উল্লাস মোড়ের কাছে এই জমিতেই মিষ্টি হাব হওয়ার কথা ছিল। —নিজস্ব চিত্র।
তিন বার জায়গা বদলেও ‘মিষ্টি বাংলা হাবে’র জমি পেতে ব্যর্থ জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সকালে উল্লাস মোড়ের কাছে অনাময় হাসপাতালের পাশের জায়গায় ওই হাবের ১০.৬৭ একর জমি ঘেরার জন্য যন্ত্রপাতি জড়ো করা শুরু হতেই বিক্ষোভ দেখান জনা পঞ্চাশেক চাষি। জমি দিতে অনীহার কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি, তৃণমূলের পতাকা নিয়ে অবস্থানও করেন। বিকেলে গোলমালের খবর পেয়ে মিষ্টি হাব অন্যত্র সরানোর কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। আবারও জমি খুঁজতে নেমে পড়েন প্রশাসনের কর্তারা। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, আজ, শুক্রবার সকালে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন এ ব্যাপারে বৈঠক ডেকেছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই জমির শেষ প্রান্তে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে চারটি প্লটের (৮৪, ৮৫, ৮৬, ৮৭) দেড় বিঘা জমি বাণিজ্যিক ভবন গড়ার জন্য আপাতত জেলা প্রশাসনকে ছাড়পত্র দিয়েছে বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা। কারখানা গড়তে বাকি দেড় বিঘা জমি ওই ভবন তৈরি হওয়ার পরে দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে হাব তৈরির প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেল বলেই মনে করছেন বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। ওই সংগঠনের সম্পাদক প্রদীপ ভকত বলেন, “হাব তৈরির প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাওয়ায় আমাদের মন খারাপ। ওই হাব বর্ধমানের গর্ব হয়ে উঠত।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিধানসভা ভোটের আগে মাটি উৎসবে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমানে ‘ল্যাংচা তীর্থ’ গড়ার কথা বলেন। শহরের শেষ প্রান্ত কাঞ্চননগরে বাঁকা নদীর ধারে জায়গা ঠিক হয়ে যায়। সেই জায়গা দেখিয়ে সাত কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। তার মধ্যে আড়াই কোটি টাকার অনুমোদনও মেলে। কিন্তু গত ৫ জুন সীতাভোগ-মিহিদানা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের কর্তারা ওই জমি দেখে পছন্দ হয়নি বলে জানিয়ে দেন। পাশাপাশি তাঁরা জানতে পারেন, ল্যাংচা তীর্থ নিয়ে শক্তিগড়ের ল্যাংচা-ব্যবসায়ীদের তেমন উৎসাহ নেই। সে দিনই একটি বৈঠকে ঠিক হয়, অন্য জায়গায় জমি দেখে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্প গড়ে তোলা হবে। একই সঙ্গে ল্যাংচা তীর্থের নামের জায়গায় অন্য নাম ঠিক করবে জেলা প্রশাসন।
মিষ্টি ব্যবসায়ীদের ওই সংস্থার সহ-সম্পাদক প্রমোদ সিংহ বলেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে কালীঘাট গিয়েছিলাম। সেখানেই হাব নিয়ে কথা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কথামতো আমরা ফিরে এসে জেলাশাসককে বিষয়টি জানাই।’’ তারপরেই খুব দ্রুত দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে বামচাঁদাইপুর মৌজায় দুটি খাস জমি দেখা হয়। কলকাতামুখী রাস্তার ডান দিকে অনাময় হাসপাতাল ও পেট্রোল পাম্পের মাঝে সওয়া এক বিঘে জমিতে বাণিজ্যিক ভবন ও রাস্তার উল্টো দিকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের পিছনে দেড় বিঘে জমিতে কারখানা হবে বলে ঠিক হয়। সেই মতো জেলাশাসক ১৬ জুন বিভিন্ন জায়গায় চিঠিও দিয়ে জানিয়ে দেন, বামচাঁদাইপুরে ‘সীতাভোগ, মিহিদানা ও ল্যাংচা হাব’ হতে চলেছে।। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এর পরেই দেখা যায় আদিবাসীরা রাস্তার ধারে জমিটি ধীরে ধীরে দখল নিতে শুরু করেছে। ৩১ জুলাই ওই জমি দখলমুক্ত করতে গিয়ে ফিরে আসেন প্রশাসনের কর্তারা।
এরপরেই ৫ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক সভা করতে বর্ধমানে আসেন। ল্যাংচা তীর্থ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে ভেবে জেলা পরিষদ জায়গা পাওয়ার আগেই ১ কোটি ৮৯ লক্ষ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকার দরপত্র ডেকে দেন। ওই সভায় প্রশাসনের কর্তারা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, দরপত্র ডাকা হলেও শহর থেকে দূরে হওয়ায় জায়গা পছন্দ হচ্ছে না ব্যবসায়ীদের। ওই দিনই মুখ্যমন্ত্রী ল্যাংচা তীর্থের বদলে মিষ্টি বাংলা হাবের কথা ঘোষণা করেন। সেখানে বর্ধমানের তিন মিষ্টির সঙ্গে রামপুরহাটের রাজভোগ ও সিউড়ির মোরব্বা প্যাকেটজাত করে ভিন রাজ্যে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়। তবে আপাতত জমি না পাওয়া পর্যন্ত সবটাই বিশ বাঁও জলে চলে বলে আশঙ্কা মিষ্টি ব্যবসায়ীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy