Advertisement
E-Paper

স্বরূপগঞ্জে ভাল বক্তা তৈরির পাঠ দিচ্ছে যুব তৃণমূল

সামনের সারিতে বসা এক ভদ্রলোকের ইশারায় থেমে গেল বক্তৃতা। ‘‘আপনারাই বলুন, গত ৩৪ বছরে বামফ্রন্টের কাছে কী পেয়েছেন? আর এই ৩৪ মাসে মা-মাটি-মানুষের সরকারের থেকে আপনারা কী পাচ্ছেন?...’’ দিব্যি গড়গড়িয়ে বলে যাচ্ছিলেন তরুণ বক্তা। কিন্তু শ্রোতাদের একজন হাত তুলতেই মাঝপথে থেমে গেলেন।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৪ ০৫:৩৭

সামনের সারিতে বসা এক ভদ্রলোকের ইশারায় থেমে গেল বক্তৃতা।

‘‘আপনারাই বলুন, গত ৩৪ বছরে বামফ্রন্টের কাছে কী পেয়েছেন? আর এই ৩৪ মাসে মা-মাটি-মানুষের সরকারের থেকে আপনারা কী পাচ্ছেন?...’’ দিব্যি গড়গড়িয়ে বলে যাচ্ছিলেন তরুণ বক্তা। কিন্তু শ্রোতাদের একজন হাত তুলতেই মাঝপথে থেমে গেলেন।

এমন আবার হয় নাকি? রাজনৈতিক বক্তৃতার স্রোত মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া যায়? দেখা গেল, বক্তা কথা থামিয়ে মন দিয়ে শুনছেন। আর সামনে বসা শ্রোতা বোঝাচ্ছেন, “চৌত্রিশ বছর আর ৩৪ মাস, কথাগুলো আরও সাবধানে, একটু সময় নিয়ে বলতে হবে। অত তাড়াহুড়ো করলে চলবে না। আর প্রথম থেকেই অত উঁচুতে কথা বলার কোনও দরকার নেই। গলা চড়বে ধাপে ধাপে।”

বক্তা তৈরির কর্মশালায় স্বাগত। স্বরূপগঞ্জের ভাগীরথী বিদ্যাপীঠের বড় হলঘর নিয়ে চলছে ‘পাবলিক স্পিকিং’-এর ক্লাস। উদ্যোক্তাদেরই একজন বললেন“সত্যিকারের ভাষণ নয়, তবে তার মহড়া চলছে।” উদ্যোক্তা স্বরূপগঞ্জ যুব তৃণমূল।

হঠাৎ এমন উদ্যোগ কেন? এক সময় নিয়মিত গ্রুপ থিয়েটার করতেন স্বরূপগঞ্জের যুব তৃণমূলের সভাপতি কল্লোল কর। তিনি বলেন, “আমাদের দল প্রতিদিন বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে ভাল বক্তা বাড়ছে না। গত পঞ্চায়েত ভোটে সেই অভাব টের পেয়েছি।” বড় সভায় বলার জন্য লোকের অভাব হয় না। কিন্তু বুথ লেভেলে কর্মী সমর্থকদের সংগঠিত করার জন্য প্রচুর বলিয়ে কইয়ে লোকের দরকার। তাই একেবারে নিচুতলায় সুবক্তার অভাব মেটাতেই এই উদ্যোগ, বলেন কল্লোলবাবু। মাসে একটি করে এমন কর্মশালা চলবে। উদ্দেশ্য, লোকসভা ভোটের আগে একঝাঁক তরুণ তুর্কি ময়দানে প্রচারের জন্য নামিয়ে দেওয়া।

জেলার নাট্যকর্মী, বাচিকশিল্পী এবং জেলায় সুবক্তা বলে পরিচিত তৃণমূল নেতারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন উঠতি নেতা-নেত্রীদের। নির্দিষ্ট রবিবারগুলিতে সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত চলছে কর্মশালা।

এ বছর জানুয়ারিতে স্বরূপগঞ্জের ভাগীরথী বিদ্যাপীঠে শুরু হয়েছিল এই কর্মশালা। স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতের ২২টি বুথ থেকে প্রায় শ’দেড়েক ছেলেমেয়েকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। ফেব্রুয়ারির শেষে, রবিবার দ্বিতীয় কর্মশালা হল স্বরূপগঞ্জের ১৭৮ নম্বর বুথে। ওই কর্মশালায় শেখানো হল কেমন করে অনেক মানুষের সামনে বক্তৃতা করতে হয়। কী ভাবে তথ্য দিয়ে তুলে ধরতে হয় দলীয় সরকারের সাফল্যের খতিয়ান। বক্তৃতাকে আকর্ষণীয় করতে কোন শব্দে একটু জোর দিয়ে গলাটা পঞ্চমে তুলতে হয় কিংবা কখন গলা নেমে আসবে একেবারে খাদে। শ্রোতাদের হাততালির জন্যই বা কতটা থামতে হবে। নাট্যকর্মীরা শেখাচ্ছেন মঞ্চ ব্যবহার থেকে উচ্চারণের খুঁটিনাটিও।

এভাবেই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের হাতেকলমে শেখালেন বিশেষজ্ঞরা। দিনের শেষে যুব তৃণমূল কর্মীদের তালিম পেয়ে কয়েকজন কর্মশালার মঞ্চেই রীতিমত পোড়-খাওয়া নেতাদের ঢঙে বক্তব্য রাখলেন। কিন্তু কেবল বাচনভঙ্গিতেই তালিম শেষ নয়। ওই কর্মশালায় জাতীয়-আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতির পাশাপাশি উঠে আসছে একশো দিনের কাজ, ইমামদের ভাতা বিতর্ক, কন্যাশ্রী প্রকল্পের মতো প্রসঙ্গ। কোন বিষয়ে কী বলতে হবে, তা-ও ঝালিয়ে নিচ্ছেন নবীন কর্মীরা।

কর্মশালায় যোগ দিয়ে উচ্ছ্বসিত স্বরূপগঞ্জের রাধারানি দেবনাথ, চন্দনা মণ্ডলরা বলছেন, “পাঁচজন লোকের সামনে কথা বলতে হবে ভাবলেই গলা শুকিয়ে হাত পা কাঁপত। এখানে আসার পর সে ভয় অনেক কেটে গিয়েছে।” এখন দলের কথা হেঁশেল কিংবা পাড়ার পুকুরঘাটেও বলা যাবে, বললেন তাঁরা। কলেজ-পড়ুয়া খোকন শেখ, রাজন শেখেরা বলেন, “এভাবে ধরে ধরে শেখালে আমরাও ভাল বক্তা হয়ে উঠতে পারব।”

ভোট এসে গিয়েছে। কে কতটা ভাল বক্তা হয়ে উঠল, তার পরীক্ষা হাতে-হাতেই হয়ে যাবে। মহড়াও তাই চলছে জোরদার।

swarupganj loksabha vote trinomul debashish bandhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy