সোদপুরে তৃণমূলের পার্টি অফিসের ভিতরে দলীয় কর্মী বাপ্পা বলের হত্যাকাণ্ডের দিনেই আঙুল উঠেছিল সিন্ডিকেটের দাদাগিরির দিকে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশকর্তারাও মঙ্গলবার জানান, এই খুনে ফের সামনে আসছে সিন্ডিকেট-কোন্দলই। তদন্তকারীরা মনে করছেন, বাপ্পার খুনিরা মোটেই তাঁর অপরিচিত নয়। এমনকী শাসক দলের ওই কার্যালয় এবং কাছেই অন্য একটি কার্যালয়ে তাদের অনেকের নিয়মিত যাতায়াতও ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারী জেনেছেন, শুধু ইট, বালি, পাথরের সিন্ডিকেট নয়। এলাকার গ্যাস গুদাম, বিএলআরও অফিসের সামনে জমির দালালি, রেশন দোকানে কেরোসিনের কালোবাজারি হরেক রকম বেআইনি কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে পানিহাটির বহু তৃণমূলকর্মীর নাম। বাপ্পাও যে এর বাইরে ছিলেন না, তৃণমূলের একাংশের বক্তব্যে তার সমর্থন মিলেছে। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্যে পালাবদলের পরে সিপিএম থেকে এসে তৃণমূল নেতাদের একাংশের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন বাপ্পা এবং তাঁর সঙ্গীদের অনেকেই। তাঁদের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন এলাকার আদি তৃণমূল-সমর্থকেরা।
তৃণমূলের একটি অংশ প্রকাশ্যেই বলছে, অবিলম্বে কড়া হাতে সিন্ডিকেটের রাশ ধরতে না-পারলে এলাকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। উত্তর ২৪ পরগনার যুব তৃণমূলের সম্পাদক কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এখনই সিন্ডিকেট-সমস্যার বিষয়ে সচেতন না-হলে এই ধরনের ঘটনা আবার ঘটবে। যারা খুন করেছে বলে অভিযোগ, তারা বাপ্পার পরিচিত। পরিকল্পনা করেই তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে কৌশিকবাবুর অভিযোগ। তিনি বলেন, “কারা আমাদের পার্টি অফিসে বসছেন, কারা আমাদের দলের তকমা নিজেদের গায়ে লাগাচ্ছেন সেই সমস্ত বিষয়েও বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকা দরকার।”
এর মধ্যেই বাপ্পা-হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম নিরঞ্জন রায় ও সুমিত দাস। নিরঞ্জন খড়দহের ও সুমিত পানিহাটির বাসিন্দা। পুলিশি সূত্রের খবর, এই খুনে জড়িত রয়েছে, এমন আরও কয়েক জনের নাম মিলেছে। যারা এই খুনের ছক কষেছিল, তাদের সঙ্গে জেলবন্দি এক দাগি অপরাধীর যোগসূত্র পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
এলাকার বাসিন্দা ও তৃণমূলের একাংশ বাপ্পা সম্পর্কে কী বলছেন?
সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ বাপ্পা খুন হন স্বদেশি ভবনে শাসক দল তৃণমূলের স্থানীয় দফতরে। আর ওই ভবন থেকে ঢিল-ছোড়া দূরত্বে বিএলআরও অফিস। এলাকায় কেএমডিএ প্রকল্পের কাজ চলছে। চলছে অনেক বহুতল আবাসন তৈরির বেসরকারি প্রকল্পও। তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, ওই সব প্রকল্পে মালপত্র সরবরাহ করার একচেটিয়া অধিকার কয়েকটি সিন্ডিকেটের। এবং স্বদেশি মোড়ে একমাত্র সিন্ডিকেটটির মাথায় ছিলেন বাপ্পা। সিন্ডিকেটের জোরজুলুম ছাড়াও এলাকায় দাদাগিরি করার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
বাপ্পার বিরুদ্ধে ওঠা এই সব দুষ্কর্মের অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন পানিহাটির বিধায়ক এবং জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ। তিনি এ দিন বলেন, “বাপ্পা আগে ও-সব করে থাকতে পারে। আমার তা জানা নেই। কিন্তু ইদানীং ওর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ছিল না। বাপ্পা রাজনীতি করত। পরিশ্রমী ছেলে।” জেলা তৃণমূলের সভাপতি ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “পুলিশকে ঘটনাটির নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
মঙ্গলবার শোকমিছিল করে বাপ্পার মৃতদেহ দলীয় কার্যালয়ে এনে মাল্যদান করেন নির্মলবাবু এবং এলাকার অন্য নেতারা। ওই অনুষ্ঠানে অবশ্য শ’খানেকের বেশি সমর্থক যোগ দেননি। দলীয় নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশকেই এ দিনের শোকমিছিলে দেখা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy