সিপিএমের এক প্রয়াত কৃষক নেতার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। পাশে প্রার্থী রিঙ্কু নস্কর। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
ঘুরে দাঁড়ানোর ডাক দিয়ে মথুরাপুরের তরুণ প্রার্থী রিঙ্কু নস্করের সমর্থনে প্রচারে নামলেন সিপিএমের প্রবীণ নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।
নামলেন এমন এলাকায়, যেখানে বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে প্রায় দু’শো পরিবার গ্রামছাড়া। ভোটে জয়ী হয়েও গ্রামছাড়া সিপিএমের দুই পঞ্চায়েত সদস্য।
কাকদ্বীপের দুই গ্রাম মধুসূদনপুর ও সূর্যনগরে বেশ কিছু দিন ধরেই সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে আসছে সিপিএম। অভিযোগ পেয়ে সম্প্রতি কয়েকটি পরিবারকে গ্রামে ফিরিয়েছে প্রশাসন। বুধবার রিঙ্কুকে সঙ্গে নিয়ে সেখানেই কর্মীদের সাহস জোগাতে গেলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দলের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক কান্তিবাবু।
বেলা ১০টা থেকে মধুসূদনপুর ও সূর্যনগরের প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মিছিল করে সিপিএম। মধুসূদনপুর গ্রামে ঢোকার সময়ে প্রভাকর মণ্ডল নামে এলাকার এক বিজয়ী পঞ্চায়েত সদস্য যোগ দেন। তাঁর অভিযোগ, “পঞ্চায়েত ভোটের দিন তৃণমূল আমায় মারধর করে গ্রাম থেকে বের করে দিয়েছিল। জিতেও গ্রামে ফিরতে পারিনি।” তার পরেই জানিয়ে দেন, “আজ কান্তিবাবু আসায় সাহস করে তাঁর সঙ্গে এসেছি।”
এলাকায় যে এখনও আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে, তা মিছিল ঘিরে পুলিশি নজরদারি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। সামনে-পিছনে আগাগোড়া মোটরবাইকে উদির্ধারী পুলিশ। কান্তিবাবু এবং মিছিলে থাকা সিপিএম সমর্থকদের কার্যকলাপ ক্যামেরাবন্দিও করতে দেখা যায় তাঁদের। ইতিউতি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মীদেরও। মিছিলে হাঁটতে হাঁটতেই সদ্য গ্রামে ফেরা দলীয় সমর্থকদের বাড়িতে ঢুকে পড়ছিলেন কান্তিবাবু। তাঁকে সামনে পেয়ে এক মহিলা সমর্থক হাত দু’টি জড়িয়ে ধরলেন “মনে আছে, পঞ্চায়েত ভোটের সময় আমার বাড়িতে এসে চা খেয়েছিলেন। কিন্তু এ বার চা খেতে বলতেও ভয় লাগছে। যে ভাবে ওরা সব ছবি তুলছে, তাতে ভয় হয়।”
মহিলাকে অভয় দিয়ে কান্তিবাবুর আশ্বাস, “এ বার গ্রামছাড়া করলে থানার দরজা আটকে ধর্নায় বসব। বা গ্রামে ঢোকার প্রধান রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে থাকব, যাতে আর কেউ ঢুকতে না পারে। সে যে-ই হোক।” একটু থেমে তিনি ফের বলেন, “এখন নির্বাচন কমিশন আছে। আমাদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে অত্যাচার হলে তাদের জানাব।” মিছিলের ফাঁকে একাধিক কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে ঢুঁ দিয়ে তিনি বলতে থাকেন, “তোমরা ভয় পেলে ওরা আরও পেয়ে বসবে। আরও সন্ত্রাস করবে। ওদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।”
মিছিল দেখেও গ্রামের বেশির মানুষ বেরিয়ে আসেননি। কিন্তু জানলা ও ছাদ থেকে কান্তিবাবু ও রিঙ্কুর উদ্দেশে হাত নেড়েছেন অনেকেই। তাঁদের দিকে হাত নেড়ে রিঙ্কু বলেন, ‘‘আমি মথুরাপুরের সিপিএম প্রার্থী। সব সন্ত্রাস, মা-বোনদের উপরে অত্যাচার বন্ধ করতে দিল্লি যেতে চাই। আপনারা আমায় সাহায্য করুন।”
দুপুর ১২টা নাগাদ মিছিল শেষ করে নিশ্চিন্তপুর বাজারে এক চায়ের দোকানে বসেন কান্তিবাবু। স্থানীয় কিছু সিপিএম নেতা এসে জানান তাঁদের আশঙ্কার কথা, “রাতে হামলা হতে পারে। দেখলেন না, ওরা কেমন লক্ষ্য রাখছিল!” কান্তিবাবু অভয় দেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থীরা এলাকায় থাকতে না পারা সত্ত্বেও এখানকার মানুষ আমাদের জিতিয়েছেন। ভরসা রাখুন, এ বারও তাঁরা আমাদের পাশে থাকবেন। যাদের পাশে মানুষ থাকে, সন্ত্রাস করে তাদের রোখা যায় না।”
জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি শক্তি মণ্ডল অবশ্য সন্ত্রাসের যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই রাজ্যে গণতন্ত্র আছে বলে কান্তিবাবুরা আজ ওখানে মিটিং-মিছিল করতে পারলেন। গত ৩৪ বছরে বিরোধীরা কখনও এত শান্তিপূর্ণ মিটিং-মিছিল করতে পারেনি।”
জেলা পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, প্রায় সব ঘরছাড়াকেই গ্রামে ফেরানোর ব্যবস্থা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy