Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সালকিয়ায় জীর্ণ বাড়ি ভেঙে আটক সাড়ে তিন ঘণ্টা

প্রায় ৭০ বছরের পুরনো পাঁচতলা বাড়ি। সেখানে ভাড়া থাকে প্রায় দশটি পরিবার। বুধবার বিকেলে সেই বাড়িরই একাংশ ভেঙে পড়ে আটকে পড়লেন পাঁচ মহিলা-সহ আট জন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁদের উদ্ধার করল দমকল। ঘটনাটি হাওড়ার সালকিয়ায় ৬৪ নম্বর সীতানাথ বোস লেনের।

এ ভাবেই বাসিন্দাদের নামিয়ে আনে দমকল।  ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

এ ভাবেই বাসিন্দাদের নামিয়ে আনে দমকল। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৪ ০১:৫০
Share: Save:

প্রায় ৭০ বছরের পুরনো পাঁচতলা বাড়ি। সেখানে ভাড়া থাকে প্রায় দশটি পরিবার। বুধবার বিকেলে সেই বাড়িরই একাংশ ভেঙে পড়ে আটকে পড়লেন পাঁচ মহিলা-সহ আট জন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁদের উদ্ধার করল দমকল। ঘটনাটি হাওড়ার সালকিয়ায় ৬৪ নম্বর সীতানাথ বোস লেনের।

ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?

দমকল সূত্রের খবর, বিকেল পাঁচটা নাগাদ হুড়মুড়িয়ে কিছু ভেঙে পড়ার বিকট শব্দে চমকে গিয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। শব্দের উৎসের দিকে কিছুটা এগোতেই তাঁরা দেখতে পান সরু গলির ভিতরে থাকা বহু পুরনো একটি পাঁচতলা বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়েছে। তার চাপে ভেঙে গিয়েছে বাড়িটির চারতলার বারান্দাও। গোটা রাস্তা জুড়ে ছড়িয়েছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ভাঙা চাঙড়ের টুকরো। উপরে তখন ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছেন এক মহিলা। নীচে অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন আশপাশের মানুষ। কারণ বাড়ির ভাঙা অংশে আটকে গিয়েছে সিঁড়ি। উপরে ওঠার আর কোনও রাস্তা নেই।

এর পরেই দমকলে খবর দেন এলাকাবাসীরা। দমকলকর্মীরা এসে মইয়ের ভরসাতেই উদ্ধারকাজ শুরু করেন। কারণ, হাইড্রোলিক ল্যাডার ঢোকানো যায়নি। দমকলের বক্তব্য, সীতানাথ বোস লেন এতটাই সরু যে সেখান দিয়ে কোনও গাড়ি ঢুকতে পারেনি। ফলে উদ্ধারকাজ শুরু করতে দেরি হয়ে যায়। দমকলের ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার সমীর চৌধুরী বলেন, “গাড়ি না ঢুকতে পারায় মইয়ের উপরে ভরসা করে উদ্ধারকাজ চালাতে হয়েছে।” আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় সিভিল ডিফেন্স, কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও।

সমীরবাবু জানান, প্রথমে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা চাঙড়ে পথ আটকে থাকায় কোনও ভাবেই এগোনো যাবে না। হাইড্রোলিক ল্যাডারও ব্যবহার করতে না পারায় পাশের বাড়ির ছাদ থেকে ভেঙে পড়া বাড়ির চারতলায় মইয়ের সেতু তৈরি করে তিন জনকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ছাদের অংশ ভেঙে পড়ায় পাঁচতলার কাউকে তখনও উদ্ধার করা যায়নি। শেষে পাঁচতলায় দেওয়ালে গর্ত করে আটক পাঁচ জনকে বার করা হয়।

উদ্ধার পেয়ে প্রাণধন ভট্টাচার্য নামে এক বাসিন্দা বলেন, “আমি নিজের ঘরে বসে ছিলাম। হঠাৎ গোটা বাড়িটা কেঁপে উঠল। ভেবেছিলাম ভূমিকম্প হয়েছে। দরজা খুলতে গিয়ে দেখি খোলা যাচ্ছে না। প্রায় তিন ঘণ্টা এ ভাবেই আটকে ছিলাম।”

পুরনো এই বাড়িটির মালিকের নাম ডি এম সিংহ। বর্তমানে তাঁর আত্মীয়েরা এই বাড়িটি ভাড়া দেন। বাড়িটিতে এখন যাঁরা থাকেন, তাঁরা সকলেই ভাড়াটে। একতলার বাসিন্দা এক ভাড়াটে রিনা সহানি বলেন, “মালিককে বহু বার বলা সত্ত্বেও বাড়ি সারানো হয়নি। বহু পুরনো ও বিপজ্জনক বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও এটিকে বিপজ্জনক বাড়ি হিসেবে ঘোষণা করেনি পুরসভাও।”

এ দিন কয়েক জন মেয়র পারিষদকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান মেয়র রথীন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “পুর-এলাকায় যত পুরনো বাড়ি রয়েছে, শীঘ্রই তার তালিকা তৈরি করা হবে। এই ঘটনা আমাদের শিক্ষা দিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

building collapse salkia rescue operation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE