প্রতারণা চক্রে জড়িত অভিযোগে তিন যুবককে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের ব্যবহার করে ‘মিটিং’য়ের কথা বলে ডাকিয়ে সোমবার হাওড়া-খড়্গপুর শাখার মৌড়িগ্রাম স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে চক্রের ‘পাণ্ডা’কে গ্রেফতার করল সাঁকরাইল থানার পুলিশ। ধৃতের নাম আখতার হোসেন মিস্ত্রি। শাগরেদরা তাকে ‘স্যার’ বলে ডাকত। সকলে গাড়ি কেনার জন্য ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণা করত বলে অভিযোগ।
একটি আর্থিক সংস্থার পক্ষ থেকে গাড়ি কেনার জন্য ঋণ দেওয়ার টোপ দিয়ে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ২৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে সম্প্রতি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আন্দুলের স্বপন বেরা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্তে নামে পুলিশ। বিভিন্ন ফোনের সূত্র ধরে দিন দুয়েক আগে গ্রেফতার করা হয় আখতারের তিন শাগরেদ অভিজিৎ দে, রাজকুমার ঘোষ এবং প্রকাশ জায়সবালকে। তারা হাওড়া শহরের বাসিন্দা।
পুলিশের কথাতেই সোমবার আখতারকে মৌড়িগ্রাম স্টেশনে ডেকে আনে শাগরেদরা। ধোপদুরস্ত প্যান্ট-শার্ট পরে ঝকঝকে চেহারার বছর ঊনচল্লিশের আখতার সেখানে আসামাত্র সাদা পোশাকের চার পুলিশ তার কলার চেপে ধরে। পুলিশকর্মীদের হুমকি দিয়ে সে বলে, “‘জানেন, আপনারা কাকে ধরেছেন?’’ পুলিশকর্মীরা পরিচয়পত্র দেখাতেই সে মিইয়ে যায়। ধরা পড়ার পরে তার ব্যাগ থেকে আরও ১২ জন সম্ভাব্য ঋণগ্রহীতার কাগজপত্র মিলেছে। জেলা পুলিশ (গ্রামীণ)-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “ইতিমধ্যে চার জনের সঙ্গে চক্রটি প্রতারণা করেছে। আরও অন্তত ১২ জন কয়েক দিনের মধ্যেই প্রতারিত হতেন।’
পুলিশ জানিয়েছে, আখতারের বাড়ি জগাছার ঊনসানিতে। আগে সে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী ছিল। ঋণ সংক্রান্ত বিভাগেই কাজ করত। কোনও কারণে তার চাকরি যায়। তার পর ওই তিন যুবককে জুটিয়ে নিয়ে সে প্রতারণা চক্র খোলে। এ বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা এবং পারদর্শিতা দেখেই তিন শাগরেদ তাকে ‘স্যার’ সম্বোধন করত বলে পুলিশের দাবি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, হাওড়া, কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনায় আখতারের প্রতারণার জাল বিস্তৃত।
তদন্তকারীরা জানান, একটি গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থার নামে আখতাররা প্রতারণার জাল বিছোয়। তাদের নিজস্ব আর্থিক সংস্থা আছে। সেই সংস্থার নাম করে প্রতারকেরা মিনি ট্রাকের পিছনে লেখা মালিকদের ফোন নম্বর দেখে ফোন করে ফের নতুন গাড়ি কেনার জন্য ঋণ দেওয়ার টোপ দিত। ঋণে আগ্রহীদের কাছ থেকে তাঁদের সই করা প্যান কার্ড, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট প্রভৃতির ফোটোকপি সংগ্রহ করত তারা। তার পরে সেই সই নকল করত। তার পরে ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে তাঁর সইবিহীন দু’টি চেক নিয়ে তাঁর কত টাকা ঋণ মঞ্জুর হয়েছে তা জানিয়ে ১০ শতাংশ টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা রাখার নির্দেশ দিত। প্রতারকদের একজন প্রতিনিধিই ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে চেক নিয়ে আসত। মোট ঋণের ১০ শতাংশ টাকা জমা পড়ার পরেই ঋণ দেওয়া হবে বলে ঋণগ্রহীতাকে জানিয়ে দেওয়া হত। ঋণহীতা ওই টাকা জমা দিয়ে নির্দিষ্ট ফোন নম্বরে সে কথা জানিয়ে দিতেন। সঙ্গে সঙ্গে চেকে জাল সই করে ঋণগ্রহীতার অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা তুলে নেওয়া হত। চার প্রতারকের কেউই ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে দেখা করত না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy