Advertisement
১৭ মে ২০২৪

বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে এগিয়ে বিজেপি, চাপে তৃণমূল নেতৃত্ব

লোকসভা নির্বাচন শেষ হতে না হতেই ভোটের দামামা বাজল বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে। গত ১০ এপ্রিল সিপিএমের বিধায়ক নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে আসনটি খালি হয়েছে। ছ’মাসের মধ্যে উপনির্বাচন হওয়ার কথা। এ দিকে, রাজ্যজুড়ে প্রবল তৃণমূল হাওয়ার মধ্যেও বিজেপি যে সব আসনে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে, তার মধ্যে আছে এই কেন্দ্রটিও।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০১:০৩
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচন শেষ হতে না হতেই ভোটের দামামা বাজল বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে। গত ১০ এপ্রিল সিপিএমের বিধায়ক নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে আসনটি খালি হয়েছে। ছ’মাসের মধ্যে উপনির্বাচন হওয়ার কথা। এ দিকে, রাজ্যজুড়ে প্রবল তৃণমূল হাওয়ার মধ্যেও বিজেপি যে সব আসনে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে, তার মধ্যে আছে এই কেন্দ্রটিও। বিধানসভা ভিত্তিক ভোটের নিরিখে বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছে বিজেপি। এই কেন্দ্রে বিজেপির শমীক ভট্টাচার্যের প্রাপ্ত ভোট ৭৬,৫৭৭। সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী ইদ্রিস আলি পেয়েছেন মাত্র ৪৬,৩৫৪টি ভোট। ফলে বসিরহাট দক্ষিণে ৩০,২২৩ ভোটের ব্যবধানে বিজেপি জয়ী হওয়ায় চিন্তার চওড়া ভাঁজ পড়েছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কপালে।

কী ভাবে বিজেপি এতটা ভোট পেল এই আসনে, তার চুলচেরা হিসাব-নিকেশ নিয়ে এখন ব্যস্ত তৃণমূল নেতৃত্ব। গত আটটি বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে টানা জয়ী হয়েছেন নারায়ণবাবু। তাঁর মৃত্যুতে কি এমন হল যে রাতারাতি পাল্টে গেল মানুষ যে বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিল? সিপিআই প্রার্থী নুরুল হুদা এই কেন্দ্রে ৪২,৩৩৬টি ভোট পেয়ে আছেন তৃতীয় স্থানে। কী ভাবে এই বিপুল পরিমাণ ভোট বিজেপির ঝুলিতে গেল, তার বিশ্লেষণে বসে ভেবে বামপন্থীদেরও কপালে ঘাম ঝরছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রের জয়ী সিপিএম প্রার্থীর মৃত্যুর পরে উপনির্বাচনে তৃণমূল জয় হয়। এ বার তা হলে কী বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রটিও হাত ছাড়া হতে চলেছে বামেদের?

একটা সময়ে শক্ত ঘাঁটি বসিরহাটে এ বার চতুর্থ স্থান দখল করা কংগ্রসের কাজি আব্দুর রহিম দিলু এই কেন্দ্রে মাত্র ২৪,৬২৬টি ভোট পেয়েছেন। দলীয় নেতারা বুঝে উঠতে পারছেন না, পঞ্চায়েত-ব্লক এমনকী বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত দু’টি (টাকি এবং বসিরহাট) পুরসভাতেও বিজেপির কোনও আসন না থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে তারা বাকিদের থেকে এতটা এগিয়ে গেল।

২০০৯ সালে বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে নারায়ণবাবু ৬৬,৯১৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের নারায়ণ গোস্বামী জোট প্রার্থী হয়ে লড়াই করে ৫৪,৫১৪ ভোট পান। টিকিট না পাওয়ায় কংগ্রেস নেতা অসিত মজুমদার নির্দল হয়ে লড়তে নেমে ৫২,৪৮৪ ভোটে দৌড় শেষ করেন। অন্য দিকে, বিজেপির হাজারীলাল সরকার পেয়েছিলেন মাত্র ৭,২৮২টি ভোট। ধরে নেওয়া যেতেই পারে, সিপিএমের ঘর থেকে প্রায় কয়েক হাজার ভোট কেটেছে বিজেপি।

প্রাথমিক ভাবে এর কী কারণ মনে করছেন বিভিন্ন দলের নেতারা?

সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, বিজেপিকে ঠেকাতে প্রয়োজনে তৃণমূলকে ভোট দিন বামপন্থী নেতাদের এই প্রচারে হিতে বিপরীত হয়েছে। এ-ও প্রচার করেছে বামেরা, তৃণমূলকে আটকাতে বিজেপিকে ভোট দিন। বামেদের ধারণা ছিল, সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক অটুট রেখে বিজেপিকে ঠেকানোর পাশাপাশি এ ভাবে তৃণমূলকেও রোখা যাবে। আখেরে ভোট কাটাকাটিতে সুবিধা পাবে বামেরা। কিন্তু বাস্তবে ফল হয়েছে উল্টো। প্রায় নখদন্তহীন বিজেপি বামেদের ভোট কেটে রীতিমতো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে।

তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমরা পরিস্থিতি বিশ্লেষণের চেষ্টা করছি।” অন্য দিকে, স্থানীয় বাম নেতৃত্বের একাংশের মতে, “রাজ্য জুড়েই বিজেপি হাওয়া। তার উপরে মমতার সরকারের উপরে মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়ছে। সেই জায়গাটা বামেরা নিতে পারেনি। বিজেপিকেই আশ্রয় হিসাবে খুঁজে নিয়েছেন হিন্দু-মুসলিম ভোটারেরা।”

শমীক ভট্টাচার্যকে ইতিমধ্যেই উপ নির্বাচনে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে উপর মহলে প্রস্তাব গিয়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের তরফে। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, রাজ্য সরকারের বহু ব্যাপারে মানুষ ক্ষুব্ধ। কিন্তু বামেদের তাঁরা আর বিকল্প বলে ভাবতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে হিন্দু ভোট তো বটেই, সংখ্যালঘু ভোটের একটা বড় অংশও এ বার তাঁদের ঝুলিতেই এসেছে। সামনের উপ নির্বাচনে তাঁরা যে কড়া টক্কর দেবেন, তা এখনই সোজাসাপ্টা বলে রাখছেন বিজেপি নেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nirmal basu basirhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE