Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

সাইকেলে অলি-গলিতে ঢুঁ, আড্ডাতেই প্রচার কং-প্রার্থীর

হুডখোলা জিপে ঘুরছেন হেভিওয়েট প্রার্থীরা। সামনে-পিছনে কর্মী-সমর্থকদের গাড়ি, বাইকের লম্বা মিছিল। সঙ্গে বড় বড় দলীয় পতাকা, ব্যানার বা ফেস্টুন। ‘ভূমিপুত্র’ বলতে গেলে একাই। তাঁর ভরসা সাইকেল। রাজপথ-গলিপথে চক্কর কাটছেন সকাল-সন্ধ্যা। আড্ডা জমাচ্ছেন চায়ের দোকানে, পাড়ার ক্লাবে, কখনওবা অটো-স্ট্যান্ডে।

দোকানে প্রচারের ফাঁকেই চা পান কংগ্রেস প্রার্থীর। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

দোকানে প্রচারের ফাঁকেই চা পান কংগ্রেস প্রার্থীর। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

বিতান ভট্টাচার্য
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৫৮
Share: Save:

হুডখোলা জিপে ঘুরছেন হেভিওয়েট প্রার্থীরা। সামনে-পিছনে কর্মী-সমর্থকদের গাড়ি, বাইকের লম্বা মিছিল। সঙ্গে বড় বড় দলীয় পতাকা, ব্যানার বা ফেস্টুন।

‘ভূমিপুত্র’ বলতে গেলে একাই। তাঁর ভরসা সাইকেল। রাজপথ-গলিপথে চক্কর কাটছেন সকাল-সন্ধ্যা। আড্ডা জমাচ্ছেন চায়ের দোকানে, পাড়ার ক্লাবে, কখনওবা অটো-স্ট্যান্ডে।

ভোট-যুদ্ধে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের বামপ্রার্থী সুভাষিণী আলি, তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী বা বিজেপি প্রার্থী আর কে হান্ডা— কেউই স্থানীয় বাসিন্দা নন। কংগ্রেস প্রার্থী করেছে ব্যারাকপুর শহরের নাপিতপাড়ার বাসিন্দা বছর সাঁইত্রিশের সম্রাট তপাদারকে। প্রার্থীদের মধ্যে তিনিই বয়সে সবচেয়ে ছোট। ভোটের ময়দানে এই প্রথম। জানেন, লড়াইটা কঠিন। কিন্তু সহজে হাল ছাড়ছেন না নিজেই নিজেকে ‘ভূমিপুত্র’ বলতে পছন্দ করা সম্রাট।

লোকসভা এলাকাকে হাতের তালুর মতো চেনেন। গলিঘুঁজিও অজানা নয়। সমাজসেবার নানা কাজের জন্য এলাকায় খানিক পরিচিতিও আছে। আর এত দিনের এই পরিচিতিটাই এ বার ভোটে কাজে লাগাচ্ছেন এই কংগ্রেস প্রার্থী। রোড শো, মিছিল বা জনসভার চেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন বাজারে, চায়ের দোকানে বা পাড়ার ক্লাবে আড্ডা দিয়ে জনসংযোগ বাড়ানোয়। সাতসকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাইকেলে চেপে ঘিঞ্জি শিল্পাঞ্চলের অলি-গলিতে ঘুরে বেড়ানোর ফাঁকে ডাবওয়ালা বা লস্যির দোকান নজরে পড়লে তাঁদের কুশল সংবাদ নিয়ে গলা ভেজাচ্ছেন দিনে চার-পাঁচ বার। সঙ্গে কখনও-সখনও থাকছেন তিন-চার জন দলীয় কর্মী। তবে, দলের ব্যানার, পতাকা বা ফেস্টুন কারও সঙ্গেই থাকছে না। শুধু তাঁদের টি-শার্টের গায়ে দেখা যাচ্ছে হাতের ছবি।কেন এই স্টাইলে প্রচার?

সম্রাট বলেন, ‘‘তৃণমূল বা সিপিএমের মতো বড় মিছিল করার মতো লোকবল কি আমাদের আছে? বাস্তবটা অস্বীকার করতে পারব না। তার থেকে এই ভাল। একা একাই ঘুরছি। নতুন মানুষ চিনছি, ওঁরাও আমাকে চিনছেন।’’

ভোটের ময়দানে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম ঘোষণার বেশ কিছু দিন পরে কংগ্রেস প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়। ফলে, এই কেন্দ্রে প্রচারে এখনও কিছুটা পিছিয়ে কংগ্রেস। তার উপরে গত কয়েক মাসে দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বহু কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক। ফলে, দেখা দিয়েছে কর্মী-সঙ্কটও। স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব মানছেনও, প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখন বা পতাকা-ফেস্টুন এখনও সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না।

তাতে অবশ্য কুছ পরোয়া নেহি সম্রাটের। তিনি বলছেন, “ভূমিপুত্রের পরিচয় রাজনীতির ব্যানারে হয় না। হারি বা জিতি ভোট পাব তো আমার এলাকার মানুষের আস্থা, নির্ভরতার জায়গা থেকে।”

তাই সকালবেলা ট্র্যাকস্যুট আর গেঞ্জি পরে সাইকেল নিয়ে পথে পথে ঘুরছেন সম্রাট। পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন সরু গলির শেষ প্রান্তেও। বলছেন, “আমাকে দেখবেন।”

ব্যারাকপুর বাজারে মাছ বিক্রি করেন সঞ্জয় মাঝি। সম্রাটের প্রচারের ধরন দেখে তিনি অবাক। তাঁর কথায়, “এ ভাবে কাউকে কখনও ভোট চাইতে দেখিনি। নতুন ধরন। দেখে ভাল লাগল।” শ্যামনগরের রিকশাচালক অশোক রায় বলেন, “ভোট মানেই রাস্তা আটকে মিছিল, মিটিং। লোকসভার সব প্রার্থী যদি এ ভাবে ভোট চাইতেন, তা হলে অনেক কিছুই বদলে যেত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bitan bhattacharya vote campaign lok sabha election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE