Advertisement
E-Paper

লণ্ঠনের আলোয় পড়া চালিয়েও মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ সমীরণের

মেয়ের ভাল রেজাল্টে দুশ্চিন্তার মেঘ ঘনিয়ে এসেছে বাবার মুখে। সাগর ব্লকের ধবলাটের বাসিন্দা সমীরণ সিংহ এ বার মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। ভ্যানচালক বাবা শঙ্করের কাছে সেটাই ভাবনা। কী ভাবে দু’পয়সা বাড়তি রোজগার হবে, সেই চিন্তা তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০১:২১
সমীরণ ও দিগন্ত। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার।

সমীরণ ও দিগন্ত। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার।

মেয়ের ভাল রেজাল্টে দুশ্চিন্তার মেঘ ঘনিয়ে এসেছে বাবার মুখে। সাগর ব্লকের ধবলাটের বাসিন্দা সমীরণ সিংহ এ বার মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। ভ্যানচালক বাবা শঙ্করের কাছে সেটাই ভাবনা। কী ভাবে দু’পয়সা বাড়তি রোজগার হবে, সেই চিন্তা তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

মনসাদ্বীপ রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র সমীরণ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়। সংসারের হাল অজানা নয় ছেলেটির। তাই বাবাকে সে জানিয়েছে, টিউশন পড়িয়ে কিছু রোজগারের চেষ্টা এ বার সে-ও করবে। কিন্তু সেই উপায় বাবার মনে শান্তি দিতে পারছে কই!

ছোট থেকেই অভাবের সংসারে বড় হওয়া সমীরণ বলে, “মা-দিদি অসুস্থ। বাবার বয়স হয়েছে। রোজগারও সামান্য। দাদা সঞ্জয়ের দিনমজুরির আয়েও সংসার চলে না। এ বার আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সত্যিই কঠিন। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাবো।” বড় ছেলের স্ত্রীর আবার থ্যালাসেমিয়া আছে বলে জানালেন শঙ্করবাবু।

মিশনের শিক্ষকেরা তো বটেই, সমীরণ জানায়, তারই সহপাঠী দিগন্ত দাসের বাবা জয়দেববাবুও নানা ভাবে পাশে থেকেছেন। তিনি ওই ব্লকেরই খানসাহেব আবাদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। তাঁর ছেলেও সম্ভাব্য পঞ্চম হয়েছে এ বার মাধ্যমিকে।

মাসে ১৯০ টাকার বিনিময়ে ছয়ঘেড়ির কাছে একটি কোচিং সেন্টারে তালিম নিত সমীরণ। সে জানায়, প্রতি মাসে টাকা দিতে পারত না। গ্রামে বিদ্যুৎ নেই বলে লণ্ঠনের আলোতেই পড়াশোনা চালাতে হয়েছে তাকে। ২০১২ সাল থেকে সরকারি স্কলারশিপের টাকা পেতে শুরু করলেও, সেটাও অনিয়মিত জানায় সমীরণ। গত বছরের টাকা এখনও হাতে আসেনি। এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনা চালিয়েও সমীরণের আক্ষেপ, “আর একটি ভাল ফল আশা করলাম, হল না।”

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়ে ভবিষ্যতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলেটি। তবে খরচে কুলোতে না পারলে খানসাহেব আবাদ স্কুলেও ভর্তি হওয়ার কথা ভাবছে। সেখানে হোস্টেলে থাকা ও জয়েন্টের কোচিংয়ের ব্যবস্থা জয়দেববাবু করবেন বলে কথা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমিও ওর মতো পরিবার থেকেই উঠে এসেছি। এত লড়াই করছে ছেলেটা।” তাঁর বাড়িতে থেকেই দিগন্তের সঙ্গে এক সাথে পড়াশোনা করত সমীরণ। সমীরণের সাফল্যে গর্বিত মনসাদ্বীপ রামকৃষ্ণ মিশনের সচিব স্বামী দুর্গাত্মানন্দ।

সমীরণ বলে, “এক বার পাড়ায় বিয়ে বাড়িতে গিয়েছি। পোশাক-আশাক একদমই ভাল ছিল না। কত লোকে কত কী মন্তব্য করল। সব হজম করলাম। সেই থেকেই ঠিক করেছি, লড়াইটা চালিয়ে যেতেই হবে।” চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে রোগা-পাতলা চেহারার ছেলেটার।

sarar madhyamik result samiran
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy