Advertisement
১১ মে ২০২৪

রোগ ছড়াচ্ছে কম্বল, জেলে ফিরছে চাদর

লৌহকপাটের আড়ালে বন্দিদের আত্মহত্যার প্রবণতা বড় সমস্যা। কিন্তু তাঁদের চর্মরোগ-সহ নানান রোগব্যাধি ছোট সমস্যা নয়। তাই নিজেদের সিদ্ধান্তের উল্টো পথে হাঁটতে চলেছে রাজ্যের কারা দফতর।

সোমনাথ চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০৩:০১
Share: Save:

লৌহকপাটের আড়ালে বন্দিদের আত্মহত্যার প্রবণতা বড় সমস্যা। কিন্তু তাঁদের চর্মরোগ-সহ নানান রোগব্যাধি ছোট সমস্যা নয়। তাই নিজেদের সিদ্ধান্তের উল্টো পথে হাঁটতে চলেছে রাজ্যের কারা দফতর।

উল্টো পথ মানে বিছানায় চাদর দেওয়ার বন্দোবস্ত তুলে দিয়েও তা ফিরিয়ে আনা। বন্দিদের আত্মহত্যার ঝোঁক আটকাতে জেলে বিছানার চাদর এবং বড় গামছার ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছিল। পরে আবার ছোট গামছা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল কারা দফতর। এ বার বিছানার চাদরকেও ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে কারা প্রশাসন। কারণ, বিছানার চাদর তুলে দিয়ে বিকল্প হিসেবে যে-বাড়তি কম্বল দেওয়া হচ্ছিল, তাতে রোগভোগের আশঙ্কা বাড়ছে। সুখের চেয়ে স্বস্তি ভাল, এই আপ্তবাক্য মেনে তাই চাদরের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে। কম্বল কিছু কিছু থাকছেই। সেই সঙ্গে প্রত্যেক বন্দিকে মাসে দু’টি বিছানার চাদর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আত্মহনন রোখার মতো সদর্থক উদ্যোগের বদলে আবার সেই আশঙ্কাকে ডেকে আনা হচ্ছে কেন?

কারা দফতর সূত্রের খবর, কম্বলে শুয়ে এবং তা গায়ে দিয়ে বন্দিদের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তার মধ্যে প্রধান হল চর্মরোগের সমস্যা। প্রচণ্ড গরমে কম্বলে শোয়ার দরুন অধিকাংশ বন্দিই চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। চর্মরোগ এড়াতে নিয়মিত কম্বল ধোয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন জেল-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অত কম্বল ধুয়ে, শুকোতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা হচ্ছে জেল প্রশাসনের। সেই জন্যই এ বার কম্বলের ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে চাদরে ফিরতে চাইছে কারা দফতর। চাদরের উপযোগিতা হল, সেগুলোকে প্রতিদিনই ধুয়ে ব্যবহার করা সম্ভব। শুকোতে জায়গা ও সময় কম লাগে। কম্বলের উপরে সেটা বিছিয়ে নিলে কমে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কাও।

কারা দফতরের এক কর্তা জানান, অতীতে বন্দিদের চাদর দেওয়া হতো। কিন্তু চাদরকে দড়ির মতো ব্যবহার করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বেড়ে যাচ্ছিল বন্দিদের মধ্যে। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে, বাধ্য হয়েই চাদরের ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়। সেই থেকে বন্দিদের চারটি করে কম্বল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ভ্যাপসা গরমে চাদর ছাড়াই কম্বলে শুয়ে বন্দিদের শরীরে চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।

‘‘কম্বল নিয়মিত ধোয়া হয় না বলে তা থেকে দ্রুত বিভিন্ন রোগ সংক্রমিত হচ্ছে। তাই সব দিক ভেবে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে চাদর সংস্কৃতি,’’ বলেন ওই কারাকর্তা। ঠিক হয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন সব বন্দিকেই গরমে দু’টি কম্বল এবং দু’টি চাদর দেওয়া হবে। আর শীতে দু’টি চাদরের সঙ্গে মিলবে চারটি কম্বল। কম্বল নিয়মিত ধুতে না-পারলেও রোজ চাদর ধুয়ে নিতে অসুবিধে হবে না।

কিন্তু যে-কারণে চাদর তুলে দেওয়া হয়েছিল, তা ফিরিয়ে আনলে সেই আত্মহনন-সমস্যার কী হবে?

বন্দিদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া গামছা জড়িয়েও বিভিন্ন সময়ে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বহু জেলে। তার মোকাবিলায় গামছার বহর ছোট করে দেওয়া হয়েছে। ওই কারাকর্তা বলেন, ফের চাদর দেওয়া শুরু হলে আবার কোনও অঘটন ঘটবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে কেউ আত্মহত্যা করবে ভাবলে তাকে ঠেকানো মুশকিল। যে-কেউ লুঙ্গি, গামছা, এমনকী কম্বল জড়িয়েও আত্মহত্যা করতে পারে। তাই আত্মহননের প্রবণতা ঠেকাতে একদা চাদর বিসর্জন দেওয়া হলেও এখন চর্মরোগ-সহ নানান ব্যাধির মোকাবিলায় সেই চাদরকেই ফিরিয়ে আনার কথা ভাবা হয়েছে। চাদর পেলে বন্দিদের কষ্টের কিছুটা লাঘব হবে। সেই সঙ্গে আত্মহত্যা ঠেকাতে বাড়তি নজরদারিরও ব্যবস্থা হচ্ছে।

রাজ্যে এই মুহূর্তে সাতটি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার রয়েছে। এ ছাড়াও জেলা, মহকুমা এবং সাবজেল মিলিয়ে সাধারণ সংশোধনাগার আছে ৫৯টি। কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারগুলিতে গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার বন্দি থাকেন। সব মিলিয়ে রাজ্যে ২২ হাজারের মতো বন্দি রয়েছেন। এবং তাঁদের অধিকাংশই বিচারাধীন বন্দি। কারাকর্তারা জানাচ্ছেন, বন্দির সংখ্যা অনুযায়ী কোন জেলে কত চাদর দরকার, ইতিমধ্যেই জেলকর্তাদের কাছে তার তালিকা চাওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Disease blankets jail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE