Advertisement
E-Paper

শ্রমিক বিক্ষোভে তালা কারখানায়, আটক তিন

কর্মী ছাটাই, পরিচয়পত্র না দেওয়া, বেতন বৃদ্ধি সহ নানা অভিযোগে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিলই। বুধবার শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে তালা পড়ল বাদুড়িয়ার গোখনা মোড়ের ‘নিউ এজ জুট প্রসেসিং প্রাইভেট লিমিটেড’ কারখানাটিতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৪ ০২:৩২
কারখানার সামনে অবস্থান শ্রমিকদের।—নিজস্ব চিত্র।

কারখানার সামনে অবস্থান শ্রমিকদের।—নিজস্ব চিত্র।

কর্মী ছাটাই, পরিচয়পত্র না দেওয়া, বেতন বৃদ্ধি সহ নানা অভিযোগে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিলই। বুধবার শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে তালা পড়ল বাদুড়িয়ার গোখনা মোড়ের ‘নিউ এজ জুট প্রসেসিং প্রাইভেট লিমিটেড’ কারখানাটিতে। গত সোমবার থেকে ওই কারখানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন শ্রমিকেরা। মালিক পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার বিক্ষোভকারীদের তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। তাতে বিক্ষোভ আরও ছড়ায়। ভয়ে কারখানার ভিতরেই রয়েছেন ম্যানেজার-সহ দশ থেকে বারো জন কর্মী।

ম্যানেজার কমলেশচন্দ্র নন্দীর অভিযোগ, “কারখানার বাইরে বেরোলেই খুন করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই কারখানার গেট ভিতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে বসে আছি। আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। বিক্ষোভকারীরা বাজারহাট পর্যন্ত করতে না দেওয়ার দুপুরের খাওয়াও হয়নি। মালিক-পক্ষ এবং পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।”

যদিও অবস্থানরত শ্রমিকেরা সেই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, মহকুমা শ্রম দফতরে বেশ কয়েক বার বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হলেও কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন তাঁরা। মহকুমা শ্রম দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার সুব্রত রায় বলেন, ‘‘শ্রম আইন না মানায় ওই কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হচ্ছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ বছর আগে বাদুড়িয়ার গোখনা মোড়ে বড় রাস্তার পাশে কারখানাটি তৈরি হয়। চটের উপর রঙ করার পর তা বিদেশের বাজারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় সেখানে। বাদুড়িয়ার বাসিন্দা পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ কয়েকজনের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ওই কারখানায় ৪৮ জন শ্রমিক কাজ করেন। গত কয়েক মাস ধরে বেতন বৃদ্ধি, কর্মী ছাঁটাই, পরিচয়পত্র না দেওয়া-সহ বেশ কয়েক দফা বিষয় নিয়ে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকেরা। গত বছর ডিসেম্বরে কারখানার ভিতরে মারামারি করায় তিন জন শ্রমিককে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়। পরে দু’জন লিখিত ভাবে অন্যায় স্বীকার করলে তাঁদের কাজে ফিরিয়ে নেওয়া হলেও একজনকে নেওয়া হয়। কিন্তু আর এক জনকে কাজে ফেরানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বাদুড়িয়ার বিডিও, মহকুমা শ্রম আধিকারিক-সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দফতরগুলিতে জানান শ্রমিকেরা। তার পরিপেক্ষিতে তিন বার দু’পক্ষকে নিয়ে শ্রম দফতরে আলোচনা হলেও কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি।

ইতিমধ্যে এক জন শ্রমিক কারখানা কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে ছুটি নিয়েছিলেন। তার জেরে তাঁকে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়। তার পরই সোমবার থেকে কারখানার গেটের সামনে তাঁবু ফেলে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা। ওই কারখানার শ্রমিক কাশিনাথ বিশ্বাস, শ্যামলাল চট্টোপাধ্যায়, সফিকুল ইসলাম, গৌতম কাবাসিরা বলেন, ‘‘বারো ঘন্টা কাজ করে মজুরি মেলে খুব বেশি হলে ১৯০ টাকা। তাও সকলে সমান মজুরি পান না। জ্বলন্ত বয়লার, রোলিং মেশিনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি মেলে না। পরিচয়পত্রও দেওয়া হয়নি। প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক নেতা সকলকে বিষয়টি জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।”

তাঁদের দাবি, এর প্রতিবাদ করাতেই তাঁদের সহকর্মী গৌরাঙ্গ বন্দ্যোপাধ্যায়, বাবুসোনা কর্মকার এবং সাবির আলি বৈদ্যকে ধরেছে পুলিশ। অন্য দিকে, আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে বলে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। শ্যামলালবাবু বলেন, “যতক্ষণ না আমাদের দাবি পূরণ করা হচ্ছে ও তিন সহকর্মীকে না ছাড়া হচ্ছে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”

কারখানার মালিকপক্ষের তরফে পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইচ্ছে মত ছুটি নিলে সময় মত বিদেশে মাল পাঠানো দুষ্কর হয়ে পড়ে। তখন বরাত বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমন হলে বহু টাকার ক্ষতি হয়। পাশাপাশি কারখানার সুনাম নষ্ট হয়। তিন জন শ্রমিক কারখানায় মারামারি করার পরেও দু’জনকে কাজে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত শ্রমিককে কাজে নেওয়া হয়েছে। এরপরেও কিছু বহিরাগত লোকজন এসে শ্রমিকদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। ওরা কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া ও খুনের হুমকি দেওয়ায় আমরা আতঙ্কিত।’’

বাদুড়িয়ার তৃণমূল নেতা তুষার সিংহ বলেন, “শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য আমাদের ডাকা হলে আমরা আলোচনায় বসে মীমাংসা করতে রাজি। কিন্তু কারখানা বন্ধ করে কোনও আলোচনা সম্ভব নয়।’’ পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘মানুষের স্বার্থে বাদুড়িয়ায় কারখানা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। অস্থায়ী শ্রমিকেরা কে কত টাকা মজুরি পাবেন, তা কাজে যোগ দেওয়ার সময়ে চুক্তির মাধ্যমে ঠিক হয়। প্রয়োজনে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। কিন্ত তারা আলোচনায় না গিয়ে এই ভাবে কাজ বন্ধ করে দিলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।”

labour agitation suspension of work basirhat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy