Advertisement
E-Paper

শনিবার রাত থেকেই চলছিল শাসানি, অভিযোগ বামেদের

সুষ্ঠু ভাবে মিটল না পঞ্চম তথা শেষ দফাও। রাজ্যে তৃতীয় এবং চতুর্থ দফার ভোটে শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের নানা অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। পঞ্চম দফা শান্তিতে মেটে কিনা, তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই দফাতেও অবাধে ভোট দিতে পারলেন না সাধারণ মানুষ। হাড়োয়ার মতো বড় ঘটনা অন্যত্র না হলেও ব্যারাকপুর থেকে সন্দেশখালি, বারাসত থেকে বনগাঁ উত্তর ২৪ পরগনার প্রায় সর্বত্রই সোমবার শাসক দলের বিরুদ্ধে হামলা, বিরোধী এজেন্টদের বুথে বসতে না দেওয়া, ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৪ ০৪:০১

সুষ্ঠু ভাবে মিটল না পঞ্চম তথা শেষ দফাও।

রাজ্যে তৃতীয় এবং চতুর্থ দফার ভোটে শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের নানা অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। পঞ্চম দফা শান্তিতে মেটে কিনা, তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই দফাতেও অবাধে ভোট দিতে পারলেন না সাধারণ মানুষ। হাড়োয়ার মতো বড় ঘটনা অন্যত্র না হলেও ব্যারাকপুর থেকে সন্দেশখালি, বারাসত থেকে বনগাঁ উত্তর ২৪ পরগনার প্রায় সর্বত্রই সোমবার শাসক দলের বিরুদ্ধে হামলা, বিরোধী এজেন্টদের বুথে বসতে না দেওয়া, ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠল। সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম দেব বলেন, “তৃণমূল সর্বত্র অশান্তি করেছে। মানুষ অবাধে ভোট দিতে পারেননি।” অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, “মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই ভোট দিয়েছেন। সিপিএম কিছু জায়গায় গোলমাল করেছে।”

এ দিনের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের হাড়োয়ার। তা নিয়ে রাজ্য জুড়েই শোরগোল হয়। হাড়োয়ায় তৃণমূলের ছোড়া ছররা ও চপারের আঘাতে জনা আঠারো সিপিএম কর্মী-সমর্থক জখম হন। তৃণমূলের দাবি, সিপিএমের মারে তাদেরও চার জন জখম হন। হাড়োয়া থেকে আহত চার সিপিএম কর্মীকে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। রুমা মণ্ডল নামে এক মহিলার অবস্থা সঙ্কটজনক। পাশাপাশি, হাড়োয়ার ৪৯ নম্বর ইন্ডালির বুথে অনিমেষ মণ্ডল নামে এক সিপিএম কর্মীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ মানেনি শাসক দল। নারায়ণপুরে আবার সিপিএমের ৩৫ জনকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। পুলিশ ও পর্যবেক্ষক গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। কেউই পরে ভোট দিতে যাননি। এখানে বেশ কিছু এলাকায় ভোটারদের সচিত্র পরিচয়পত্র আগেই কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে।

শাসন এলাকায় সিপিএমের ঘরছাড়ারা ভোট দিতে এলাকায় ফিরেছিলেন। তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বারাসত হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে শাসনের বেলিয়াঘাটার বাসিন্দা, সিপিএম সমর্থক প্রাচী মণ্ডল বলেন, “সিপিএম করি বলে বিধানসভা ভোটের পর থেকে গ্রামছাড়া। আজ যখন আমরা ভোট দিতে গিয়েছিলাম, আমার ছেলে পরেশ এবং ভাই অজিতকে বেধড়ক মারধর করে তৃণমূলের লোকজন। ওদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।” শাসন এলাকায় প্রায় জনাদশেক সিপিএম সমর্থক মার খেয়ে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এলাকার সিপিএম নেতা মজিদ আলি বলেন, “শাসন-সহ বারাসত ২ নম্বর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় ৫০ শতাংশ বুথে ভোট হয়নি। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ছিল না। রিগিং চলেছে।”

সন্দেশখালির ভাঙা তুষখালির দু’টি বুথে তৃণমূূল তাদের কোনও এজেন্টকে বসতে দেয়নি বলে কংগ্রেস অভিযোগ তোলে। বসিরহাটের গাছারআটিতে ৬৭ এবং ৬৮ নম্বর বুথ জ্যাম করা হয়। সন্দেশখালির বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের অভিযোগ, “সন্দেশখালি-১ ব্লকের ৪৭টি বুথে ভোট লুঠ হয়।” ভোট দিয়ে বেরিয়ে হাসনাবাদের ভবানীপুরের এক ভোটার বলেন, “বুথে সকলেই শাসক দলের এজেন্ট ছিলেন। ওরা সব সময়ে নজরে রেখেছিল। ভোটযন্ত্রে ওদের বোতামের বাইরে আঙুল পড়লে আর রক্ষে নেই। তাই ওদেরই ভোট দিতে হল।” হিঙ্গলগঞ্জে গোবিন্দকাটিতে আবার দুই তৃণমূূল সমর্থককে মারধরের অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে।

সিপিএমের ব্যারাকপুর-১ লোকাল কমিটির সদস্য সন্দীপ রায় স্ত্রী সাথীকে নিয়ে ভোট দিতে গিয়েছিলেন নোনা চন্দনপুকুর মন্মথনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে। ফেরার পথে শাসক দলের লোকেরা তাঁদের মারধর করে বলে অভিযোগ। তৃণমূূল অভিযোগ মানেনি। তালপুকুর ক্ষেত্রমোহন হাইস্কুলের সামনে পলি রায় নামে সিপিএম কর্মীর স্ত্রীকেও ধাক্কাধাক্কি করা হয়।

মামুদপুরে সিপিএম সদস্য রমা মণ্ডলকে ভোট দিতে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কমিশনের দ্বারস্থ হন তিনি। পর্যবেক্ষককে সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে যাওয়ার পথে তিনি ফের আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। বাঁশ, ইট দিয়ে পেটানো হয় রমাদেবীকে। পুলিশ আসে। ভোট দিলেও রমাদেবীর অভিযোগ, তাঁকে ও তাঁর পরিবারের মেয়েদের ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূলের দাবি, সম্পূর্ণ সাজানো ঘটনা। দলের কেউ ভোট দিতে বাধা দেয়নি। কিন্তু তা হলে আহত হলেন কী ভাবে রমাদেবী? এ ব্যাপারে নিরুত্তর তৃণমূল নেতৃত্ব।

দত্তপুকুরের শ্রীকৃষ্ণনগরের এসএফআই কর্মী চন্দন দাস সিপিএমের ক্যাম্প অফিসের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সময়ে স্থানীয় কিছু তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা হয়। অভিযোগ, চার জন তৃণমূল সমর্থক তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে দলের ক্যাম্প অফিসে ঢুকিয়ে মারধর করে। তাঁর মাথায় লোহার রড দিয়ে মারা হয়। তিনি পড়ে যান। সেই সময়ে সেখানে রান্না হচ্ছিল। রান্নার কড়াই থেকে গরম খাবার ছিটকে এসে তাঁর কব্জিতে লাগে। হালকা পুড়েও যায়। স্থানীয় লোকজন, পুলিশ প্রশাসন তাঁকে উদ্ধার করে বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত নদিয়ার গয়েশপুরে ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। রবিবার রাত থেকেই ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঢুকে ভয় দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএম-সহ বিরোধীদলগুলির। বনগাঁয় কিছু বুথে সিপিএম এজেন্ট দিতে পারেনি। কিছু জায়গায় ইভিএম খারাপ হওয়ায় ভোট গ্রহণ শুরু হতে দেরি হয়েছে।

cpm tmc lok sabha vote loksabha election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy