জলের জন্য টিউবওয়েলের সামনে ভিড় গ্রামবাসীদের। নিজস্ব চিত্র।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল সরবরাহ বন্ধ ১২ বছর। একটা টিউবওয়েলের জলের উপরেই কোনও রকমে জলের সমস্যা মিটছে হাওড়ার পাঁচলার দেউলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দাদের। অন্য দিকে, গরমে জলস্তর নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলের সামনে আগে গিয়ে দ্রুত জল নেওয়ার জন্য চলছে বচসা। দেউলপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রাণনাথ দে বলেন, “১২ বছর আগে জলের লাইনটি কেটে যাওয়ার পর নতুন করে আর লাইন চালু হয়নি। ফলে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের পানীয় জলের জন্য টিউবওয়েলের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। এই লাইনটি চালু করার জন্য কয়েক বার বিভাগীয় দফতরে জানিয়েও ছিলাম। কিন্তু আজও ট্যাপকলের লাইন চালু হয়নি।
সমস্যার সূত্রপাত ২০০২ সালে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পের আওতায় ওই গ্রামে একটি রাস্তা নির্মাণের সময়ে জনস্বাস্থ্য দফতরের জল সরবরাহের লাইনটি কেটে দেওয়া হয়েছিল। এর পর থেকে ট্যাপ কলের জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ছ’ হাজার জনবসতিপূর্ণ ওই গ্রামের বাসিন্দারা জল সঙ্কটে পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, জনসংখ্যার তুলনায় টিউবওয়েলের অনুপাত কম। তার প্রায় ৩০ বছর আগে পাঁচলা দেউলপুরে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগের তত্ত্বাবধানে একটি গভীর নলকূপটি বসানো হয় ও একটি উচ্চ জলাধারও নির্মাণ করা হয়। ওই জলাধারে জল তুলে দেউলপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দেউলপুর, বলরামপুর, জয়রামপুর, কুশডাঙা-সহ বিভিন্ন এলাকায় জল সরবরাহ করা হত। তখন বলরামপুর গ্রামে জলের কোনও অভাবই ছিল না। পানীয় জল ছাড়াও বাসন মাজা, কাপড় কাচা, স্নান করা সবই চলত। গ্রীষ্মে পুকুর ডোবা শুকিয়ে গেলেও কোনও সমস্যা হত না। কিন্তু ১২ বছর আগে রাস্তা নির্মাণের সময় বলরামপুর গ্রামে জলের লাইনটি কাটা পড়ে। বলরামপুর গ্রামে ট্যাপকলে জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অথচ দেউলপুর পঞ্চায়েতেরই অন্যান্য গ্রামে এই জল সরবরাহ করা হচ্ছে। বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত ঘোষ, আনন্দ সর্দার, হেমন্ত সর্দাররা বলেন, “আগে যখন ট্যাপকল ছিল, তখন আমাদের পানীয় জলের কোনও সমস্যাই ছিল না। রাস্তার ধারের ট্যাপকলগুলি থেকে সময় মতো জল পেতাম। বাড়ি বাড়ি এই জলের লাইন নেওয়ার জন্য বহু মানুষই উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তা নির্মাণের সময়ে এই লাইন কাটা হলে জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এখানে। আমাদের টিউবওয়েলের জলের উপরই নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু গ্রীষ্মের তাপে জলস্তর নীচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে জল পড়ে সরু সুতোর মতো।” ইতি মধ্যে ১২ বছরের অব্যবহারে ট্যাপকলগুলির অনেকগুলোই ভেঙে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দেউলপুর গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, “বাড়ি বাড়ি জলের লাইন নেওয়ার জন্য বেশ কয়েক বার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে লিখিত ভাবে আবেদন করেও কোনও কাজ হয়নি। ফলে রাস্তার ট্যাপকল থেকেই রোজ জল আনতে হচ্ছে।”
হাওড়া জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপ সাহা বলেন, “এটি দীর্ঘ দিন আগের ব্যাপার। তখন রাস্তা নির্মাণের সময়ে লাইনটি কাটা পড়েছিল। আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।” লিখিত ভাবে জানালে বলরামপুর গ্রামে পুনরায় জলের লাইনটি চালু করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy