কেন্দ্রীয় অভিন্ন প্রবেশিকার পাশাপাশি রাজ্যগুলি তাদের নিজস্ব জয়েন্ট পরীক্ষার মাধ্যমেও ডাক্তারিতে ছাত্র ভর্তি নিতে পারবে এ বছর। এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশে আজ ছাড়পত্র দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। দেশের অধিকাংশ রাজ্যের পরীক্ষার্থীরা এতে আশ্বস্ত হলেও, বাদ শুধু পশ্চিমবঙ্গ।
সুপ্রিম কোর্ট চলতি বছর থেকেই অভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রবেশিকার মাধ্যমে ডাক্তারিতে ভর্তি হওয়া বাধ্যতামূলক ঘোষণা করার পরপরই পশ্চিমবঙ্গে মেডিক্যাল জয়েন্ট বাতিল করে দেওয়া হয়। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য পরীক্ষাও হয়ে গিয়েছে। এর পরে এই অধ্যাদেশ জারির ফলে নতুন করে এ বছর মেডিক্যালে ভর্তির জন্য পরীক্ষা নেওয়ার দরজা খুলে গেল রাজ্যের সামনে। কিন্তু কবে সেই পরীক্ষা হতে পারে, সে ব্যাপারে শিক্ষা দফতর বা জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের কোনও কর্তাই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। আগামী শুক্রবার শপথ নেওয়ার পরে নতুন সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগী হলে তবেই এই অনিশ্চয়তা কাটতে পারে বলে মনে করছেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একাংশ। তাঁদের আশা, দ্বিতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী হয়ে এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্রুত এই পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করতে তৎপর হবেন। এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না শিক্ষাকর্তাদের একাংশও।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মেডিক্যাল জয়েন্ট নিতে হলে সম্পূর্ণ নতুন প্রশ্নপত্র তৈরি করতে হবে। সেটা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সাধারণ ভাবে এমবিবিএস-এ ক্লাস শুরু হয় ১ অগস্ট নাগাদ। এ বারে টালমাটাল পরিস্থিতিতে কবে ক্লাস শুরু হবে, সেটাও অনিশ্চিত। কেন্দ্রীয় অভিন্ন জয়েন্টের পরবর্তী পরীক্ষা হবে ২৪ জুলাই। রাজ্যের জয়েন্ট তার আগে হবে না পরে, দিশা দেখাতে পারছেন না কোনও কর্তা।
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান সজল দাশগুপ্ত যেমন আজ বলেন, ‘‘এখনও আমরা জয়েন্টের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উত্তরপত্র নিয়েই ব্যস্ত। খাতা দেখা, ফল প্রকাশ, কাউন্সেলিং অনেক কিছু রয়েছে। মেডিক্যাল জয়েন্ট নিয়ে কোনও দিনক্ষণ এখনই বলতে পারছি না। স্থির হলে ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেওয়া হবে।’’ স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অধ্যাদেশের ভাষা, আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখতে হবে। তার পরে এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করব। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে যে কোনও দিকে এগোতে গেলেই অনেক ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন।’’
এই জটিলতার পুরোটাই অবশ্য এ বছর ডাক্তারির আসন পূরণ নিয়ে। আগামী বছর থেকে শুধু অভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রবেশিকার মাধ্যমেই ছাত্র ভর্তি হবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে। চলতি বছরে যাতে এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক না করা হয়, কেন্দ্রের কাছে সেই আর্জি জানিয়েছিল রাজ্য। সেই আর্জিতে সাড়া দিয়েই কেন্দ্র এক বছরের জন্য অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত নেয়। রাষ্ট্রপতি এই অধ্যাদেশের আইনি ব্যাখ্যা জানতে চাওয়ায় কিছুটা অনিশ্চয়তার মেঘ তৈরি হয়েছিল। অধ্যাদেশে সই না করেই তিনি আজ চার দিনের জন্য চিন সফরে চলে গেলে বিষয়টি সপ্তাহখানেক পিছিয়ে যেত। রাষ্ট্রপতির বিমান সকাল দশটায়। তাই আজ কাকভোরেই রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছে যান অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা। রাষ্ট্রপতির সচিবালয় যে আইনি প্রশ্নগুলি তুলেছিল একে একে সেগুলির উত্তর দেওয়া হয়। তার পরেই অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। যার ফলে চলতি বছরেই শেষ বারের মতো রাজ্যগুলি নিজস্ব বোর্ডের পরীক্ষার মাধ্যমে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলিতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করতে পারবে। যদিও আগামী বছর থেকে অভিন্ন কেন্দ্রীয় পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ায় আঞ্চলিক ভাষার পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়বে কি না, রাজ্যগুলির বোর্ড ও সিবিএসই-র পাঠ্যক্রমের ফারাকের সমস্যাই বা কী ভাবে মেটানো হবে— সেই প্রশ্নগুলি রয়েই গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy