Advertisement
E-Paper

সাঁকরাইলের অবৈধ হোম থেকে উদ্ধার ৯ শিশু

বছর দুয়েক আগে গুড়াপের একটি হোমে মেরে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণী গুড়িয়াকে। মাত্র মাস দেড়েক আগে বাঁকুড়া শহর-লাগোয়া হরিয়ালগাড়ার একটি অবৈধ বেসরকারি হোম থেকে উদ্ধার করা হয় ২২জন নাবালিকাকে। এই তালিকার যেন শেষ নেই। বুধবার সাঁকরাইলের একটি অবৈধ হোম থেকে উদ্ধার হল নয় শিশু।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০০:৫৪
সেই ন’জন শিশু। ছবি: সুব্রত জানা।

সেই ন’জন শিশু। ছবি: সুব্রত জানা।

বছর দুয়েক আগে গুড়াপের একটি হোমে মেরে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণী গুড়িয়াকে। মাত্র মাস দেড়েক আগে বাঁকুড়া শহর-লাগোয়া হরিয়ালগাড়ার একটি অবৈধ বেসরকারি হোম থেকে উদ্ধার করা হয় ২২জন নাবালিকাকে। এই তালিকার যেন শেষ নেই। বুধবার সাঁকরাইলের একটি অবৈধ হোম থেকে উদ্ধার হল নয় শিশু। সরকারি হিসেবে, আরও ১০জন শিশুর থাকার কথা ওই হোমে। কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়িতে। সমাজকল্যাণ দফতর হোম কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে ওই শিশুদের উপস্থিত করতে। না হলে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করা হবে।

বুধবারের অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক দেবকুমার ভট্টাচার্য। তাঁরা হোমটিতে অবশ্য গিয়ে দেখেন কর্মকর্তাদের কেউ নেই। রয়েছেন দু’একজন কর্মী মাত্র। দেবকুমারবাবু বলেন, “নয়টি বালককে উদ্ধার করে আমরা তাদের স্থানীয় থানায় নিয়ে যাই। থানায় বিষয়টি নথিভূক্ত করার পরে বালকদের শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে তাদের চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।” আজ বৃহস্পতিবার তাদের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে হাজির করানো হবে বলে দেবকুমারবাবু জানান। তিনি বলেন, “কমিটিই ঠিক করবে, ওই শিশুদের কোন হোমে পাঠানো হবে।”

কতদিন ধরে ওই হোম চলছিল, তা নিয়েও রয়ে গিয়েছে ধন্দ। ধন্দ রয়েছে মালিকানা নিয়েও। যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হোমের দায়িত্বে রয়েছে, তার কর্ণধার বিপ্লব চৌধুরী বলেন, “আমরা গত জানুয়ারি মাস থেকে ওই বালকগুলিকে খেতে পরতে দিলেও, হোমটি কিন্তু আমরা চালাতাম না। এটি অন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার। তারা আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ার ফলেই আমরা এই নাবালকদের দায়িত্ব নিয়েছি।” যে সংস্থার নাম বিপ্লববাবু করছেন, তার কর্তাব্যক্তিদের ফোন বন্ধ। বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। বিপ্লববাবুর দাবি, হোমের লাইসেন্সের জন্য তাঁরা জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের কাছে আবেদন করেছেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০০১ সাল থেকে চলছে এই হোম। তা হলে এতদিনে কেন লাইসেন্স মেলেনি? সরকার-ই বা কী করে এতদিন চলতে দিল হোম?

জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, ২০১৩ সাল থেকে হোমটি চলছে বলে তাঁদের কাছে খবর। রাজ্যের নানা জেলা, এমনকী ভিন্ রাজ্য থেকেও এখানে নাবালকদের আনা হত। নিয়ম হল, কোনও নাবালককে উদ্ধার করা হলে তাকে চাইল্ড লাইনে জমা দিতে হয়। চাইল্ড লাইন সেই নাবালককে জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে হাজির করায়। কমিটি তাকে কোনও তালিকাভুক্ত সরকারি বা বেসরকারি হোমে পাঠিয়ে দেয়। সাঁকরাইলের হাটগাছার এই হোমটিতে এই পদ্ধতি মানা হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে ওই শিশুগুলি তাদের নিরাপত্তার জন্য একান্তই হোম কর্তৃপক্ষের উপর নির্ভর ছিল। তাদের উপর কোনও সরকারি নজরদারি ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের বিপন্নতা অত্যন্ত বেড়ে যায়, জানান সমাজকল্যাণ দফতরের এক আধিকারিক।

এই হোমে নয় থেকে ১৪ বছরের বালকদের রাখা হত। তাদের খাওয়া-পরা, লেখাপড়া, সব খরচই চালাতেন হোম কর্তৃপক্ষ। এই বালকদের ‘কুমিরছানা’ হিসাবে দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার কাছ থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে, নিজেদের গোপন তদন্তে পাওয়া এই রিপোর্ট পায় সমাজকল্যাণ দফতর। অনেক বিদেশি সংস্থাও এই হোমের জন্য চাঁদা দিত বলে খবর পায় তারা। জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, হয়ত বিদেশি সংস্থাগুলি জানত না যে এই হোমের আদৌ কোনও লাইসেন্স নেই। সেই কারণেই তারা চাঁদা দিত।

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে জেলা সমাজকল্যাণ দফতর এই হোমের বিষয়ে তদন্ত করে। সেই তদন্ত রিপোর্ট তারা পাঠায় রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরে। রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরও আলাদা করে তদন্ত করে হোমের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে কাজ চালানোর রিপোর্ট পায়। তারপরেই রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতর হাওড়ার জেলাশাসককে হোম থেকে বালকদের উদ্ধার করার জন্য নির্দেশ দেন।

হোম চালানোর নাম করে বেআইনিভাবে বালকদের আটকে রাখার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “জেলা সমাজকল্যাণ দফতরকে বলেছি, বালকদের আটকে রাখার জন্য কারা দায়ী সে বিষয়ে রিপোর্ট দিতে। তারপরেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে উদ্ধার হওয়া বালকদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন সমাজকল্যাণ আধিকারিক। যে ১০ জন বালক বাড়ি গিয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে একজন চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীও।

দেবকুমারবাবু বলেন, “ওই ছাত্র-সহ বাকিদেরও যাতে পড়াশোনার কোনও অসুবিধা না-হয় সে বিষয়টিও আমরা দেখব।”

nurul absar sakrail rescue of children
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy