Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ভ্যানের দাপটে গতি কমছে যশোহর রোডে

শুধু জাতীয় সড়কই নয় রীতিমতো আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যম হল যশোহর রোড। সেই রাস্তা ধরে এয়ারপোর্ট ছাড়িয়ে বনগাঁর বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে যেতে গেলেই বার বার গাড়ির গতি কমবে যে জন্য, তার একটি বড় কারণ, ভ্যান রিকশা। তার পিছন পিছন ঢিমেতালে তালে-তাল মিলিয়ে চলতে হবে ঢাকা-কলকাতা বাস কিংবা মন্ত্রীসান্ত্রীর গাড়িকেও। প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ। ভাগ্য ভাল থাকলে সেই পথে ঘণ্টা দেড়েক শুধু চলে যাবে যানজটেই। বছরের পর বছর দস্তুর এটাই।

হাবরায় যানজট প্রতি দিনের ঘটনা।

হাবরায় যানজট প্রতি দিনের ঘটনা।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৪ ০১:২০
Share: Save:

শুধু জাতীয় সড়কই নয় রীতিমতো আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যম হল যশোহর রোড। সেই রাস্তা ধরে এয়ারপোর্ট ছাড়িয়ে বনগাঁর বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে যেতে গেলেই বার বার গাড়ির গতি কমবে যে জন্য, তার একটি বড় কারণ, ভ্যান রিকশা। তার পিছন পিছন ঢিমেতালে তালে-তাল মিলিয়ে চলতে হবে ঢাকা-কলকাতা বাস কিংবা মন্ত্রীসান্ত্রীর গাড়িকেও। প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ। ভাগ্য ভাল থাকলে সেই পথে ঘণ্টা দেড়েক শুধু চলে যাবে যানজটেই। বছরের পর বছর দস্তুর এটাই।

অথচ, এই যশোহর রোডের যানজট ঠেকাতে সর্বদল সভা, বৈঠক, সচেতনতা শিবির অনেক কিছুই করেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ-প্রশাসন। সেই সব আলোচনায় উঠে আসে, যশোহর রোডে যানজটের মূল কারণ ভ্যানরিকশাই। সিদ্ধান্ত হয়, এই জাতীয় সড়কে কোনও ভাবেই ভ্যানরিকশা উঠতে দেওয়া যাবে না। মাস কয়েক আগে বেশ কিছু দিন মূল রাস্তাগুলিতে ভ্যান রিকশা ওঠা বন্ধ করেছিল পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু কিছু দিন নজরদারির পরেই তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুরনো অবস্থায় ফিরে গিয়েছে ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক।

জেলার ডিএসপি (ট্র্যাফিক) সুভাষ ঘোষ অবশ্য বলেন, “যশোহর রোড-সহ জেলার সদর রাস্তাগুলিতে ভ্যান রিকশা ওঠা বন্ধ করা হয়েছিল। নির্বাচন-সহ কিছু কারণের জন্য সেই নজরদারি জারি রাখা যায়নি। ফের ভ্যান রিকশা ওঠা বন্ধ করা হবে।”

এই এক ভ্যান রিকশার সমস্যার জেরেই ত্রাহি রব উঠেছে বারাসত, মধ্যমগ্রাম, হাবরা এবং বনগাঁ শহরে। ঠিক কত ভ্যান রিকশা রয়েছে, তার ঠিকঠাক হিসেবও নেই পুরসভাগুলির কাছে। যশোহর রোডে গেলেই প্রতিদিন দেখা মিলবে একটি দৃশ্যের। সামনের রাস্তা ফাঁকা। মাল বোঝাই ভ্যানরিকশা চলছে ধীর গতিতে। তার পিছনে চলছে উত্তরবঙ্গের রকেট কিংবা ঢাকা-কলকাতার মতো ‘সুপার ফাস্ট’ বাসগুলি। তৈরি হচ্ছে যানজট। তার পাশেই ভ্যানরিকশা এলোমেলো ভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। ফলে সংকীর্ণ হয়ে আসা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে ছোট-বড় গাড়িকে।

বনগাঁর রাস্তাও ভ্যানের দখলে।

বারাসত থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে আমডাঙা, কৃষ্ণনগর হয়ে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার রাস্তাতেও একই সমস্যা। বারাসত থেকে যশোহর রোড আবার হাবরা-বনগাঁ হয়ে চলে যাচ্ছে পেট্রোপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে। কলকাতা যাতায়াতের জন্য প্রতিদিন এয়ারপোর্ট থেকে বারাসত পর্যন্ত এই ১২ কিলোমিটারের একমাত্র রাস্তাটি পার হতে হয় ওই দু’প্রান্তের যাত্রীদের। এর পাশাপাশি সোদপুর, মধ্যমগ্রাম, দমদম সহ বনগাঁ ও বসিরহাট থেকে বারাসত পর্যন্ত সমস্ত বাসিন্দাদের ধরতে হয় এই পথ।

হাবরা শহরে যেমন ১ নম্বর গেট থেকে জয়গাছি মোড় পর্যন্ত মাত্র ২ কিলোমিটার পথ পেরোতে কত সময় লাগবে, তার হিসেবই থাকে না। রাস্তার দু’পাশে নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে ভ্যান রিকশা। একই অবস্থা বনগাঁ শহরেও। ১ নম্বর গেট থেকে বাটার মোড় পর্যন্ত প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা হয় স্কুল, কলেজের সময়ে।

অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দিয়ে ভ্যান রিকশার যাতায়াত এবং দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়েও হেলদোল নেই প্রশাসনের। অভিযোগ, উল্টে রাস্তার পাশে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি ও ভ্যান রিকশা থেকে বিভিন্ন মোড়ে-মোড়ে জরিমানার নামে ‘তোলা আদায়’ ছাড়া আর কিছুই করতে দেখা যায় না পুলিশকেও। আবার পুরসভার বিরুদ্ধে পাল্টা দোষারোপ করেছে পুলিশও। যশোহর রোডে ট্র্যাফিক পয়েন্টের পুলিশ কর্মীরা জানালেন, কখনও পণ্য নিয়ে, কখনও লম্বা বাঁশ নিয়ে ধীর গতিতে চলতে থাকে ভ্যান-রিকশা। দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। লম্বা বাঁশ অনেকটা জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে থাকে বলে দুর্ঘটনাও হয়। এক পুলিশকর্মীর কথায়, “রাস্তার বেশির ভাগ ভ্যান রিকশার লাইসেন্স নেই। তাদের আটক করার পরে সংশ্লিষ্ট পুরসভাকে জানানো হয়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টে ছেড়ে দিতে হয়। সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের যশোহর রোডে ভ্যান রিকশা বন্ধের কথা বলা হলেও কাজ কিছুই হয়নি।”

পুরসভা ও পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন ভ্যানচালকেরাও। বারাসতের ভ্যানচালক রবি সরকারদের বক্তব্য, “মানুষ বাধ্য হয়েই ভ্যান রিকশায় ওঠেন। আমরাও পেটের তাগিদে ভ্যান চালাই।” হাবরার ভ্যানচালক সুকুমার দাসের আবার দাবি, “ভ্যান চলাচল বন্ধ করে সকলে যদি হেঁটেও যাতায়াত করে তাতেও যানজট হবে। নতুন রাস্তা তৈরি হবে না আর সব দোষ হবে ভ্যানওয়ালাদের!”

এই টানাপোড়েন, দোষারোপ আর পাল্টা দোষারোপ চলছেই। আর এর মধ্যে পড়ে প্রতিদিন যানজটে ভুগছেন এই পথের যাত্রীরাই।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arunaksha bhattacharya habra traffic jam bangaon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE