Advertisement
E-Paper

ভোটের বাজারেও খুলল না শিল্পাঞ্চলের জমিজট

কাছেই কলকাতা। একাধিক সড়ক সংযোগ, রেলপথ, জলপথ, সবই মজুত। নেই কেবল বিনিয়োগ। ব্যারাকপুরে প্রচার করতে এসে সব দলের প্রার্থীরাই শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে সাতকাহন শোনাচ্ছেন। কিন্তু কেন হচ্ছে না নতুন শিল্প, সে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না কেউ। এমনকী ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ, এবারের তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীও প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে বললেন, “ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল নিয়ে সরকার চিরকালই আশাবাদী।’’

বিতান ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০১:৪১

কাছেই কলকাতা। একাধিক সড়ক সংযোগ, রেলপথ, জলপথ, সবই মজুত। নেই কেবল বিনিয়োগ।

ব্যারাকপুরে প্রচার করতে এসে সব দলের প্রার্থীরাই শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে সাতকাহন শোনাচ্ছেন। কিন্তু কেন হচ্ছে না নতুন শিল্প, সে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না কেউ। এমনকী ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ, এবারের তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীও প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে বললেন, “ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল নিয়ে সরকার চিরকালই আশাবাদী।’’ সিপিএম প্রার্থী সুভাষিণী আলি গোড়ায় বন্ধ শিল্প খোলার কথা বললেও, পরে নতুন শিল্পের প্রতিশ্রুতির বাইরে বেরোচ্ছেন না। কংগ্রেসের সম্রাট তপাদার, বিজেপির রুমেশ কুমার হান্ডাও বলছেন নতুন শিল্পের কথা।

কিন্তু কেন হচ্ছে না শিল্প? পতিত জমি থাকতেও সোনা ফলছে না কেন?

ভোটের রাজনীতি সে প্রশ্নকে পাশ কাটালেও, উত্তর দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। শিল্প না হওয়ার কারণ, জমি জট। শিল্প তালুকের জন্য চিহ্নিত কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে জমি কিনেও ফেলে রেখেছেন প্রায় সাত হাজার বিনিয়োগকারী। তৈরি হয়নি শিল্প।

সমস্যা ঠিক কোথায়?

আইন অনুযায়ী, যে শিল্প তৈরি করতে হবে ‘ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ল্যান্ড’-এ। তবেই ছাড়পত্র মিলবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, বিদ্যুৎ ও দমকলের। কিন্তু বাম আমলে কল্যাণী শিল্পাঞ্চলের দু’ধারে সম্প্রসারিত এলাকা ‘ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল’ ঘোষিত হলেও সরকারি ভাবে জমির চরিত্র বদল (কনভারশন) হয়নি। ফলে ডাঙা, বাস্তু বা জলা জমি হিসাবেই ভূমি সংস্কার দফতরের খাতায় সেগুলি চিহ্নিত আছে। দ্রুত এই জট কাটার আশ্বাস দিয়েছিল পূর্বতন বাম সরকার। শিল্পের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়েছিল। নিমতা থেকে কল্যাণী পর্যন্ত প্রায় গোটাটাই পঞ্চায়েত এলাকা হওয়ায় করের ক্ষেত্রেও মোটা টাকা ছাড়ের ব্যবস্থাও ছিল। বড় শিল্প এই আশ্বাসে বিশ্বাস না করলেও, ছোট শিল্প এগিয়ে এসেছিল সেই সময়। কিন্তু কারখানা চালু করতে গিয়ে নিয়মের বেড়াজালে নাভিশ্বাস ওঠার দশা হয়েছে শিল্পোদ্যোগীদের। জমির চরিত্র না বদলালে দমকল ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র মিলবে না, আর জমির চরিত্র বদল হবে না ওই ছাড়পত্র না মিললে-- এই গোলকধাঁধায় আটকে এখনও অধিকাংশ বিনিয়োগকারী। তাঁদেরই একজন জানালেন, ছোট বা মাঝারি কারখানার জমির চরিত্র বদলের জন্য বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী গড়ে দশ লক্ষ টাকার ধাক্কা। অধিকাংশ ছোট শিল্পের বিনিয়োগকারী ঋণ নিয়ে জমি কিনে নির্দিষ্ট সময়ের কারখানা চালু করার কথা ভাবেন। বাড়তি খরচের বোঝা চাপার ফলে জমি কিনে, বা কারখানার নির্মাণের কাজ শুরু করেও ফেলে রেখেছেন। কেউ কেউ অবশ্য এ সবের তোয়াক্কা না করেই কারখানা চালু করেছেন। তবে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য বাড়তি সতর্কতা রাখতে হচ্ছে।

এই জমিজট ছাড়াতে লড়াই চলছেই। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ঘোলার কাছে ১৬০টি কারখানা নিয়ে গড়ে-ওঠা তালবান্দা-বোদাই ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এস্টেটের পক্ষ তৎকালীন অর্থ ও শিল্প মন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের দ্বারস্থ হন। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অসীমবাবু বলেন, ‘‘নতুন গড়ে ওঠা শিল্পাঞ্চলে জমির চরিত্র বদলের বিষয়টি আমাদের মাথায় ছিল। কাজও হচ্ছিল।’’ প্রতিকূলতা ক্রমে কাটছিল বলেই তাঁর দাবি। আর বর্তমান শিল্প মন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, ‘‘এখানেই শিল্প হবে। বন্ধ কারখানা খোলার দিকে আমাদের যেমন নজর আছে, তেমনই কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধার বরাবর সুন্দর একটি শিল্পাঞ্চল করার সুষ্ঠু পরিকল্পনা আছে।’’

মন্ত্রী থাকাকালীন অসীমবাবুর বিধানসভা এলাকা, যা কিনা এখন অমিত মিত্রের এলাকা, সেই খড়দহে ১৮টি নতুন কারখানা নিয়ে গড়ে উঠেছিল খড়দহ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। তার সম্পাদক রুনু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমাদের মতো বিনিয়োগকারীদের অবস্থা সঙ্গীন। বড় শিল্পের উপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। জমিজটের কারণে বড় শিল্প না আসায় আমরা প্রচুর টাকা দেনা করে কারখানা চালিয়েও উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারছি না। রাজ্যের বাইরে পাঠানোর যে বিপুল খরচ তা সামাল দিতে গিয়ে মুনাফা থাকছে না।” তাঁর আক্ষেপ, কখনও কখনও কর্মীদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। শিল্প এলাকার উন্নয়নেও ব্যবসায়ীদেরই এগোতে হয়েছে। “রাস্তা, নিকাশি, বিদ্যুৎ, এমনকী রাস্তার আলোও আমরা করেছি। তার উপর বিভিন্ন সময়ে চাঁদার উপদ্রব আছেই। সরকারের কি কোনও ভূমিকা ছিল না?’’ উত্তর ২৪ পরগণার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) ভি ললিতালক্ষ্মী বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে বলতে পারব’’

শ্যামনগর, নৈহাটি, হালিশহরে কারখানার জন্য কেনা জমি পড়ে আছে অগুণতি। রাজ্যে তৃণমূল সরকার গড়ার পর তখনকার শিল্প মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নৈহাটি ও কল্যাণীতে ‘ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল হাব’ করার কথা বলেছিলেন। তাঁর আশ্বাস সত্ত্বেও ছোট-বড় শিল্প এগিয়ে আসেনি।

শিল্পের অভাব যতই থাকুক, অভাব নেই প্রতিশ্রুতির। দীনেশবাবু স্বপ্ন দেখছেন মুখ্যমন্ত্রীর ‘ভিসন ২০-২০’-র। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে হোগলার গুমটিতে বসে গলার তেরঙা উত্তরীয়তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিটা দেখতে দেখতে বললেন, ‘‘জিতলে প্রথম প্রতিশ্রুতি, শিল্পের জন্য জমি জট কাটাবো। আর প্রথম চ্যালেঞ্জ, এই রাস্তা দিয়েই মেট্রো চালাবো একদম কল্যাণী পর্যন্ত। দেখি কে আটকায়?’’

bitan bhattacharya barrackpore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy