Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ভোটযন্ত্রের কাছে নিয়ে গিয়ে ওদের বোতাম টেপাল

সিপিএম গিয়েছে, তৃণমূল এসেছে। কিন্তু আরামবাগ রয়েছে আরামবাগেই। ‘ভোটটা ঠিক করে দেবেন কাকিমা’ বলে নিজেই ব্যালটে ছাপ মেরে দেওয়ার অভিযোগ উঠত অনিল বসুর ছেলেদের বিরুদ্ধে। এ বার নির্বাচন কমিশনের হাজার বরাভয় সত্ত্বেও তৃণমূলের ছেলেরা ভোটদাতার ঘাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে, চোখ পাকিয়ে, আঙুল ধরে ইভিএমের বোতামে গুঁজে দিয়ে ভোট ‘করল’ বলে অভিযোগ।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০৩:১২
Share: Save:

সিপিএম গিয়েছে, তৃণমূল এসেছে। কিন্তু আরামবাগ রয়েছে আরামবাগেই।

‘ভোটটা ঠিক করে দেবেন কাকিমা’ বলে নিজেই ব্যালটে ছাপ মেরে দেওয়ার অভিযোগ উঠত অনিল বসুর ছেলেদের বিরুদ্ধে। এ বার নির্বাচন কমিশনের হাজার বরাভয় সত্ত্বেও তৃণমূলের ছেলেরা ভোটদাতার ঘাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে, চোখ পাকিয়ে, আঙুল ধরে ইভিএমের বোতামে গুঁজে দিয়ে ভোট ‘করল’ বলে অভিযোগ।

২০০৯-এর লোকসভা ভোটে রাজ্য প্রথম টের পেয়েছিল, কমিশনের নজরদারি কাকে বলে। ২০১১-র বিধানসভা ভোট হয়েছিল নজিরবিহীন নিরাপত্তায়। কিন্তু এ বারের পরিস্থিতির সঙ্গে অনেকেই মিল পাচ্ছেন ২০০৪-এর লোকসভা ভোটের। কয়েকটি বুথ ছাড়া কোথাও বিরোধী পোলিং এজেন্ট ছিল না। তফাত একটাই সে সময় তৃণমূল ময়দান না ছাড়ায় রক্তপাত এবং বোমাবাজিতে অশান্ত হয়েছিল মহকুমা। আর এ বার সিপিএম সে পথে হাঁটেনি (দু’-একটি ক্ষেত্র ছাড়া)।

সকাল ৯টার পর থেকেই তৃণমূল বুথ দখল করে রিগিং শুরু করে বলে অভিযোগ বামেদের। এই কেন্দ্রে মোট বুথ ২,০৫৩। তার মধ্যে ৫৪০টি বুথের কোনওটি তৃণমূল দখল করে, কোনওটি থেকে দলের পোলিং এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয় বলে কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে সিপিএম। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল।

খানাকুলের অতুলচন্দ্র বিদ্যালয়ে বেলা ১২টা নাগাদ ভোট দিতে আসেন এক মহিলা। এসে শোনেন, ভোট হয়ে গিয়েছে। তাঁর বিষ্ময়, “তৃণমূলের ছেলেরা বলল, ভোট হয়ে গিয়েছে।” আঙুলে ভোটের কালি লাগিয়েও আরামবাগের নৈসরাইয়ের এক নম্বর বুথ থেকে বেরিয়ে এক প্রৌঢ় বলেন, “কালি মাখানোর পরেই এক তৃণমূল নেতা আমাকে ভোট-যন্ত্রের সামনে নিয়ে গিয়ে ওদের প্রতীকেই বোতাম টেপাল।” গোঘাটের বিরামপুরের ২০৬ নম্বর বুথে এবং খানাকুলের ধরমপুরের ১১২ বুথেও তৃণমূল একই কায়দায় ভোট করে বলে অভিযোগ।

তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে দুপুর ১টা নাগাদ তিরোল পঞ্চায়েতের চণ্ডীবাটি গ্রামে সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা লাঠি-ঝাঁটা নিয়ে ভোটকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ দেখান। আরামবাগের মইগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭ নম্বর বুথে তিরোল পঞ্চায়েতের ঝর্ণা সিংহ নামে এক তৃণমূল সদস্য দাঁড়িয়ে থেকে ভোট করাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। সেই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই মহিলার নামে এফআইআর করা হয়। সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসার অরুণকুমার নন্দীকে পরে অপসারণ করা হয়। গোঘাটের জয়কৃষ্ণপুরের ২৩৬, ২৩৭ নম্বর বুথে ঢোকার মুখে সিপিএমের দুই এজেন্টকে মারধর, খানাকুলের মহিষগোটে সিপিএমের তিন বুথ এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। খানাকুলের ঘাসুয়ার ১৫ নম্বর বুথ এবং ১৬ নম্বর বুথে তৃণমূলের ‘তাণ্ডবে’ সিপিএম সমর্থকেরা ভোট না দিয়ে পালান। ভোটের শেষ দিকে আবার সিপিএমের বিরুদ্ধে আরামবাগ এবং গোঘাটে তৃণমূলের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে।

মঙ্গলবার রাতে খানাকুল ও সংলগ্ন আরামবাগের সালেপুর-২, গৌরহাটি পঞ্চায়েত-সহ বেশ কিছু জায়গায় ভোট না দেওয়ার হুমকির অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “আরামবাগে ভোট হয়নি। ওখানে ভোটকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে।” আরামবাগের সিপিএম নেতা বিনয় দত্তের ক্ষোভ, “প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে এজেন্ট দিতে পারতাম। কিন্তু তা না থাকায় সব জায়গায় এজেন্ট দেওয়া যায়নি। সে সুযোগ নিয়েছে তৃণমূল।”

যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে হুগলির তৃণমূল জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তের দাবি, “সন্ত্রাস বা বুথ দখল করেছি বলে কেউ কী প্রমাণ করতে পারবে? এত দিন তো সিপিএমই সন্ত্রাস করেছে। এ দিনও দু’জায়গায় ওরা আমাদের ছেলেদের মেরেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gautam bandyopadhyay piyush nandi poll
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE