Advertisement
E-Paper

মতুয়ারা প্রগতিশীল তাই ওঁদের ভোট পাব, দেবেশ

সন্ধে ৬টা বেজে ৩০ মিনিট। প্রার্থীর গাড়ি এসে থামল বাণেশ্বরপুর বাজারে। হেলেঞ্চা-দত্তফুলিয়া সড়কের ধারে পথসভার আয়োজন করা হয়েছিল বাণেশ্বরপুর বাজারে। সোম-শুক্র এখানে হাট বসে। তাই স্বাভাবিকভাবেই লোকসমাগম যথেষ্ট। আয়োজিত পথসভায় চেয়ারে কয়েক মিনিট বসেই উঠে পড়লেন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী দেবেশ দাস।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৩০
হাতে হাত। বাগদায় সিপিএম প্রার্থী দেবেশ দাস। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

হাতে হাত। বাগদায় সিপিএম প্রার্থী দেবেশ দাস। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সন্ধে ৬টা বেজে ৩০ মিনিট। প্রার্থীর গাড়ি এসে থামল বাণেশ্বরপুর বাজারে। হেলেঞ্চা-দত্তফুলিয়া সড়কের ধারে পথসভার আয়োজন করা হয়েছিল বাণেশ্বরপুর বাজারে। সোম-শুক্র এখানে হাট বসে। তাই স্বাভাবিকভাবেই লোকসমাগম যথেষ্ট। আয়োজিত পথসভায় চেয়ারে কয়েক মিনিট বসেই উঠে পড়লেন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী দেবেশ দাস। সড়কের অন্যধারে পথসভার ঠিক সামনে বাঁশের তৈরি ঝুড়ি, টোকা, কুলোর পসরা নিয়ে বসেছিলেন বৃদ্ধ কার্তিক দাস। প্রার্থী সোজা গিয়ে তাঁর হাত ধরে বললেন, “ভোটে দাঁড়িয়েছি। আমার নাম দেবেশ দাস। বামপন্থী প্রার্থী।” ঘটনার আকস্মিকতায় ঈষৎ বিহ্বল বৃদ্ধ। একটু পরে বলেন, “হাটের মধ্যে এসে আমাকে হাত জড়িয়ে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন এমন ঘটনা অতীতে আমার জীবনে ঘটেনি। খুবই ভাল লাগছে।” পাশেই মাটির তৈরি জিনিসের দোকান দেওয়া এক দোকানির হাত ধরে তখন প্রার্থী বলছেন, “ভোটে দাঁড়িয়েছি। আমার প্রতীক কাস্তে-হাতুড়ি-তারা। ভোটটা আমায় দেবেন।” মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন দোকানি। সেখান থেকে প্রার্থী ফিরে গেলেন পথসভায়।

সভার মধ্যে মাঝেমাঝেই একেক জন এসে প্রার্থীর সঙ্গে পরিচয় করে যাচ্ছেন। প্রার্থীও হাসিমুখে তাঁদের নাম, কোথায় বাড়ি ইত্যাদি কুশল জিজ্ঞাসা করছেন। কেউ বা বাড়ির পথে এক পলক থামছেন অধ্যাপক প্রার্থীকে দেখার জন্য। এমনই এক প্রতিবন্ধী যুবকের সঙ্গে ছবি তুললেন প্রার্থী। প্রচারে এতটুক খামতি রাখতে চান না। তাই সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে সাতটার মধ্যেই তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। চলছে রাত পর্যন্ত প্রচার। কোথাও পথসভা, কোথাও বৈঠক, কোথাও জনসংযোগ করতে মিছিল। এ দিন প্রথমে সাড়াহাটি, সেখান থেকে সিন্দ্রানী, বাণেশ্বরপুর, চরমণ্ডল-সহ বহু এলাকা ঘুরে রাতে শেষ হয় প্রচার।

প্রচারের মাঝে এক ফাঁকে ভাত, সিঙি মাছের ঝোল দিয়ে সেরে নিয়েছেন দুপুরের আহার। তীব্র গরমে প্রচারের পরেও ক্লান্তির ছাপ দেখা গেল না চোখে-মুখে। মুখে লেগে আছে হাসি। যা দেখে লোক ইতিমধ্যেই লোকে বলতে শুরু করেছেন, “ব্যবহারটা খুব ভাল।”

মঙ্গলবার সকালে বনগাঁ শহরের নিউ মার্কেটে প্রার্থীর সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে একই মন্তব্য জনৈক দোকানদারের। এ দিন প্রচারে নেমে প্রথমেই পা রাখেন নিউ মার্কেটে। বাজারে ঢুকে সব্জি বিক্রেতা থেকে শুরু করে মাছ বিক্রেতা সকলের সঙ্গেই হাত মিলিয়ে ভোট প্রার্থনা প্রার্থীর। সঙ্গে থাকা দলীয় কর্মীরা চিনিয়ে দিচ্ছিলেন কাস্তে-হাতুড়ি-তারা’র প্রতীক চিহ্ন। প্রার্থী এগিয়ে যেতেই পিছন থেকে ভেসে এল মন্তব্য, “ওঁর সম্পর্কে অন্যরকম ভেবেছিলাম। কিন্তু দেখলাম মাটির মানুষ। শুনেছি রাজ্যের মন্ত্রীও ছিলেন।’’ বাজারের লোকজনকে উদ্দেশ করে সারদা প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে প্রার্থী বলেন, “কুণাল চোর কি না তা আপনার পুলিশ-প্রশাসন প্রমাণ করে দিয়েছেন। বাকি যাঁরা রয়েছেন তাঁরা যে চোর নয়, তা আপনি প্রমাণ করুন।’’

দিল্লি গেলে ইছামতী, যমুনা, কোদালিয়ার মতো নদীগুলোর সংস্কার করে সেগুলিকে আগের অবস্থায় ফেরানোই যে তাঁর প্রধান কাজ হবে প্রচারে সে কথা তুলে ধরছেন দেবেশ। বললেন, ‘‘রেলমন্ত্রী থাকার সময় মমতা বলেছিলেন বনগাঁ থেকে বাগদা রেলপথ হবে। বনগাঁয় একটি ইন্ডোর স্টেডিয়াম হবে। বনগাঁয় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি হবে। কিন্তু কোনও প্রতিশ্রুতিই রাখেননি তিনি। আমাদের আমলে একটি কলেজের শিলান্যাস হয়েছিল। ওঁর আমলে তার কোনও কাজই এগোয়নি।”

বনগাঁ কেন্দ্রে মতুয়া ভোট বরাবরই একটা ফ্যাক্টর। এ বার আবার তৃণমূল এবং বিজেপি-র হয়ে যে দু’জন দাঁড়িয়েছেন তাঁরা দু’জনেই মতুয়া। সে ক্ষেত্রে তাঁর কি কোনও সমস্যা হবে না? প্রশ্ন শেষ না হতেই উত্তর, ‘‘আমার জয়ের ক্ষেত্রে মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ক কোনও ফ্যাক্টর হবে না। মতুয়ারা ধার্মিক। কিন্তু সাম্প্রদায়িক নন। তা ছাড়া সাধারণভাবে ওঁরা প্রগতিশীল। আমার বিশ্বাস ওঁদের ভোট আমি পাব।”

যদিও তৃণমূল প্রার্থী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরই যে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, তা জানাতে ভুললেন না রাজ্যের প্রাক্তন তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী ও অধ্যাপক দেবেশ দাস।

votebadyi simanta moitra bongaon
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy