টনক নড়ল বীরভূমের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মৃত্যুর পরে। অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের দৌরাত্ম্য রুখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে চলেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। ওই সব পদক্ষেপের জন্য ইতিমধ্যে মহকুমাগুলিতে নির্দেশ জারি করেছেন জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব। সেই সঙ্গে শহরের নার্সিংহোমগুলিতেও অভিযান চালানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার নবাবহাটের একটি নার্সিংহোমে গিয়ে জেলাশাসক এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কিছু বেনিয়ম দেখার পরে সেটির কর্তৃপক্ষকে শো-কজ করেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে ঠিক করা হয়েছিল, কাটোয়া বা কালনা মহকুমা থেকে ‘রেফার’ রোগীদের জন্য ‘লগ বুক’ তৈরি করা হবে। সরকারি বা বেসরকারি যে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা ওই ‘লগ বুক’ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জমা দেবেন। তাতে যেমন একটি হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন কত রোগী ‘রেফার’ হচ্ছেন, তা জানা যাবে। তেমনই অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের ‘ভুল বুঝিয়ে’ সরকারি হাসপাতালের বদলে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমবে।
বীরভূমের মেধাবী ছাত্র অরিজিৎ দাসকে অ্যাম্বুল্যান্সে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসার পরে প্রশাসন জেনেছে, স্বাস্থ্য দফতর ওই পদ্ধতি চালুই করেনি। এ নিয়ে কাটোয়া বা কালনা মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও অন্ধকারে। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলাশাসক পুরো বিষয়টি সম্পন্ন করার জন্য মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়াকে দায়িত্ব দিয়েছেন। মহকুমাশাসক (কালনা) অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের জন্য একটি রেজিস্টার্ড বই ও টোকেন তৈরি করছেন। নিচুতলার হাসপাতাল থেকে ওই ‘টোকেন’ নিয়ে উঁচুতলার হাসপাতালে জমা দেবেন অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। জেলাশাসক বলেন, “মহকুমা হাসপাতাল তো বটেই, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও এই পদ্ধতি চালু করা হবে। আমরা এর জন্য একটি সফটঅয়্যারও তৈরি করতে চলেছি। এর ফলে অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা রাস্তায় কোনও কারসাজি করলে ধরা পড়ে যাবেন।”

তৈরি হয়েছে এই স্লিপ। নিজস্ব চিত্র
বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়ার সময়ে মাঝপথে ‘ভুল বুঝিয়ে’ নার্সিংহোমে ভর্তি করানোর অভিযোগ অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের বিরুদ্ধে নতুন নয়। নার্সিংহোম মালিক ও অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের মধ্যে ‘যোগসাজস’ থাকার প্রমাণও মিলেছে বারবার। রোগী পিছু অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা মোটা টাকাও পান বলে অভিযোগ। বীরভূমের ওই ছাত্রের মৃত্যুর পরে জানা গিয়েছে, সাংসদ তহবিলের টাকায় এসি অ্যাম্বুল্যান্সটি পেয়েছিল বর্ধমানের শাঁখারিপুকুরের একটি সংস্থা। সেই সংস্থা আবার চালককে চুক্তির ভিত্তিতে সেটি ভাড়া দেয়। অথচ, নিয়ম অনুযায়ী, সাংসদ বা বিধায়ক তহবিলে কেনা প্রতিটি অ্যাম্বুল্যান্স জেলাশাসক বা অতিরিক্ত জেলাশাসকের অধীনে থাকে। বিভিন্ন সংস্থা শুধুমাত্র জনস্বার্থে ব্যবহারের সুযোগ পান। জেলাশাসক ঠিক করেছেন, গত ১০ বছরে সাংসদ বা বিধায়ক তহবিলের কেনায় অ্যাম্বুল্যান্সগুলির বর্তমান অবস্থা নিজে পরখ করবেন। কোনও সংস্থা আবার চুক্তির ভিত্তিতে অ্যাম্বুল্যান্স চালানোর জন্য ‘অনুমোদন’ দিয়েছে কি না, তা-ও দেখবেন। সেই সঙ্গে সরকারি স্তরে থাকা অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের নিয়ে বৈঠক ডাকারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
কোনও অ্যাম্বুল্যান্স চালক এর পরেও রোগীকে ভুল বুঝিয়ে নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে কী পদক্ষেপ করা হবে? জেলাশাসক বলেন, ‘‘রেজিস্টার্ড বই বা সফটঅয়্যারে রোগীর বিবরণের সঙ্গে চালকের নাম, ফোন নম্বর ও গাড়ির নম্বর থাকছে। চালকের কাছে টোকেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে না পৌঁছলে বিষয়টি ধরা যাবে। তখন ওই চালকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর জন্য প্রতিটি স্তরে স্বাস্থ্য দফতর, পরিবহণ ও প্রশাসনের তিন জনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে।”