ। পুর-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, “বাজার রক্ষণাবেক্ষণে মাসে যে খরচ হয়, তার অর্ধেক আয়ও হয় না। তা সত্ত্বেও এত দিন ধরে বিপুল খরচ বয়ে চলেছে পুরসভা। তার উপরে এক মাস ধরে কর দেওয়া বন্ধ হওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে।” বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি বৈঠকও ডেকেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
পুরসভা সূত্রের খবর, বালি গোস্বামী পাড়ায় প্রায় কুড়ি কাঠা জমির উপরে রয়েছে দোতলা এই বালি পুর বাজার। প্রথমে ফাঁকা মাঠে এই বাজার বসত। ১৯৯২ সালে তৎকালীন পুরপ্রধান সত্যপ্রকাশ ঘোষ উদ্যোগী হয়ে পাকা বাজার তৈরি করেন। সেখানে প্রতিটি ব্যবসায়ীকে পাকা স্টল করে দেওয়া হয়। বাজারে দু’টি ব্লক রয়েছে। একতলায় ‘এ’ ব্লকে রয়েছে সব্জি ও ফলের দোকান। পাশে ‘বি’ ব্লকে রয়েছে মাছ, সব্জি ও ফুলের দোকান। সব মিলিয়ে ২০০ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন এই পুর বাজারে। দোতলাটি কয়েকটি সংস্থাকে ভাড়ায় দেওয়া হয়েছে।
বাজারটির ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই বাজারের বিল্ডিংটির রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। দোতলার নোংরা জল নীচে পড়ছে। ১৪টি গেট থাকলেও তার অধিকাংশ অকেজো। শৌচাগারের অবস্থা বেহাল। সাফাই ঠিক মতো হয় না। যদিও পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, কয়েকটি পাইপ লিক করে জল পড়া ছাড়া তেমন কোনও অসুবিধা নেই। বাজারের সম্পাদক নারায়ণ কোলে বলেন, “বহুবার আমাদের অভিযোগ শোনার আশ্বাস দিয়েও পুর-কর্তৃপক্ষ শোনেননি। মাঝে একবার কর দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এ বারও তাই করেছি, কর্তৃপক্ষকে জব্দ করার জন্য।” তিনি জানান, কয়েক মাস আগে বাজার সমিতিকে না জানিয়েই কর বাড়িয়েছে পুরসভা।
পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, পুর বাজারের ব্যবসায়ীদের থেকে দৈনিক কর সংগ্রহ করা হয়। দু’শো জন ব্যবসায়ীর মধ্যে ৪৪ জনের থেকে ৪ টাকা, ১৪০ জনের থেকে ২ টাকা এবং ১৬ জনের থেকে ৩ টাকা করে দৈনিক ৫০৪ টাকা কর নেওয়া হয়। অর্থাৎ, মাসে ১৫ হাজার ১২০ টাকা কর সংগ্রহ করে পুরসভা। কিন্তু বাজার রক্ষণাবেক্ষণে মাসে খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। পুরসভা সূত্রের খবর, এক জন কর সংগ্রহকারী কর্মীকে মাসে বেতন দিতে হয় ১৬ হাজার টাকা। তিনি যে দিন ছুটিতে থাকেন, সে দিন অন্য লোক যায়। তার জন্য বরাদ্দ ২১৩২ টাকা। দু’জন সাফাইকর্মী মাসে প্রায় ৩২ হাজার টাকা বেতন পান। তার সঙ্গে সাফাইয়ের ফিনাইল, ব্লিচিং বাবদ মাসে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়।
নারায়ণবাবু বলেন, “প্রতি মাসে ২৩-২৪ হাজার টাকা বিদ্যুতের বিল আমরা মেটাই। তার পরেও কেন এমন হবে?” পুর প্রধান অরুণাভ লাহিড়ী বলেন, “আগে বিদ্যুতের বিলটাও আমরা দিতাম। কয়েক বছর যাবৎ তা বন্ধ হয়েছে। তেমন কোনও ভাঙাচোরা নেই। তা-ও ওঁরা অভিযোগ তুলে কর দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।” তবে এ বার পুরসভা অন্য চিন্তাভাবনা শুরু করেছে বলেও দাবি পুর প্রধানের।
পুরসভার এক অফিসার বলেন, “বেলুড় বাজারটি ব্যবসায়ীদের হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে। ওঁরাই সব করেন। মাসে ৯ হাজার টাকা মতো পুরসভাকে দেয়। বালির ক্ষেত্রেও এমনটাই করতে হবে। নয়তো কোনও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy