Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
পথে প্রচার

মাইক গাড়িতে, ‘বাপ্পিদা’র গান গাওয়া হল না

শ’দুয়েক লোকের ভিড়টা অপেক্ষা করছিল বেলা সাড়ে ৩টে থেকে। অধৈর্য ভিড়টা বারবারই জানতে চাইছিল, “কখন আসবেন দাদা?”কিন্তু, কোথায় তিনি?জানা গেল, দাদা পুজো দিতে ব্যস্ত দক্ষিণেশ্বরে। ‘ইন্তেজার’-এর ‘ইন্তেহাঁ’ শেষে যখন তিনি এলেন, সূর্য তখন প্রায় পাটে যাচ্ছে। দূর থেকে সাদা গাড়িটা দেখেই উত্তরপাড়ার গৌরী সিনেমা হলের সামনে দাঁড়িয়ে চৈত্রের গরমে ঘেমেনেয়ে একসা ভিড়ের চেহারাটা নিমেষে ‘হু-লা-লা’! কেউ গাড়ির দিকে ফুল ছুড়ছেন, অনেকে ভিড় ঠেলে এগোনোর মরিয়া চেষ্টায়।

কলকাতায় বিজেপি অফিসের সামনে বাপি লাহিড়ী। ছবি: সুদীপ আচার্য।

কলকাতায় বিজেপি অফিসের সামনে বাপি লাহিড়ী। ছবি: সুদীপ আচার্য।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৪ ০০:৫৮
Share: Save:

শ’দুয়েক লোকের ভিড়টা অপেক্ষা করছিল বেলা সাড়ে ৩টে থেকে। অধৈর্য ভিড়টা বারবারই জানতে চাইছিল, “কখন আসবেন দাদা?”

কিন্তু, কোথায় তিনি?

জানা গেল, দাদা পুজো দিতে ব্যস্ত দক্ষিণেশ্বরে। ‘ইন্তেজার’-এর ‘ইন্তেহাঁ’ শেষে যখন তিনি এলেন, সূর্য তখন প্রায় পাটে যাচ্ছে। দূর থেকে সাদা গাড়িটা দেখেই উত্তরপাড়ার গৌরী সিনেমা হলের সামনে দাঁড়িয়ে চৈত্রের গরমে ঘেমেনেয়ে একসা ভিড়ের চেহারাটা নিমেষে ‘হু-লা-লা’! কেউ গাড়ির দিকে ফুল ছুড়ছেন, অনেকে ভিড় ঠেলে এগোনোর মরিয়া চেষ্টায়। গাড়িতে বসে গেরুয়া আলখাল্লা, চোখে ট্রেডমার্ক কালো সানগ্লাস, দু’হাতে মোটা মোটা আংটি। কিন্তু, যা না থাকলে ছোটখাট-গোলগাল চেহারার মানুষটাকে চেনা যায় না, গলার সেই সোনার হারগুলো চাপা পড়ে গিয়েছে ফুলের মালায়।

প্রচারে বেরিয়েছেন ‘বাপ্পিদা’!

শ্রীরামপুরে একটা চমক দেবেন, আগেই বলে রেখেছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি রাহুল সিংহ। ভুল বলেননি। তাঁর দল এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে বাপি লাহিড়ীকে। দেওয়াল লিখনে অবশ্য সর্বত্র তিনি ‘বাপ্পি লাহিড়ি’! বৃহস্পতিবার প্রচারের প্রথম দিনে তিনি নিজেও বিলক্ষণ টের পেলেন, সেই চমক রক্ষার চাপ। বস্তুত, তাঁকে ঘিরে ভিড়ের উন্মাদনা এবং তারই জেরে বিশৃঙ্খলারও সাক্ষী থাকল উত্তরপাড়া থেকে শ্রীরামপুর প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ জিটি রোড। বাপির রোড শো-এর জন্য শুরু থেকে যান নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা ছিল না হুগলি জেলা পুলিশের তরফে। ফলে কখনও গাড়ি এগিয়েছে শামুকের গতিতে। আবার কখনও ভিড়ের চাপে গাড়ি দাঁড়িয়ে থেকেছে ১৫-২০ মিনিট।

জেলা পুলিশ ও সিভিক পুলিশের কর্মীরা দেরিতে হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, তারকা-প্রার্থীকে দেখার জন্য ধাক্কাধাক্কি, হুড়োহুড়ি, হুল্লোড় সব মিলিয়ে নাজেহাল হতে হয়েছে তাঁদের এবং বাপিকে ঘিরে থাকা দেহরক্ষীদের। ভোগান্তিতে পড়তে অফিস ফেরত যাত্রীদের। তার মধ্যে যাত্রার শুরুতেই বাপির গাড়ি খারাপ হওয়ায় সে আর এক চিত্তির। হুড খোলা বিকল গাড়ি ছেড়ে বাপিকে উঠতে হয়েছে কর্মী-সমর্থকে ঠাসা অন্য একটি ছোট হুড খোলা গাড়িতে।

বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি যত এগিয়েছে, ভিড়ও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। সকলেই যে বিজেপির কর্মী-সমর্থক তা নয়। আসলে সত্তরের দশক থেকে সঙ্গীতজীবন শুরু করা বাপি লাহিড়ি হালের ‘ডার্টি পিকচার’-এর মতো ছবির সুরকার হিসাবে এখনও প্রাসঙ্গিক। তাঁকে ঘিরে উত্‌সাহেও খামতি নেই। যে কারণে দীর্ঘ যানজটে আটকে ট্যাক্সিতে শুয়ে থাকা রোগিণী উঠে বসে জানলায় মুখ বাড়িয়ে বাপিকে দেখে একগাল হেসে ফের গা এলিয়ে দিয়েছেন সিটে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভিড়ের মধ্যে থেকে উড়ে আসে সদ্য ছোকরার চিত্‌কার, “বাপ্পিদা, চিরদিনই তুমি যে আমার।” সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা দেখে মাঝবয়সী লোকও কোমর দুলিয়ে নেচে ওঠেন, “রাম্বা হো হো...।”

এ সবের মধ্যেই কে যেন পেল্লায় একটা রজনীগন্ধার মালা বাপির গলায় ঝুলিয়ে দিলেন। কিন্তু, গায়ক-সঙ্গীতকারের ‘ট্রেডমার্ক’ সোনার ভারী ভারী চেনগুলো দেখতে না পেয়ে কিছুটা হতাশ শ্রীরামপুরের বাসিন্দা সুমঙ্গল শীল। বললেন, “বাপ্পিদা মানেই তো কালো সানগ্লাস, গলায় গাদা গাদা সোনার চেন, ফুরফুরে গান। কিন্তু, দাদার চেনগুলো দেখতে পেলাম না।” উত্তরপাড়ার সঞ্জয় প্রামাণিককে জিজ্ঞাসা করা হয়, এত ভিড়েও দাদাকে দেখতে এসেছেন, ভোটটা দেবেন কাকে? একগাল হেসে সঞ্জয় বলেন, “ভোটটা বড় কথা নয়। এমন এক জন বিখ্যাত লোক এলাকায় এসেছেন, ওঁকে দেখতে আসব না?” কথা বলতে বলতেই এসে পড়ল বিজেপি কর্মী-সমর্থক বোঝাই গেরুয়া রঙের বাস। স্লোগান উঠল, ‘বাপ্পিদা জিন্দাবাদ’।

এ দিন বাপি লাহিড়ীর জন্য ঠিক করে রাখা গাড়িটা উত্তরপাড়ায় রোড শোয়ের শুরুতেই খারাপ না হলে জনতা তাদের প্রিয় ‘বাপ্পিদা’র গলায় গান শুনতে পেতই। কারণ, হ্যান্ডমাইকটা ছিল ওই গাড়িতেই। সেখান থেকে নেমে অন্য গাড়ি ধরায় সব জলে গেল। জনতার মধ্যে থেকে উড়ে এল অনুরোধ, “দাদা, একটু গান হয়ে যাক” কিংবা “বাপ্পিদা, জাস্ট দু’লাইন” এ সবের জবাবে তিনি, বাপি শুধুই হাসলেন। কোন্নগরে জিটি রোডের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রণব ঘোষ সার কথাটা বুঝেছেন। বললেন, “উনি গায়ক মানুষ, গলার যত্ন নিতে হয়। আমরা চেঁচালেই উনি কি আর পাল্টা চেঁচাতে পারেন?”

কেমন বুঝলেন হাওয়া? বাপির জবাব, “এখানকার মানুষের ভালবাসায় আমি অভিভূত। ভোটে জিতলে শ্রীরামপুরের পবিত্র মাটিতে মাসে এক দিন নিয়ম করে আসব। তা ছাড়া, শ্রীরামপুরে সঙ্গীত অ্যাকাডেমি চালু করতে পারলে তো একরকম এখানকার বাসিন্দাই হয়ে গেলাম। এখানে ঘরে ঘরে পদ্মফুল ফোটাবই!”

ইভিএমে সে ফুল ফুটুক না ফুটুক, মাঝ চৈত্রে ‘বোম্বাই সে আয়া দোস্ত’-এর সঙ্গে যেন খোলা হাওয়া ঢুকে পড়ল রাজ্য রাজনীতির আঙিনায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bappi lahiri srirampur bjp candidate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE